বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা হ্রাস ও তার প্রভাব

বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা হ্রাস ও তার প্রভাব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ আগষ্ট, ২০২৪
বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা

শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি – পৃথিবীতে জনসংখ্যা বেশ কমছে। বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৮০০ কোটি। দশ বছর আগেও ভবিষ্যবাণী করা হয়েছিল, পৃথিবীর জনসংখ্যা ১২৩০ কোটিতে পৌঁছোবে, তারপর ক্রমশ কমবে। বর্তমানে বলা হচ্ছে, ২০৬০ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০০০ কোটিতে পৌঁছে যাওয়ার পর জনসংখ্যা কমতে থাকবে। এখনই জাপান, ইউরোপ, আমেরিকার মতো ধনী, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে উন্নত দেশে জনসংখ্যা কমা শুরু হয়ে গেছে। জাপানে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ জন মারা যাচ্ছেন। ইউরোপ, আমেরিকা, পূর্ব এশিয়াতে মানুষের সন্তান ধারণ ক্ষমতা কমছে। কিছু মাঝারি ও কম আয়ের দেশেও জনসংখ্যা কমছে। বিগত ৫০ বছর পরিবেশবিদরা মন্বন্তরের কথা বলছেন, আর জনসংখ্যা কমানোর জন্য সওয়াল করছেন। কিন্তু এখন উন্নত দেশে কোনো কারণ ছাড়াই জনসংখ্যা কমছে আর নানাভাবে চেষ্টা করেও জন্মহার বাড়ানো যাচ্ছেনা।
জনসংখ্যা কমে গেলে কী হতে পারে? বিগত ষাট বছরে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, উত্তর এশিয়ায় জনসংখ্যা কমছে আবার মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির জন্য আশি বছরের ওপরের মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আগামী ২৫ বছরের মধ্যে আশি বছরের মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। কিছুদিন আগেও বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, চিনের জনসংখ্যাও কমছে, আর এই হ্রাস অত্যন্ত দ্রুত হবে বলে জানানো হচ্ছে। এই শতাব্দীর শেষে চিনের জনসংখ্যা ১৪০ কোটির মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ কমে যাবে। এর কারণ হল ২০১৬ অবধি নেওয়া ‘একটিমাত্র সন্তান’ পলিসি। বিশ্বের ১১ তম জনবহুল দেশ জাপানের জনসংখ্যা এই শতাব্দীর শেষে অর্ধেক হয়ে যাবে। গ্রাম ও কৃষিসমাজ থেকে শহুরে শিল্প, চাকরি ভিত্তিক জীবনে মানুষ যত প্রবেশ করতে থাকল, তাদের জীবনযাত্রা পরিবর্তনের সাথে সন্তান উৎপাদনও কমতে থাকল। শিক্ষা, চাকরি মেয়েদের স্বাধীনতা, নিজের জীবনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিল। তারা দেরিতে সন্তান ধারণ করছে আর গড়ে কম সন্তান ধারণ করছে। জনসংখ্যার দিকে মনোনিবেশ করার কারণ হল ২০২০ সালে যখন কোভিড মহামারী আঘাত হানে, তখন বেশিরভাগ দেশে মৃত্যুর হার বেড়েছিল। এতে জনসংখ্যা হ্রাসের সূত্র আরও বেড়েছে। জনসংখ্যা হ্রাস অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। কম কর্মী পাওয়া যাবে, বিশ্বব্যাপী দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা কমবে। ধনী দেশের পাশাপাশি ব্রাজিলের মতো একটা মধ্যম আয়ের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এখন সবচেয়ে মন্থর। ২১০০ সাল নাগাদ, পৃথিবীতে মাত্র ছয়টি দেশ থাকবে – সামোয়া, সোমালিয়া, টোঙ্গা, নাইজার, চাদ এবং তাজিকিস্তান যেখানে জন্মহার মৃত্যুহারের থেকে বেশি হবে। বাকি ৯৭% দেশের প্রজনন হার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে থাকবে বলে অনুমান করা হয়েছে।
কম মানুষ – অর্থাৎ প্রকৃতি সহজে পুনরুদ্ধার হবে? না, কারণ ৫৫ বছরের পরে মানুষের মাথাপিছু শক্তি ব্যবহার কমে, কিন্তু ৭০ বছর বয়স থেকে তা আবার বেড়ে যায়, কারণ বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি সময় বাড়িতেই কাটান, আর জনসংখ্যা হ্রাস পেলে বিশ্বজুড়ে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়বে। তারপরে সম্পদ ব্যবহারে বিশাল বৈষম্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়ায় যারা থাকেন তাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট চিনের বসবাসকারীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ধনী দেশের মানুষ বেশি ভোক্তা, তাই বেশি ধনী, স্বাস্থ্যবান দেশ কিন্তু যাদের কম সন্তান তারা বিশ্ব জনসংখ্যার বেশি নির্গমনকারী হয়ে উঠবে। যতক্ষণ না আমরা কার্বন নির্গমন কম করি আর উন্নত দেশগুলো তাদের ব্যবহারের ধরণ পরিবর্তন করে ততক্ষণ জলবায়ু পুনরুদ্ধার হওয়া নিশ্চিত নয়।