বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের পারস্পরিকতা

বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের পারস্পরিকতা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ মে, ২০২৫

বাস্তুতন্ত্র হল জৈব, অজৈব পদার্থ ও বিভিন্ন জীবসমন্বিত এমন এক প্রাকৃতিক একক যেখানে বিভিন্ন জীবসমষ্টি পরস্পরের সাথে এবং তাদের পারিপার্শ্বিক জৈব ও অজৈব উপাদানের সাথে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে জীবনধারা গড়ে তোলে। এরই একটি ভাগ হল জলজ বাস্তুতন্ত্র। এখানেও স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখা একটি অপরিহার্য বিষয়।
কিন্তু তা আর হচ্ছে কোথায়। ২০১৩ সালে দেখা গিয়েছিল প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের তারামাছ প্রায় অদৃশ্য হওয়ার পথে। সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীরা সমুদ্রের আন্তঃজোয়ার অঞ্চলের ওপর এর ধারাবাহিক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাবের আশঙ্কা করেন। কমলা-বেগুনি তারামাছ হল বাস্তুতন্ত্রের মূল ভিত্তিপ্রস্তর। এদের সংখ্যাহ্রাস বাস্তুতন্ত্র শৃঙ্খলের শক্ত বন্ধন আলগা হওয়ার ইঙ্গিত। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে, তারামাছের সংখ্যাহ্রাস অনেকদূরে প্রতিধ্বনিত হবে এবং ক্যাল্প বন সংলগ্ন সামুদ্রিক ভোঁদড়ের সংখ্যা বেড়ে যাবে। “ সি স্টার ওয়েস্টিং সিন্ড্রোম” রোগটি আলাস্কা থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় খুব দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলত কয়েক মাসের মধ্যেই স্থানীয় তারামাছের সংখ্যা কার্যত বিলুপ্ত হয়ে যায়। ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেরি উপদ্বীপের মাল্টি এজেন্সি ইন্টারটাইডাল নেটওয়ার্ক(মেরিন)-এর তত্ত্বাবধানে গবেষকদল ২০১৩ সালের শেষের দিকে কয়েক দশকের পুরানো পর্যবেক্ষিত অঞ্চলগুলির প্রায় প্রতিটি তারামাছকেই হারিয়ে যেতে দেখেন। নির্দয় শিকারিদের হাত থেকে বাঁচিয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সামুদ্রিক ঝিনুকগুলি পাথরগুলোর উপরে গালিচা সদৃশ আবরণ দিতে শুরু করে । তিন বছরের মধ্যে এই আচ্ছাদন তিন গুণ হয়ে উপরিপৃষ্ঠের ৫% থেকে ১৮% বেশি হয়ে যায়। এই অঞ্চলের সবথেকে আকর্ষণীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী ভোঁদড়দের আকস্মিক সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। সেটা গবেষকদের নজর এড়ায়নি। এরাও তারামাছের মতোই এক শিকারি প্রজাতি। মন্টেরি উপসাগর অ্যাকুয়ারিয়ামের বিজ্ঞানীরা কয়েক হাজার ঘণ্টা ধরে দক্ষিণের সামুদ্রিক ভোঁদড়গুলোকে পরীক্ষা করছিলেন এমন সময়ে যখন তারা শিকারে ব্যস্ত। ২০১৩ সালের আগে ঝিনুক ছিল ভোঁদড়দের মূলখাদ্যের মাত্র ৭% সহকারী খাদ্য। ২০১৬ সালের মধ্যেই তা লাফিয়ে হল ১৮%। বর্তমানে খাদ্য হিসেবে ঝিনুকের চাহিদা অস্বাভাবিক বেড়েছে। এর বিষময় ফল স্বরূপ বাস্তুতন্ত্র এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে। গবেষক জোশুয়া স্মিথ বলেছিলেন, ঝিনুকের সংখ্যা হ্রাসে ভোঁদড়ের মস্ত ভূমিকা আছে। এরা একেবারে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শিকার ধরে খায়, তাই এদের ক্যালোরির অধিকাংশই আসে ঝিনুক থেকে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন ২০১২ সালে এদের সংখ্যা ছিল ৩৭৩, আর ২০১৪-২০২৪ এর মধ্যে বেড়ে হয়েছিল ৫৩৫। এভাবেই বাস্তুতন্ত্রে এক প্রজাতির ক্ষয়ের মধ্যে দিয়ে অপর এক প্রজাতির উত্থান হয়, যা একেবারেই কাঙ্ক্ষিত নয়। বিশেষজ্ঞরা এ-কে বলেছেন “ভিত্তিমূলক আন্তঃনির্ভরতা”। বিজ্ঞানী স্মিথের মতে তারামাছ ও সামুদ্রিক ভোঁদড়ের মতো শিকারি প্রজাতির প্রাণীরা বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখার অপরিহার্য উপাদান। এদের কারোর বিলুপ্তি ঘটলে, বাস্তুতন্ত্রের শৃঙ্খলটা যেন আলগা হয়ে পরে, অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। তারামাছের সংখ্যা যদি বাড়েও, তবু পুরোনো ভারসাম্য ফিরে আসতে অনেক সময় লাগবে। জলবায়ুর বৈচিত্র্য হেতু এ বিষয়ে পূর্বাভাস দেওয়া মুশকিল। তারামাছের ব্যপক সংখ্যহ্রাস আর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে ২০১৪-২০১৬-র অভূতপূর্ব সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ সমসাময়িক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − four =