বিবর্তনের ফলে মানুষ যমজ সন্তানের পরিবর্তে একক সন্তানের জন্ম দেয়

বিবর্তনের ফলে মানুষ যমজ সন্তানের পরিবর্তে একক সন্তানের জন্ম দেয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫

মানুষের ক্ষেত্রে যমজ সন্তান বেশ বিরল। তবে গবেষণা জানাচ্ছে, ৬০ কোটি বছর আগে দুপেয়ে প্রাইমেটদের পক্ষে যমজ সন্তান জন্ম দেওয়াই ছিল আদর্শ। অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, বরং প্রাইমেট বিবর্তনের ইতিহাসে ৬০ কোটি বছর আগে যমজ সন্তান আদর্শ ছিল। মানুষ সহ আজ প্রায় সমস্ত প্রাইমেট সাধারণত একটা সন্তানের জন্ম দেয়। গত কয়েক বছর ধরে প্রাইমেটরা একবার গর্ভধারণে কতগুলো সন্তানের জন্ম দিতে পারে, তার বিবর্তন নিয়ে গবেষণা চলছে। স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিবর্তন, তাদের প্রজনন জীবনের ইতিহাস অধ্যয়ন করতে, গবেষকরা জীবাশ্ম ও কিছুকাল আগে জীবিত ছিল, উভয় ধরনের কঙ্কাল সংগ্রহ করেন।
প্রাণী কতগুলো সন্তান একসাথে জন্ম দিতে পারে, তার ইতিহাস জানার সর্বোত্তম উপায় হল স্তন্যপায়ী ফ্যামিলি ট্রি জুড়ে যতটা সম্ভব পরিচিত প্রজাতির একবারে জন্ম দেওয়া সন্তান সংখ্যার ম্যাপ করা। এরপর এদের বিন্যাসের সূত্র ধরতে গাণিতিক অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়। যেখানে সমগ্র প্রাণী পরিবার একসাথে জীবাশ্ম হয়ে যায়, সেখানে শুধুমাত্র কঙ্কাল থেকে বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণীর একবারে সন্তান জন্ম দেওয়ার সংখ্যা নির্ণয় করা সত্যিই কঠিন। তাই গবেষকরা যতটা সম্ভব জীবিত স্তন্যপায়ী প্রাণীর তথ্য সংগ্রহ করেছেন। হাজার খানেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রজাতি দেখে, সাধারণত এক একটা প্রজাতি কতগুলো সন্তান জন্ম দেয়, সে সম্পর্কে তথ্যের জন্য গবেষকরা AnAge: The Animal Aging and Longevity Database থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্যভাণ্ডার অনুসন্ধান করেন। তাছাড়া তারা প্রজাতির জন্মের সময় এবং প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় গড় শরীরের আকার, আর গর্ভাবস্থার সময়কাল দেখেন। অধ্যয়নের জন্য জরিপ করা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ফ্যামিলি ট্রি, ফাইলোজেনি নামে পরিচিত। ফ্যামিলি ট্রি বা গাছের ডালগুলোকে রং দিয়ে লেবেল করলে তা প্রাণীর সন্তান জন্মের সংখ্যার সঙ্গে মিলে যায়। গাঢ় রং বেশি সংখ্যক সন্তান নির্দেশ করে, হালকা রং বা কমলা রং কম সন্তানের সংখ্যা নির্দেশ করে।
একবার জন্মানোর সময় প্রজাতির সন্তানের সংখ্যা ফাইলোজেনেটিকভাবে সংরক্ষিত হয়। ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত প্রজাতির মধ্যে জন্মানো সন্তানের সংখ্যাও অনুরূপ। হরিণের এক বা দুটি সন্তানের প্রবণতা থাকে, আবার ক্যানিড এবং ফিলিডের একবার গর্ভধারণে অনেক বাচ্চা জন্মায়। প্রায় সব প্রাইমেট প্রজাতি মাত্র একটি সন্তানের জন্ম দেয়। এর ব্যতিক্রম হল, লেমুর, লরিস এবং গ্যালাগোস সহ বেশ কিছু ওয়েট নোসড প্রাইমেট। দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় সমস্ত মারমোসেট এবং টামারিন যমজ সন্তানের জন্ম দেয়। আগে বলা হত প্রাইমেটদের ফ্যামিলি ট্রি-তে একবারে এক সন্তান জন্মানো সাধারণ ঘটনা, আর যমজ জন্মানো উদ্ভূত ও স্বতন্ত্র ঘটনা। কিন্তু গবেষণা জানাচ্ছে একবারে একটি সন্তান জন্মানোই ব্যতিক্রমী, স্বতন্ত্র ঘটনা। কবে থেকে এটা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হল?
আধুনিক মানুষ সাধারণত বেশ বড়ো মাপের বড়ো মাথার একটি শিশু সন্তানের জন্ম দেয়। মানুষের মস্তিষ্ক ও শরীরের আকার আমাদের প্রযুক্তি তৈরি এবং পরিমার্জিত করার ক্ষমতার সাথে সংযুক্ত। প্যালিওনথ্রোপোলজিস্টরা দীর্ঘকাল ধরে তদন্ত করছেন, বিবর্তনীয় সময়ের সাথে শরীরের আকারের তুলনায় মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি, একে তাঁরা এনসেফালাইজেশন বলেন। প্রাইমেট বিশেষত মানুষের শৈশব শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকদের মতে যমজ থেকে এক সন্তানে রূপান্তর বিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ – এতে বড়ো মস্তিষ্কযুক্ত বড়ো মানব শিশু জন্মগ্রহণ করে। এরা শৈশবেই জটিল শিক্ষা নিতে সক্ষম। গাণিতিক মডেলিংয়ের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে, এই রূপান্তর অন্তত ৫০ কোটি বছর আগে হয়েছিল। সেখান থেকে, আমাদের মতো অনেক প্রাইমেটদের ক্রমবর্ধমান বৃহত্তর দেহ এবং বৃহৎ মস্তিষ্ক বিবর্তিত হয়েছিল। গবেষণা জানাচ্ছে, একাধিক ভ্রূণ তৈরি হলে মায়ের অনেক বেশি শক্তি ক্ষয় হয়, সন্তান ছোটো, অপূর্ণ অবস্থায় জন্মাতে পারে। আর এক সন্তানের জন্ম হলে তারা বেঁচে থাকার সুবিধা পায়।