বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটলে?

বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটলে?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বার্ধক্য এমন এক জৈবিক প্রক্রিয়া যা আমরা কেউ এড়িয়ে যেতে পারি না। বয়সকালে মানুষ তার কর্ম জগত থেকে বিরতি নেয়, তার সারা জীবনের শ্রমের ফল উপভোগ করে। তবে বার্ধক্যের একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে- রোগ, আসুস্থতা গ্রাস করে জীবনকে। আমাদের শরীরের কোশে প্রতি সেকেন্ডে, কোটি কোটি জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যা জীবনে কাজের শক্তি জোগায়। আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত আন্তঃসংযুক্ত বিপাকীয় নেটওয়ার্ক গঠন করে। এই নেটওয়ার্ক কোশের বৃদ্ধি, প্রসার, মেরামতে সাহায্য করে। এর ব্যাঘাত বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে চালিত করতে পারে।
তবে কী বার্ধক্য বিপাকীয় প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটায়, নাকি বিপাকীয় প্রক্রিয়ার বিঘ্ন ঘটলে বার্ধক্য ত্বরান্বিত হয়? নাকি দুটোই?
বার্ধক্যে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হার্টের অসুখ বা স্নায়ুর রোগ সহ অনেক সাধারণ রোগ শরীরে থাবা বসায়। এই স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর সূত্রপাতের মূল কারণ হল কোশীয় এবং বিপাকীয় স্তরে হোমিওস্টেসিস বা ভারসাম্যের ব্যাঘাত। হোমিওস্ট্যাসিস ব্যাহত হলে শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ তার স্থিতিশীলতা হারায়। ফলে বিপাকীয় ব্যাধি, দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং কোশীয় স্তরের কার্যকলাপ ব্যাহত হয়। বার্ধক্য এবং অন্যান্য গুরুতর অবস্থার সূচনা ঘটে। বিপাকীয় প্রক্রিয়া ব্যহত হলে কোশীয় স্তরে ‘এজিং’-এর চিহ্ন দেখা যায় যেমন টেলোমেয়ার ছোটো হওয়া, জেনেটিক মিউটেশন গঠনের প্রবণতা। এছাড়াও কোশীয় স্তরে বিনাশ, কোশ বিভাজন বন্ধ হওয়া, অন্ত্রের জীবাণুর ভারসাম্যহীনতা এবং কোশের বিভিন্ন পুষ্টি শনাক্তকরণ এবং প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষমতা হ্রাস পায়। বয়সজনিত কারণে মানুষ স্নায়ুর রোগ অ্যালজাইমারসে আক্রান্ত হয়। এই রোগে মানুষের বিপাকীয় প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটে এবং কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই গবেষণায়, গবেষকের দল গ্লুকোজের বিপাক ব্যহত হওয়া ও নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের মধ্যে একটি নতুন সংযোগ আবিষ্কার করেছেন। গবেষকরা আইডিও-১ নামক একটি এনজাইমের উপর কাজ করেছেন যা অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রিপটোফ্যান ভাঙার প্রথম ধাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রক্রিয়া কাইনুরেনাইন নামের একটি মূল যৌগ তৈরি করে, যা অতিরিক্ত শক্তি তৈরি এবং প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়াতে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। তবে, অত্যধিক কাইনুরেনাইন ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে, বাড়াতে পারে অ্যালজাইমার্সের ঝুঁকি। দেখা গেছে আইডিও-১ তৈরির প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হলে পরীক্ষাগারে ইঁদুরে স্মৃতি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার পুনরুদ্ধার ঘটাতে পারে। মস্তিষ্ক শরীরের সবচেয়ে গ্লুকোজ-নির্ভর কলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলোকে সাহায্য করতে গ্লুকোজের সঠিক ব্যবহার না হলে বিপাকীয় প্রক্রিয়া এবং বৌদ্ধিক ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। স্নায়বিক ব্যাধি এবং বিপাকীয় প্রক্রিয়া ব্যহত হলে তার প্রভাব পড়ে ব্যক্তির জীবনে, তার পরিবারে, তার আর্থিক সংগতিতে। তবে এই গবেষণা দেখিয়েছে বিপাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র স্নায়বিক ব্যাধি অগ্রগতি ধীর করার ক্ষমতা রাখে তা নয় বরং অ্যালইয়জাইমার্স, পারকিনসন এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের অগ্রগতিতেও প্রভাব ফেলে। গবেষকরা মনে করেন মানসিক চাপ, বিপাক এবং বার্ধক্যের মধ্যে এই সংযোগ আবিষ্কার স্বাস্থ্যকর বার্ধক্যের পথ তৈরি করতে নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে। তবে কীভাবে বিপাকীয় প্রক্রিয়া মানসিক চাপ এবং কোশীয় ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে সে বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।