বিভিন্ন দেশে কুষ্ঠরোগ মাথা চাড়া দিচ্ছে

বিভিন্ন দেশে কুষ্ঠরোগ মাথা চাড়া দিচ্ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ মার্চ, ২০২৪

কুষ্ঠ রোগ হওয়ার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি ও সম্প্রতি ২০০৮ সালে আবিষ্কৃত মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রোম্যাটোসিস। বহু পুরোনো এই রোগ এখনও ১২০ টারও বেশি দেশে দেখা যায়, যা বর্তমানে উত্তর আমেরিকাতেও মাথা চাড়া দিচ্ছে। কুষ্ঠ রোগ সংক্রমণের ভয়ের সাথে সামাজিক কলঙ্ক, সামাজিক বর্জন জড়িত রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে দেখতে গেলে ক্রিস্ট পূর্ব দুই সহস্রাব্দ থেকে এই রোগের অস্তিত্ব জানা গেছে। কুষ্ঠরোগে ত্বক এবং প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র প্রভাবিত হয়, শারীরিক বিকৃতি ঘটে আর আক্রান্ত ত্বকে সাড় চলে যায়, ফলে ব্যথা অনুভূত হয়না। রোগের শুরুতে ত্বকে সাদা দাগ হয় বা ত্বক লালচে হয়, যেখানে সংবেদন ক্ষমতা হারিয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়া ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে ত্বক পুরু করে তোলে, কখনও কখনও ত্বকে ছোটো ছোটো ডেলা দেখা যায়। ব্যক্তির মুখে কুষ্ঠ রোগ হলে, মাঝে মাঝে মসৃণ, আকর্ষণীয় মুখের অবয়ব হয়, যা লেপ্রা বোনিটা বা “সুন্দর কুষ্ঠরোগ” নামে পরিচিত। এরপর ভুরুর রোম উঠতে থাকে, ঘাড়ের স্নায়ু স্ফীত হতে থাকে, নাকের আকৃতি নষ্ট হয়, স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায়।
কখনও কখনও কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ দেখা দিতে ২০ বছর সময়ও লাগতে পারে, কারণ ব্যাকটেরিয়ার উন্মেষ পর্বে দীর্ঘ সময় লাগে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে ব্রাজিল, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ায় ২০১৯ সাল থেকে ১০০০০ এরও বেশি নতুন কুষ্ঠ রোগের কেস নথিভুক্ত হয়েছে আর এই একই সময়ে আরও এক ডজনেরও বেশি দেশ ১০০০ থেকে ১০০০০ নতুন কুষ্ঠ রোগের কেস রিপোর্ট করেছে।
কুষ্ঠরোগ-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া একমাত্র আরমাডিলো নামক এক ছোটো স্তন্যপায়ীদের মধ্যে দেখা যায়। যে প্রাণী মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকায়, টেক্সাস, লুইসিয়ানা, মিসৌরি প্রভৃতি স্থানে কখনও কখনও পোষ্য হিসেবে রাখা হয় বা মাংস খাওয়ার জন্য এদের চাষ করা হয়। আর্মাডিলো ধরে লালন-পালন করলে রোগের ঝুঁকি থাকতে পারে। এছাড়া দীর্ঘক্ষণ কুষ্ঠ রোগীর সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগের ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে এই রোগ অন্য ব্যক্তিতে সংক্রামিত হতে পারে। তবে স্বাভাবিক দৈনন্দিন যোগাযোগ যেমন আলিঙ্গন করা, হাত মেলানো বা কুষ্ঠরোগগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে বসলে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা কম। কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা শুরু হলে সাধারণত তাদের থেকে এই রোগ ছড়ায় না। রোগের ঝুঁকির কারণ হল প্রাণীর সংস্পর্শে আসা, বা সম্প্রতি কুষ্ঠ হয় এমন দেশে বসবাস করা।
কুষ্ঠ রোগ প্রতিরোধ করা যায়, চিকিৎসায় সুস্থও হয়। সামাজিক কলঙ্কের ভয় না পেয়ে সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়ে প্রাথমিক স্তরে রোগ নির্ণয়ের অগ্রগতি ঘটলে বিশ্বব্যাপী এই রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল করা সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য কিছু সংস্থা রোগীদের বিনা খরচে মাল্টি-ড্রাগ থেরাপি দেয়। বর্তমানে কুষ্ঠরোগ মোকাবিলার জন্য ভ্যাকসিন প্রযুক্তি ক্লিনিকাল ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। আর্মাডিলোর ওপর গবেষণায় প্রাপ্ত প্রোটিন-ভিত্তিক ভ্যাকসিন কুষ্ঠজনিত স্নায়ুর ক্ষতিকে বিলম্বিত বা হ্রাস করে ব্যাকটেরিয়াকে উপশম করবে।
কুষ্ঠ রোগের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পাচ্ছে অর্ডার অফ সেন্ট লাজারাস একাদশ শতকে কুষ্ঠ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং আরমাউয়ার হ্যানসেন রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ইথিওপিয়াতে ইমিউনোলজিক, মহামারী সংক্রান্ত এবং গবেষণা পরিচালনা করে। ভারতের বেসরকারি সংস্থা বোম্বে লেপ্রসি প্রজেক্ট একই কাজ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কুষ্ঠ রোগ নির্মূলকরণের লক্ষ্যে ২০২১ সালে ‘জিরো লেপ্রসি’ নামে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × three =