বিদ্যুৎস্পর্শে পুনর্জাগরিত রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা

বিদ্যুৎস্পর্শে পুনর্জাগরিত রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছেন ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজ-এর গবেষক দল। তাঁদের সাম্প্রতিক গবেষণা প্রমাণ করেছে, বিদ্যুতের সূক্ষ্ম উদ্দীপনা মানবদেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রধান সৈনিক কোষ ম্যাক্রোফাজকে নতুন করে প্রশিক্ষণ দিতে পারে। এর ফলে প্রদাহ কমে, ক্ষত দ্রুত শুকোয়, আর শরীর নিজেই নিজের নিরাময় প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

ম্যাক্রোফাজ হলো শ্বেত রক্তকণিকার এক বিশেষ ধরন। এগুলো শরীর জুড়ে ঘুরে বেড়ায়। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস বা অন্য কোনো ক্ষতিকারক জীবাণু শরীরে ঢুকলে ম্যাক্রোফাজ সেটাকে ঘিরে ধরে ভেঙে ফেলে (এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ফ্যাগোসাইটোসিস)। ম্যাক্রোফাজ অন্য রোগপ্রতিরোধী কোষকে (যেমন টি -সেল) সক্রিয় করে তোলে, যাতে পুরো অনাক্রম্যতন্ত্র বহিরাগতের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। কিন্তু সমস্যা হয় যখন এরা অতি সক্রিয় হয়ে পড়ে। তখন অযাচিত প্রদাহ সৃষ্টি করে তারা অনেক সময় ক্ষত সারানোর বদলে ক্ষতিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই এদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

গবেষকরা সুস্থ দাতাদের রক্ত থেকে ম্যাক্রোফাজ সংগ্রহ করে বিশেষভাবে তৈরি এক জৈব রিয়্যাক্টরে বৈদ্যুতিক স্রোত প্রয়োগ করেন। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই সূক্ষ্ম উদ্দীপনা ম্যাক্রোফাজকে প্রদাহ-বিরোধী অবস্থায় রূপান্তরিত করে। ক্ষতস্থানে নতুন রক্তনালীর সংখ্যা বেড়ে যায় । ক্ষত সারাতে সহায়ক স্টেম সেল সেখানে জমায়েত হয়। প্রদাহ সৃষ্টিকারী সংকেত কমে আসে। ফলে কোষকলা মেরামতির প্রক্রিয়া বহুগুণ দ্রুত হয় এবং শরীরের প্রাকৃতিক নিরাময় ক্ষমতা নতুন করে শক্তি পায়।

গবেষণাপত্রের প্রথম লেখক ড. সিনেড ও’রুরক বলেন, “আমরা জানতাম রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্ষত নিরাময়ে অপরিহার্য, কিন্তু এইভাবে বিদ্যুৎ দিয়ে সরাসরি ম্যাক্রোফাজকে বদলে ফেলাটা সত্যিই অভূতপূর্ব।”

প্রফেসর আইসলিং ডান ও প্রফেসর মাইকেল মোনাহানের নেতৃত্বাধীন এই আন্তঃবিভাগীয় গবেষণা ভবিষ্যতের চিকিৎসার জন্য এক নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা যেমন নিরাপদ ও সহজলভ্য, তেমনি এর প্রয়োগযোগ্যতাও অনেক বেশি। আঘাত সারানো থেকে শুরু করে প্রদাহজনিত নানা রোগের চিকিৎসায় এটি অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

গবেষকরা এখন আরও উন্নত প্রযুক্তি তৈরি করতে চাইছেন, যাতে বিদ্যুতের এই প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী ও সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করা যায়। তাদের আশা, এটি একদিন হয়তো হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস কিংবা ডায়াবেটিসের মতো জটিল প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসাতেও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

 

এই গবেষণার মধ্যে দিয়ে চিকিৎসা-বিজ্ঞানের ইতিহাসে আরও এক নতুন অধ্যায় যোগ হল, যা ভবিষ্যতে মানবজাতিকে দ্রুত আরোগ্যের সম্পূর্ণ এক নতুন পথে নিয়ে যেতে পারে।

 

সূত্র: “Electromodulation of human monocyte-derived macrophages drives a regenerative phenotype and impedes inflammation” by Sinead A. O’Rourke, Meenakshi Suku,et.al;(2.09.2025), Cell Reports Physical Science.

DOI: 10.1016/j.xcrp.2025.102795

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − ten =