বিবাহিতা মহিলা-বিজ্ঞানীদের পদবি-বদল

বিবাহিতা মহিলা-বিজ্ঞানীদের পদবি-বদল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ জুলাই, ২০২৫

জাপানে আইন অনুযায়ী বিবাহিত দম্পতিদের একই পারিবারিক নাম নেওয়া বাধ্যতামূলক। শত বছরের পুরনো এই বিধান আজ বৈজ্ঞানিক সমাজে পরিচয় সংক্রান্ত সমস্যা সৃষ্টি করছে। গবেষণার অধিকার নিয়ে বিরোধ, বিদেশ সফরে প্রশাসনিক জটিলতা এবং ব্যক্তিগত পরিচয়ের সংকট দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি ৭,৫৮২ জন গবেষকের ওপর পরিচালিত একটি সমীক্ষা এই সমস্যার বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। টোকিওর জিকেই ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের স্নায়ুবিজ্ঞানী মিসা শিমুতা বলেন, “নাম পরিবর্তন গবেষকদের জন্য জটিলতা ও মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে, যা পেশাগত ক্ষতিরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।” জাপানের প্রধান বিরোধী দল এ বছর সংসদে একটি বিল উত্থাপন করে, যাতে বিবাহিত দম্পতিরা চাইলে নিজেদের নাম রাখতে পারবে। জুনে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সিদ্ধান্ত জানুয়ারির শেষ দিকে নেওয়া হবে। এই আইন নারীদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। জাপানে ৯৫% বিবাহিত নারী স্বামীর পদবি গ্রহণ করেন। লিঙ্গ সমতার পক্ষে কাজ-করা প্রায় ১০০টি বিদ্যায়তনিক সংস্থার যৌথ কমিটি “জাপান ইন্টার-সোসাইটি লিয়াজঁ অ্যাসোসিয়েশন” এই সমীক্ষাটি করেছে। ফুকুওকার কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের বননীতি গবেষক নোরিকো সাতোর নেতৃত্বে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, পুরুষদের মধ্যে মাত্র ৫% পদবি পরিবর্তন করেছেন, যেখানে ৯০% নারী বাধ্য হয়েছেন। অথচ পদবি বদল হলেও ৭০% পুরুষ ও নারীরা পেশাগত কাজে পুরনো নাম ব্যবহার করেন, যা আবার দ্বৈত পরিচয়ের সমস্যার জন্ম দেয়। আর সরকারি কাজে ৭৮% বলেছে নামের অসঙ্গতি সমস্যা তৈরি করে। আইনস ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স টোকিওর চক্ষুবিজ্ঞানী কিওকো ওহনো-মাতসুই বলেন, “আমি নিজের পরিচয় হারাতে চাইনি, তাই পেশায় যৌগিক পদবি ব্যবহার করি।” কিন্তু বিদেশি বৈঠকে পাসপোর্টের নাম ও কনফারেন্স তালিকার নাম মেলে না, সেটা প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি করে। মিসা শিমুতা নিজেও আইনি পদবি বদল করেছেন, কিন্তু কাজে পুরোনো নামই ব্যবহার করেন। বারবার কাগজপত্র ঠিক করতে গিয়ে মানসিক চাপ বেড়ে যায়। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক ভূতত্ত্ববিদ কিওকো ওকিনো বিবাহের পর এক দশক নাম পরিবর্তন না করে ছিলেন, আশা ছিল আইন বদল হবে। কিন্তু ২০০৭ সালে সন্তানের জন্মের পর নাম বদল করতে বাধ্য হন। তিনি পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে একই নাম ব্যবহার করেন না, যা নানা সমস্যা তৈরি করে। “আমার মা বিজ্ঞানী ছিলেন, সারাজীবন এই অন্যায় আইনের বিরুদ্ধে লড়েছেন। আমি অবসরের পথে, কিন্তু চাই পরবর্তী প্রজন্ম অন্তত নিজের নাম রাখতে পারুক। পরিচয় যেন আইনের হাতে বন্দি না হয়,” বলেন ওকিনো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 4 =