বিশ্বের প্রাচীনতম নারকীয় পিঁপড়ে!

বিশ্বের প্রাচীনতম নারকীয় পিঁপড়ে!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

বেশ কয়েক মাস আগে ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান সংগ্রহশালার বিশাল জীবাশ্ম সংগ্রহটিকে বর্গে বর্গে সাজাচ্ছিলেন পতঙ্গবিদ অ্যান্ডারসন লেপেকো। তারই মধ্যে এক কোণে লুকিয়ে পড়ে-থাকা একটি জীবাশ্মর ওপর তাঁর নজর পড়ে । দেখে তিনি চমৎকৃত হয়ে গেলেন যে সেটি হল চুণাপাথরের মধ্যে আটকে-পড়া ১১৩ মিলিয়ন বছরের পুরোনো একটি পিঁপড়ের জীবাশ্ম! অর্থাৎ এটি বিশ্বের প্রাচীনতম পিঁপড়ে! এ এক অবাক-করা আবিষ্কার।

কারেন্ট বায়লজি পত্রিকায় এর বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। পিঁপড়েদের একটি নতুন প্রজাতি হিসেবে এটি চিহ্ণিত হয়েছে। নাম ভালকানিড্রিস ক্রেটেনসিস। ক্রেটো নামক আগ্নেয়গিরি থেকে জীবাশ্মটি পাওয়া গিয়েছিল বলে এই নাম। বিলুপ্ত নারকীয় পিঁপড়ে (হেল অ্যান্ট) গোষ্ঠীর সদস্য এটি। আধুনিক পিঁপড়েদের অতিপ্রাচীন আত্মীয় এরা। এদের চোয়ালগুলো কাস্তের মতো বাঁকানো, মাথায় আছে শিং। এর আগে অব্দি নারকীয় পিঁপড়েদের বেশির ভাগ জীবাশ্মই পাওয়া গিয়েছিল উত্তর গোলার্ধে। তাই দক্ষিণ গোলার্ধে এর নমুনা আবিষ্কার একটা বড়ো ঘটনা। মাইক্রোকম্পিউটার টমোগ্রাফি প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা এর একটি ত্রি-মাত্রিক চিত্র নির্মাণ করে নেন, যার ফলে অন্যান্য নারকীয় পিঁপড়েদের সঙ্গে এর তুলনা করা সম্ভব হয়।
এই আবিষ্কার থেকে মনে হচ্ছে, দক্ষিণ আমেরিকা হয়তো ছিল এইসব সুপ্রাচীন পতঙ্গদের বিবর্তনী উপকেন্দ্র। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই নারকীয় পিঁপড়েরাই প্রথম প্রধান পিপীলিকা-গোষ্ঠী যা দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং বৈচিত্র্য অর্জন করে। নিউ জার্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনী জীববিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ফিল বার্ডেন একদা বর্মী (মায়ানমারের) তৈলস্ফটিকের মধ্যে নারকীয় পিঁপড়ে নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তিনি উচ্ছ্বাসভরে বলেছেন, পিঁপড়েদের উৎপত্তি আর বিবর্তনের যে-ইতিহাস এতদিন জেনে এসেছি তা হয়তো এবার নতুন করে লিখতে হবে।

পিঁপড়েদের আবির্ভাব জুরাসিক পর্বের শেষদিক আর ক্রিটেশিয়াস পর্বের গোড়ার দিকে, ১৬০ থেকে ১২০ মিলিয়ন বছর আগে। ডাইনোসররা যখন দুনিয়া চষে বেড়াত সেই সময় এই পতঙ্গরা বিস্তার ও বৈচিত্র্য লাভ করতে শুরু করে। নতুন নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়। আজকের পিঁপড়েদের আদি প্রজন্মেরও উদ্ভব ওই সময়েই। কিন্তু এদের জীবাশ্ম সংখ্যা এত কম যে প্রত্নতত্ত্ববিদরা কিছুতেই কতকগুলো শূন্যস্থান ভরাট করতে পারছিলেন না। এই নয়া জীবাশ্মটি হয়তো সেই ফাঁক কিছুটা পূরণ করতে পারবে। উত্তরপূর্ব ব্রজিলের ক্রেটো আগ্নেয়গিরিতে প্রাপ্ত এই নমুনাটি ফ্রান্স, মায়ানমার (বার্মা) আর কানাডায় তৈলস্ফটিকের (অ্যাম্বার) মধ্যে প্রাপ্ত নারকীয় পিঁপড়ের জীবাশ্মগুলোর তুলনায় ১৩ মিলিয়ন বছর পুরোনো। এটিকে আজকের পিঁপড়েদের জ্ঞাতি বলা যেতে পারে। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিদ ও বিবর্তনী জীববিজ্ঞানী কোরি মোরো বলেছেন, “একটা জীবাশ্মই একটি আস্ত জীবগোষ্ঠীর ইতিহাস সম্বন্ধে আমাদের ধ্যানধারণা বদলে দিতে পারে। এ এক বিরাট ঘটনা”। .” তবে একটা রহস্য কিন্তু রয়েই গেছে – এই বিশেষ ধরনের কাস্তে-চোয়াল ওয়ালা নারকীয় পিঁপড়েগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেল, অথচ অন্য পিঁপড়েগুলো কেন টিকে রইল?

সূত্র : doi: 10.1126/science.zla3i9k

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 4 =