
আমাদের ছায়াপথে কতগুলি তারা আছে? সাহারা মরুভূমিতে কতগুলি বালির দানা আছে? পৃথিবীতে কতগুলিই বা পিঁপড়ে আছে? এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বেশ কঠিন মনে হলেও, বর্তমানে গবেষণা পদ্ধতি অনেক উন্নত হচ্ছে। তারই সাথে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং এর মতন অগ্রসর প্রযুক্তি। গবেষকরা পিঁপড়ের প্রজাতি এবং তাদের আবাসস্থলের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। ভার্জবুর্গের জীববিজ্ঞানীরা পিঁপড়ের ওপর কাজ করছেন। বিশ্বে প্রায় ২২,০০০ পিঁপড়ের প্রজাতি আছে। পিঁপড়েদের বেঁচে থাকার শৈলী, তাদের সামাজিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করে। কিছু সদস্য প্রজনন করে, আর অন্যরা বংশধরদের যত্ন নেয়, অসুস্থদের চিকিৎসা করে এবং খাবার খোঁজার কাজ করে। পিঁপড়েদের কোনো নেতা নেই। তারা সম্মিলিতভাবে কাজগুলি করে। এমনকি পিঁপড়ের কিছু কিছু গোষ্ঠী, মানুষের চেয়েও ভালো কাজ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এরা গ্রীষ্মপ্রধান এবং উপ-গ্রীষ্মপ্রধান পরিবেশ পছন্দ করে। পিঁপড়েরা বিভিন্ন জায়গায় বাসা বাঁধে এবং বিভিন্ন অবস্থায় বিচরণ করে। এ বিষয়ে গবেষকদের আশা, পিঁপড়ের নিয়ে কাজ আরও বৃদ্ধি পাবে কারণ তাপমাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে। পিঁপড়ে পরিবেশ থেকে পুষ্টি পুনর্ব্যবহার করে এবং কখনও কখনও স্থানীয় জীববৈচিত্র্য বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু কিছু স্থানে আগ্রাসী পিঁপড়ে স্থানীয় প্রজাতির ক্ষতিও করে। এই পিঁপড়েগুলি মাটি নিয়ে আসে, বীজ সরিয়ে দিয়ে পরিবেশ পরিবর্তন করে। বছরে প্রতি হেক্টরে ১৩ টন মাটি সরাতে পারে এই আগ্রাসী পিঁপড়েগুলি। অন্যদিকে সুফলের মধ্যে রয়েছে বীজের প্রতি ভালোবাসা। এভাবে কিছু উদ্ভিদকে তারা বীজ বহন মারফত চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পিঁপড়ের সংখ্যা জানতে পারলে সেটা পরিবেশ সংরক্ষণেই সাহায্য করবে। পিঁপড়েরা, পচনশীল উপকরণ ভেঙে মাটির উর্বরতা বাড়ায়। বনজ পরিবেশ এই জৈব পদার্থের ক্রমাগত মিশ্রণের সুবিধা পায়, এবং এক্ষেত্রে মূল অবদান পিঁপড়েদেরই। তারা মাটিতে জল প্রবাহে সাহায্য করে এবং খাদ্য শৃঙ্খলে ভূমিকা পালন করে । নোটেন ও শুলথেইসের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা ৪৮৯টি ছোট ছোট গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে পিঁপড়ে সংক্রান্ত একটি বৃহৎ তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেছেন। এই পদ্ধতি থেকে পিঁপড়ে কোথায় বেড়ে ওঠে, কোন এলাকায় কেমন সংখ্যায় রয়েছে, সে সম্পর্কে একটি গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করা যায়। সংখ্যাগুলি বিশ্লেষণ করে তাঁরা জানান, সারা বিশ্বে পিঁপড়ের সংখ্যা ২০ পর ১৫ টি ০ যোগ করলে যত হয় তত হতে পারে। এদের সম্মিলিত ভরও আশ্চর্যজনক ! শুলথেইস জানান “পিঁপড়েদের মোট সংখ্যা বন্য পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সম্মিলিত জৈবভরকে অতিক্রম করে এবং মানবজাতির জৈবভরের প্রায় ২০ শতাংশের কাছাকাছি”। পিঁপড়ে পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তারা স্থান পরিবর্তন করে। কিভাবে করে? তা দেখতে বিজ্ঞানীরা আগ্রহী। এই গবেষণা, পিঁপড়ের সংখ্যা পর্যালোচনার প্রথম বড় প্রচেষ্টা। যদিও পিঁপড়ে, বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে। এদের আবাসস্থল পরিবর্তন এবং সেই সম্পর্কিত জলবায়ু পরিবর্তন, কিছু প্রজাতিকে বিপদে ফেলতে পারে। কোথাও কোথাও পিঁপড়ে গোষ্ঠী যেন পঙ্গপালের মতো ! সাধারণত সমস্যা হয় যখন আগ্রাসী পিঁপড়েগুলি গোটা জীব বৈচিত্র্যে আমুল পরিবর্তন আনতে পারে। বিশ্ব জোড়া ভিন্ন প্রজাতি জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেয় কিনা, তা দেখতে আগ্রহী গবেষকরা। ভবিষ্যতে পিঁপড়ের উপর তথ্য সংশোধনও গুরুত্বপূর্ণ। পিঁপড়েগুলি নতুন জায়গা বাছে কিনা বা পুরনো জায়গা ছেড়ে যায় কিনা – এ সবই দেখা জরুরি। পিঁপড়ে আমাদের প্রাকৃতিক বিশ্বের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেতে পারে। ভবিষ্যৎ রক্ষায় এদের বিরাট ভূমিকা এড়িয়ে যাওয়া মুর্খামি হবে।