বিষাক্ততা মোকাবিলায় সামুদ্রিক প্রাণী – স্পঞ্জ

বিষাক্ততা মোকাবিলায় সামুদ্রিক প্রাণী – স্পঞ্জ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ অক্টোবর, ২০২৪

সামুদ্রিক প্রাণীদের মধ্যে খুব সরল শারীরিক গঠনের এক প্রাণী হল স্পঞ্জ। এদের মধ্যে থিওনেলা কনিকা নামে এক ধরনের স্পঞ্জ লোহিত সাগর এবং ভারত মহাসাগরে পাওয়া যায়। অন্যান্য স্পঞ্জের মতো এটা চারপাশের সমুদ্রের জল ফিল্টার করে নিজেদের পুষ্টি আহরণ করে। সরল শরীরের অধিকারী হয়ায়া এই স্পঞ্জের শরীরে কোনো অঙ্গ, কলা, স্নায়বিক তন্ত্র থাকেনা। এরা অন্যান্য প্রাণীর সাথে মিথোজীবীতার মাধ্যমে বেঁচে থাকে। দুটো প্রাণী যখন একসাথে বসবাস করে আর বেঁচে থাকার জন্য একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয় তখন তা মিথোজীবীতা। এই থিওনেলা স্পঞ্জের সাহায্যকারী প্রাণীরা হল ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, শৈবাল। আর এই স্পঞ্জের শরীরের ওজনের চল্লিশ শতাংশ ওজন হল এদের ওপর বসবাসকারী মিথোজীবীদের ওজন। আলাদা আলাদা স্থান যেমন ভারত মহাসাগরের জাঞ্জিবার, ইলাত উপসাগরের থেকে নেওয়া নমুনায় এই স্পঞ্জের শরীরে গবেষকরা মলিবডেনাম নামে এক ভারী ধাতু অতিরিক্তমাত্রার ঘনত্বে পেয়েছেন। এদের শরীরে শুষ্ক ওজনের প্রতি গ্রামে ৪৬৭৯৩ মাইক্রোগ্রাম মলিবডেনাম পাওয়া গেছে। এই ঘনত্বে থাকা ভারী ধাতু অন্যান্য জীবের ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে। তাহলে এই স্পঞ্জ কীভাবে বেঁচে থাকে?
এণ্টোথিওনেল্লা নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার বাস এই স্পঞ্জের শরীরে। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন, এই ব্যাকটেরিয়া স্পঞ্জের শরীরে মলিবডেনাম জমা করে। জলে দ্রবীভূত মাত্রার তুলনায় মলিবডেনামের ঘনত্ব বেশি হলে তখন বিষাক্ততা তৈরি হয়। এই ব্যাকটেরিয়া মলিবডেনাম গ্রহণ করে তা নিরাপদ মলিবডেনাম যৌগ ক্যালসিয়াম মলিবডেট ও সোডিয়াম মলিবডেটে রূপান্তর করে। ব্যাকটেরিয়া এই কাজ কেন করে তা গবেষণায় এখনও স্পষ্ট নয়। তবে গবেষকদের ধারণা এতে স্পঞ্জ সবাইকে ভয় দেখাতে পারে – ‘আমি একটা বিষাক্ত প্রাণী আমাকে খেতে এসোনা বিপদে পড়বে’। নিজেকে বাঁচাতে সমর্থ হওয়ার জন্য থিওনেলা স্পঞ্জ তার উপকারী বন্ধু ব্যাকটেরিয়া এণ্টোথিওনেল্লা-কে না খেয়ে তাকে আশ্রয় দেয়। এর আগে, থিওনেলা সুইনহোয়ি নামে এক নিকটবর্তী প্রজাতির স্পঞ্জে অতিরিক্ত মাত্রায় বেরিয়াম ও আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছিল। এখানেও এই মৌলগুলো স্পঞ্জের শরীরে নিরাপদ যৌগে রূপান্তরিত হয়েছিল। গবেষকরা জানিয়েছেন, স্পঞ্জে বসবাসকারী এই সব ব্যাকটেরিয়া নিয়ে ক্রমাগত গবেষণা পানীয় জলে আর্সেনিক দূষণ পরিস্রুত করার জন্য কার্যকর হতে পারে। বিশ্বব্যাপী ২০ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য এই আর্সেনিক দূষণের জন্য বিপদের মুখে। তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণা সায়েন্স অ্যাডভান্সেস-এ প্রকাশিত হয়েছে।