বিশ্ব উষ্ণায়ণ রুখতে কার্বনডাই অক্সাইড খেকো ব্যাকটেরিয়া

বিশ্ব উষ্ণায়ণ রুখতে কার্বনডাই অক্সাইড খেকো ব্যাকটেরিয়া

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

গত বছর বিশ্বব্যাপী গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন সর্বকালের রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, তার ভিত্তিতে অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, যে নতুন এমন প্রযুক্তি প্রয়োজন যা কার্বন ক্যাপচার বা আটকে রাখতে এবং ভূগর্ভে সংরক্ষণ করতে পারে; যা বিশ্ব বাঁচানোর জন্য জলবায়ুর পরিবর্তন রোধের লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করবে। অনেকে এটা বিশ্বাস করেন যে প্রকৃতি থেকেই একটা সমাধান আসতে পারে। এক্ষেত্রে তারা ভেবেছেন জীবাণু, যা ক্ষুদ্র জীব আমাদের চারপাশে পাওয়া যায় কিন্তু খালি চোখে অদৃশ্য তা কার্বন আবদ্ধ করতে এবং জলবায়ু প্রভাবিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি সিসিলির কাছে একটি আগ্নেয় দ্বীপের উপকূলে একটা জীবাণু, এক ধরণের সায়ানোব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেছেন যা অত্যন্ত দ্রুতহারে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) ব্যবহার করছে। ভলকানো দ্বীপ জলের নীচে হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট দ্বারা বেষ্টিত, যা CO2 এর সমৃদ্ধ উৎস। এই ভেন্টগুলি অগভীর জলে অবস্থিত, অর্থাৎ তারা সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসে। এই পরিবেশ জীবাণুর বিবর্তনের জন্য উপযুক্ত যারা খাদ্য উত্স হিসাবে CO2 ব্যবহার করে। ওয়েইল কর্নেল মেডিকেল কলেজ এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ডেটা বিজ্ঞানী এবং টু ফ্রন্টিয়ার প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ব্র্যাডেন টিয়ার্নি জানিয়েছেন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তারা দেখেছিলেন এই দ্বীপে পাওয়া জীবাণুগুলো সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে CO2 গ্রহণে অতি-দক্ষ। এবছর তারা আবার ওই দ্বীপে ফিরে গেছেন।
টিয়ার্নি বলেছেন, সায়ানোব্যাকটেরিয়া হল এমন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় কার্বন ক্যাপচার করে, এর নতুন স্ট্রেন সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল সায়ানোব্যাকটেরিয়া। তিনি সায়ানোব্যাকটেরিয়াকে “প্রকৃতির অ্যালকেমিস্ট” হিসাবে বর্ণনা করেছেন কারণ তারা প্রচুর পরিমাণে CO2 শোষণ করে এবং এটিকে জ্বালানী বা জৈব-ডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের মতো দরকারী সম্পদে রূপান্তর করতে পারে।
টিয়ার্নি জানিয়েছেন যে বায়ুমণ্ডল থেকে CO2 শুষে নেওয়ার জন্য নানা প্রযুক্তি ও প্রাকৃতিক সিস্টেমের সাথে সমন্বয়ে কাজ করার জন্য মাইক্রোবায়াল সমাধান ব্যবহার করা প্রয়োজন। অন্যান্য বিজ্ঞানীরাও জানিয়েছেন, সায়ানোব্যাকটেরিয়া এবং মাইক্রোঅ্যালগির মতো জীবাণু ব্যবহার করা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। তারা প্রচলিত ফসলের তুলনায় অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ফলে তারা একই সময়ে আরও বেশি কার্বন ক্যাপচার করতে পারে। এর আরেকটি সুবিধা হল যে জীবাণু দ্বারা উত্পাদিত জৈববস্তু চাষ আবাদ হয় না এমন জমিতে, সমুদ্রের জলে জন্মায়, ফলে চাষযোগ্য জমি না লাগাতে খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব পড়ে না। জৈববস্তু বড় পুকুরে বা বায়োরিয়াক্টরে উৎপন্ন করা যায় এবং জৈব জ্বালানি, সার, প্রোটিন সম্পূরক এবং পশু খাদ্যের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

কিন্তু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার জন্য বড়ো পরিসরে এটা করা কঠিন হলেও ইতিমধ্যেই কিছু কোম্পানি জীবাণু ব্যবহার করে CO2 ক্যাপচার করার পদ্ধতি বাস্তবায়ন করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে CO2 কে বিমানের জ্বালানি হিসেবে এবং লন্ড্রি ডিটারজেন্ট থেকে সুগন্ধি পণ্যগুলোতে ব্যবহৃত রাসায়নিক রূপান্তরিত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইউরোপীয়ান কোম্পানিতে জৈবিক তেল এবং বায়োমাস তৈরি করতে সায়ানোব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + fourteen =