বিদ্যুৎ জোগাবে ব্যাকটেরিয়া

বিদ্যুৎ জোগাবে ব্যাকটেরিয়া

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ মে, ২০২৫

গবেষকরা আশ্চর্যজনক উপায়ে জীবনধারণের এমন এক কৌশল উন্মোচন করেছেন যা জৈবপ্রযুক্তি ও শক্তিসংরক্ষণকে নতুন রূপ দিতে পারে।
রাইস ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী ক্যারোলিন আজ- ফ্রাঙ্কলিনের তত্ত্ববধানে একটি দল আবিষ্কার করেছে যে কিভাবে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়া বিদ্যুৎ তৈরি করে শ্বাস নেয়। এরা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে অক্সিজেনের পরিবর্তে চারিদিকে ইলেকট্রনকে ঠেলে দিয়ে শ্বাস নেয়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি কিভাবে ইলেকট্রন বহিষ্কার করে তা পর্যবেক্ষণ করে, গবেষকরা এদের জীবনের প্রাচীন কিছু গুপ্ত কৌশলের ইঙ্গিত দেন। এই গবেষণাটি জীববিদ্যার সাথে তড়িৎরসায়নকে এক করে প্রযুক্তিভিত্তিক কাজের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে যা পরবর্তীতে অণুজীবগুলির এই বিশেষ ক্ষমতাকে কাজে লাগায়। প্রফেসর আজো ফ্রাঙ্কলিন বলেন, ‘ আমাদের গবেষণা শুধুমাত্র একটি দীর্ঘস্থায়ী বিজ্ঞানভিত্তিক রহস্যের সমাধান করে না, এটি প্রকৃতিতে নতুন ও সম্ভাব্য সুদূরপ্রসারী জীবনধারণের কৌশলকেও নির্দেশ করে।“
বৈদ্যুতিক শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয় যে, বেশিরভাগ আধুনিক জীব খাদ্য বিপাক ও শক্তি মুক্তির জন্য অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল ।অক্সিজেন শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ার কোনো একটি শৃঙ্খলে ব্যপক ইলেকট্রন গ্রাহক হিসেবে কাজ করে । কিন্তু ব্যক্টেরিয়া, মানুষ ও উদ্ভিদের মতো আধুনিক জীবের থেকে অনেক বেশি পুরনো , গভীর সামুদ্রিক ফাটল ও মানুষের অন্ত্রের মতো অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য অন্যান্য উপায়ে বিবর্তিত হয়েছে।
গবেষকরা দেখেছেন যে, কিছু ব্যাকটেরিয়া বাইরে ইলেকট্রন স্থানান্তরের জন্য প্রাকৃতিক যৌগ ন্যাপথোকুইনন ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিকে বহিঃ কোশীয় শ্বসন বলে, এই পদ্ধতিটি ব্যাটারির তড়িৎপ্রবাহ নিঃসরণকে অনুকরণ করে ব্যাকটেরিয়াকে অক্সিজেন ছাড়াই বেঁচে থাকার সক্ষমতা যোগায়। গবেষকরা এই অস্বাভাবিক শ্বসন পদ্ধতিটি দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন এবং জৈবপ্রযুক্তিতে এটিকে একধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো করে ব্যবহার করেছেন। বর্তমানে রাইসের গবেষক দল এর নেপথ্যে থাকা পদ্ধতিটি উদ্ঘাটন করেছেন। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি দাবি রাখে যে ,এটি পরিবেশে অনেক বেশি প্রচলিত ছিল ।রাইস ডক্টরালের ছাত্র ও গবেষণার প্রথম লেখক বিকি বাপী কুণ্ডু বলেন, “ নতুন আবিষ্কৃত এই পদ্ধতিটি শ্বসনকার্য সম্পন্ন করার সহজ ও বুদ্ধিদীপ্ত উপায়।“ ন্যপ্থোকুইননগুলি আণবিক বাহক হিসেবে কাজ করে কোষ থেকে ইলেকট্রনগুলিকে বহন করে যাতে ব্যাকটেরিয়া খাদ্যকে ভেঙ্গে দিতে পারে এবং শক্তি উৎপাদন করতে পারে।“
বায়ুবিহীন জীবন অনুকরণ সম্পর্কে রাইসের গবেষকরা তাঁদের অনুসন্ধানগুলি পরীক্ষা করার জন্য ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়াগো ইউনিভার্সিটির পালসন ল্যাবের সাথে অংশীদারিত্বে আছেন। তাঁরা উন্নত প্রযুক্তিগত মডেল ব্যবহার করে অক্সিজেনবিহীন কিন্তু পরিবাহীপৃষ্ঠ সমৃদ্ধ পরিবেশে কৃত্রিমভাবে ব্যাকটেরিয়াগুলির বৃদ্ধি ঘটান। এই কৃত্রিম পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে যে, ব্যাকটেরিয়া প্রকৃতপক্ষে বাইরে থেকে ইলেকট্রন নিঃসরণ করে নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে পারে। অন্যান্য পরীক্ষাগারের পরীক্ষা এটা নিশ্চিত করেছে যে পরিবাহী পদার্থের উপর ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, এই পৃষ্ঠের মধ্যে দিয়ে শ্বাসকার্য চালায়।
এই মৌলিক আবিষ্কারের সুদূরপ্রসারী ব্যবহারিক প্রভাব রয়েছে। জৈব প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া, যেমন পরিত্যক্ত জলের প্রক্রিয়াকরণ ও জৈব পদার্থ উৎপাদনে ইলেকট্রন অসামঞ্জস্যতার উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উন্নয়ন ঘটানো যেতে পারে। এই বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়াগুলি অসামঞ্জস্যতা ঠিক করতে সক্ষম।
আজো ফ্রাঙ্কলিন বলেন,- “ আমাদের কাজ হল পুনঃ নবীকরণ যোগ্য বিদ্যুতের মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করার ভিত্তি তৈরি করা, যেখানে ব্যাকটেরিয়া সালোকসংশ্লেষের সময় সূর্যালোকসহ উদ্ভিদের অনুরূপ কাজ করে ,”এটি জীববিদ্যার সাথে সাথে আর উন্নত ও টেকসই প্রযুক্তি নির্মাণেরও পথ দেখায়।
এই প্রযুক্তিটি অক্সিজেন বিহীন পরিবেশে বায়ো- ইলেকট্রনিক সেন্সরগুলিকে সক্ষম করতে পারে , রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে ,দূষণ পর্যবেক্ষণে এবং মহাকাশ অনুসন্ধানের নতুন হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen + 16 =