বিশ্বের প্রথম আংশিক হার্ট প্রতিস্থাপন

বিশ্বের প্রথম আংশিক হার্ট প্রতিস্থাপন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

ওয়েন মনরো নামে শিশুর ট্রাঙ্কাস আর্টেরিওসাস ছিল, যা গুরুতর হার্টের এক ত্রুটি, এই ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ড থেকে বেরিয়ে আসা একটি নালী বিকাশের সময় পৃথক হয়না, এতে দুটি প্রধান রক্তনালী এমনভাবে একত্রিত হয়ে থাকে যে অক্সিজেনযুক্ত ও কম অক্সিজেনযুক্ত রক্ত মিশে যায়, এর ফলে শিশু অক্সিজেনের অভাবে ভোগে। শিশুটির এই অবস্থায় তার বাবা -মা ডাক্তারকে শল্যচিকিৎসা করতে দিতে রাজি হন। ২০২২ সালে শল্যচিকিৎসকরা ১৮ দিন বয়সী ওয়েন মনরোর হার্টে দাতা শিশুর হার্টের ভালভ এবং রক্ত সংবহননালী জুড়েছিলেন। নেটিভ হার্ট টিস্যু উদ্ধার করার এবং ত্রুটিপূর্ণ অংশগুলি প্রতিস্থাপনের জন্য শুধুমাত্র জীবন্ত দাতা টিস্যু ব্যবহার করার এই কৌশল আগে কখনও মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়নি। ডিউক ইউনিভার্সিটির প্রধান সার্জন জোসেফ তুরেক এর আগে শুধুমাত্র পাঁচটি শূকরের মধ্যে এই পদ্ধতিটি পরীক্ষা করেছিলেন।
গবেষকরা JAMA- পত্রিকাতে জানিয়েছেন, এক বছর সময় যাবত, শিশুটির হৃৎপিণ্ড বৃদ্ধি পেয়ে একটি স্ট্রবেরির আকার থেকে একটি এপ্রিকটের আকার নিয়েছে এবং এর সাথে দাতার শরীর থেকে নেওয়া কলা, কোশও বেড়েছে। ওয়েনের হার্টের কার্যকারিতা যথেষ্ট ভালো, এক বছরের শিশুর বিকাশের মাইলফলকগুলি সে ছুঁতে পেরেছে, যেমন খেলা, হামাগুড়ি দেওয়া, দাঁড়ানো, এগুলো সে করতে সক্ষম।
প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২৫০ শিশু এভাবে জন্মায়। ট্রাঙ্কাস আর্টেরিওসাস আক্রান্ত শিশুদের সম্পূর্ণ হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়, অথবা মৃতদেহের হৃদপিণ্ড থেকে হিমায়িত টিস্যু নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কিছুদিন অন্তর অন্তর শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হয়। প্রতিস্থাপিত দাতার হৃৎপিণ্ড শিশুর সাথে বেড়ে উঠলেও তা প্রায়শই অকার্যকর হয়ে পড়ে, কারণ শরীর হৃদপিণ্ডের পেশি প্রত্যাখ্যান করে, নালি বা ভালভের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয় না। ওয়েনের যেহেতু রক্ত নালি ও ভালভ প্রতিস্থাপিত হয়েছে তাই এই সমস্যা হবে না বলে ডাক্তাররা মনে করছেন। প্রতিস্থাপন করা হার্টকে যাতে শরীর প্রত্যাখ্যান না করে, তাই প্রাপকদের এমন ওষুধ দেওয়া হয় যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দমন করে, তাই শরীর সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করতে পারেনা। হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করা শিশুদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যে মারা যায়। কিন্তু ওয়েনকে এই ওষুধ কম মাত্রায় দেওয়া হয়, যেহেতু তার আংশিক প্রতিস্থাপন হয়েছে। ডাক্তাররা আশা করছেন, সে সুস্থ শরীরে পূর্ণ সময় জীবন কাটাতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 4 =