বিলুপ্তির পথে পেঙ্গুইন

বিলুপ্তির পথে পেঙ্গুইন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩১ মার্চ, ২০২৫

জলবায়ু পরিবর্তন দীর্ঘদিন ধরে চরম পরিবেশে বসবাসকারী প্রাণীদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে। অ্যান্টার্কটিকার সম্রাট পেঙ্গুইনও এখন এই পরিস্থিতির শিকার। উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশনের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী ও তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীরা প্রমাণ পেয়েছেন এই পেঙ্গুইনরা আগের চেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
গবেষণা অনুযায়ী সম্রাট পেঙ্গুইনকে আর প্রায় বিপদগ্রস্ত বলার পরিবর্তে, ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপন্ন প্রজাতি হিসাবে গন্য করার সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন আইইউসিএন মানদণ্ড অনুসারে এই পরিবর্তন থেকে বোঝা যায় সংরক্ষণ কৌশলগুলি পুনর্বিবেচন করার সময় এসে গেছে। পেঙ্গুইনরা স্থিতিশীল বরফ ও নির্দিষ্ট পরিবেশের ওপর খুব নির্ভরশীল থাকায় গবেষকরা তাদের জীবনযাত্রা অনুযায়ী গবেষনা তৈরি করেছেন।কিন্তু বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে পরিবেশ অস্থির হয়ে যাওয়ায় পেঙ্গুইনদের জন্য বিপদ তৈরি করছে।পেঙ্গুইনরা বাচ্চাদের প্রজনন ও লালন-পালনের জন্য সমুদ্রের বরফের ওপর নির্ভর করে, কিন্তু এই বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। গবেষকরা মনে করছেন ক্রমাগতহারে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে শতাব্দীর শেষে ৯০শতাংশ এর বেশি পেঙ্গুইনের দল হারিয়ে যেতে পারে। কিছু বিজ্ঞানীর মতে, এই পরিবর্তন আমাদের জীবদ্দশাতেই ঘটতে পারে।সম্প্রতি একটি গবেষণায় ভবিষ্যতের পরিবেশগত ঝুঁকি বোঝার জন্য নতুন উপায়ের সন্ধান দেওয়া হয়েছে। বায়োলজিকাল কনজারভেশন পত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষণার শিরোনাম হল “অনিশ্চয়তার সাথে বাঁচা”।
গবেষকরা মাল্টি-মডেল লার্জ এনসেম্বল কাঠামো নামের একটি উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষণা করেছেন। এই পদ্ধতিতে নানা জলবায়ুর নকশা একসাথে বিশ্লেষণ করা হয়, যাতে ভবিষ্যতের পৃথিবীর পরিবেশ সম্পর্কে ভালোভাবে বোঝা যায়।এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে প্রাণীদের সংখ্যা কীভাবে পরিবর্তন হতে পারে বোঝার জন্য উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। তারা প্রকৃতির স্বাভাবিক পরিবর্তন এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক নকশা কাজে লাগিয়ে ভুলের সম্ভাবনা কমানো র চেষ্টা করেছেন। প্রধান গবেষক স্তেফানি জেনুভ্রিয়ে বলেছেন, প্রাণীদের বিলুপ্তি রোধ ও সংরক্ষণের জন্য আরও ভালো ও নির্ভরযোগ্য গবেষণা পদ্ধতি দরকার।এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা পরিবেশগত পরিবর্তন সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা পেতে উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। সাধারণত, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এক ধরনের অনুমান করা হয়, কিন্তু এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন সম্ভাবনা বিবেচনা করা হয়েছে যাতে প্রাণীদের বিলুপ্তির ঝুঁকি ভালোভাবে বোঝা যায়।গবেষকরা পেঙ্গুইন নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তারা ৫০টি পেঙ্গুইন কলোনির উপগ্রহ চিত্র দেখেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে ছানা ও বড় পেঙ্গুইনদের পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং ১০ বছরের বেশি সময় ধরে একেকটি পেঙ্গুইনের আচরণ লক্ষ্য করেছেন। এছাড়া, পেঙ্গুইন দলগুলো কীভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়, তা বোঝার জন্য জিনগত ও জনসংখ্যার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।গবেষক জেনুভ্রিয়ে বলেন, ভবিষ্যতের পরিবেশ সম্পর্কে অনুমান করা কঠিন কারণ এতে অনেক অনিশ্চয়তা থাকে। কিন্তু এসব অনিশ্চয়তা হিসাব করলে প্রাণীদের বিলুপ্তির ঝুঁকি আরও ভালোভাবে বোঝা যায়।
এই গবেষণায় ক্ষেত্র গবেষণা, উপগ্রহ প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ধরনের পূর্বাভাস বিশেষ করে দূরবর্তী বা কঠিন পরিবেশে বসবাসকারী প্রাণীদের রক্ষায় কার্যকর নীতি তৈরি করতে সাহায্য করে।অধ্যাপক ফিল ট্রাথান বলেন, এই গবেষণা শুধু পেঙ্গুইন নয়, পুরো পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ব্যাখ্যা করেন পেঙ্গুইন অ্যান্টার্কটিকার বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করে। তাই সঠিকভাবে ভবিষ্যৎ ঝুঁকি বুঝতে হলে উন্নত গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করা দরকার। এতে শুধু পেঙ্গুইন নয়, অন্যান্য প্রাণীদেরও রক্ষা করা সহজ হবে।আইইউসিএন হলো একটি সংস্থা, যা বিভিন্ন প্রাণী রক্ষার পরিকল্পনা করে। তারা লাল তালিকা নামে বিপদগ্রস্ত প্রাণীদের একটি তালিকা তৈরি করে। এই তালিকা দেখে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা প্রাণী রক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।
এই আলোচনা হয় অ্যান্টার্কটিক চুক্তি সভা এবং আন্টার্কটিক সামুদ্রিক জীব সংরক্ষণ চুক্তি -এর মতো বৈঠকে। এখানে বিজ্ঞানীরা ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা মিলে ঠিক করে, কীভাবে অ্যান্টার্কটিকার প্রাণীদের সুরক্ষা দেওয়া যাবে।
নতুন আইইউসিএম লাল তালিকা গবেষণা থেকে দেখা যায় পেঙ্গুইনকে আরও ভালোভাবে রক্ষা করা দরকার এবং এটি আন্টার্কটিক চুক্তির মাধ্যমে সম্ভব।
এছাড়া, গবেষণা থেকে দেখা গেছে রস সাগর ও ওয়েডেল সাগর-এর মতো এলাকায় পেঙ্গুইনদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হতে পারে।
এখন এই তথ্যের ভিত্তিতে নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি তারা এটিকে গুরুত্ব দেয়, তাহলে শুধু পেঙ্গুইন নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপদে থাকা অন্যান্য প্রাণীদেরও রক্ষা করা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − sixteen =