বিরল “কটন ক্যান্ডি” লবস্টার পেলেন মৎস্যজীবি

বিরল “কটন ক্যান্ডি” লবস্টার পেলেন মৎস্যজীবি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ আগষ্ট, ২০২৪
লবস্টার

নিউ হ্যাম্পশায়ারের উপকূলে এক বিরল প্রজাতির লবস্টার পেলেন মৎস্যজীবি। নাম “কটন ক্যান্ডি”। প্রাণীটির শরীরে উজ্জ্বল গোলাপি, বেগুনি এবং নীল রঙের আভা। জোসেফ ক্রেম নামে ২৫ বছর বয়সী এক যুবক এই লবস্টার ধরেন। নিউ হ্যাম্পশায়ারের সিকোস্ট সায়েন্স সেন্টারে তিনি এই প্রাণীটিকে দান করেন।
লবস্টার বা বড়ো আকারের চিংড়ি সাধারণত খয়েরি বা ধূসর রঙের হয়। এই রঙের কারণে সমুদ্রের তলদেশে পাথরের সঙ্গে মিলে মিশে এরা শিকারীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে। তবে কমলা, নীল অথবা দুটি রঙের সংমিশ্রণেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। সব ধরনের চিংড়ি একটি লাল রঞ্জক গ্রহণ করে, যাকে অ্যাস্টাজ্যানথিন বলে। এটি তারা উদ্ভিদ ও ছোটো ছোটো খোলসযুক্ত প্রাণী বা ক্রাস্টেসিয়ানদের থেকে পায়। খাওয়ার পরে, লাল রঞ্জকটি ত্বকের স্তরে জমা হয়। চিংড়ির বাইরের আবরণে তিনটে স্তর রয়েছে। প্রথমে থাকে ত্বক তারপর শেল বা খোলসের দুটি স্তর। ত্বকের স্তর থেকে এরপর রঞ্জকটি নীচের খোলসে প্রবেশ করে। নীচের শেলটি প্রোটিনের সাথে মিথস্ক্রিয়ার ফলে নীলচে রঙের হয়। অবশেষে, যখন রঞ্জকটি উপরের শেলে যায় তখন খোলসের একটি হলুদ আভা তৈরি হয় যা বিভিন্ন প্রোটিনের সাথে মিথস্ক্রিয়ায় ঘটে। তাই যখন আমরা একটি চিংড়িকে দেখি তখন আমরা আসলে এই স্তরগুলোর প্রতিটির মধ্য দিয়ে দেখি – হলুদ, নীল এবং লাল স্তর। আর এর ফলেই তিনটে রঙের সংমিশ্রণে চিংড়ির বাদামী বা ধূসর রঙ তৈরি হয়। চিংড়ি রান্নার সময় এই প্রোটিনগুলো ভেঙে যায়, অ্যাস্টাজ্যানথিন তার স্বতন্ত্র লাল রঙ ফিরে পায়। তাই রান্নার পরে চিংড়িতে আকর্ষণীয় লালচে রঙ দেখা যায়।
লবস্টারের এই বিচিত্র নীল রঙের কারণ হল জিনগত পরিব্যক্তি। এর ফলে তারা যে রঞ্জক পদার্থটি খাচ্ছে তার রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটছে। নীল চিংড়ির ক্ষেত্রে এমন এক পরিব্যক্তি ঘটেছে যার ফলে নীচের শেলের স্তরে বেশি প্রোটিন তৈরি হচ্ছে যা ত্বক থেকে লাল রঞ্জককে শেলের স্তরে টেনে নিয়ে আসছে। এই মিউটেশন এতটাই বিরল যে প্রায় ২০ লক্ষ চিংড়ির মধ্যে ১ টিতে দেখা যেতে পারে।
“কটন ক্যান্ডি” নামের এই লবস্টার আরও বিরল — প্রায় ১০ কোটিতে ১টি। এই রঙের সঠিক জেনেটিক কারণ আজও অজানা। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা যে এদের স্বাভাবিক পিগমেন্টেশন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। জিনগত কারণ ছাড়াও খাবারের কারণেও চিংড়িদের এই রঙের ভিন্নতা।