বিষাক্ত খেলনা

বিষাক্ত খেলনা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

রঙিন হাসি, কার্টুন প্রিন্ট, সস্তা দাম। দেখে কে বলবে খেলনাগুলি হতে পারে অত্যন্ত বিপজ্জনক! ব্রাজিলে বিক্রি হওয়া প্লাস্টিক খেলনার ভিতরে লুকিয়ে আছে এমন সমস্ত রাসায়নিক, যা শিশুর হৃদযন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র এমনকি মস্তিষ্কের বিকাশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব আলফেনাস সম্প্রতি ৭০রকমের খেলনা পরীক্ষা করেছেন। ফলাফল চমকে দেওয়ার মতন। এটি দেশের ইতিহাসে খেলনা দূষণ নিয়ে সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক তদন্ত। খেলনার বহু নমুনায়, ইনমেট্রো-ব্রাজিলিয়ান নিরাপত্তা মানদন্ড এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা মানদণ্ড, দুটিই ভঙ্গ হয়েছে। এর মধ্যে পাওয়া সবচেয়ে উদ্বেগজনক পদার্থ বেরিয়াম। পরীক্ষিত খেলনার ৪৪.৩% ক্ষেত্রে, বেরিয়াম পাওয়া গেছে, বৈধ সীমার উপরে। কিছু ক্ষেত্রে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি হারে। বেরিয়াম শরীরে প্রবেশ করলে হার্ট অ্যারিদমিয়া, স্নায়বিক সমস্যা এবং পক্ষাঘাত ডেকে আনতে পারে। গবেষণা থেমে থাকেনি বেরিয়ামে। সীসা পাওয়া গেছে, খেলনার ৩২.৯%-এ। কিছু ক্ষেত্রে অনুমোদিত মাত্রার চার গুণ। এর পরিণতি? বুদ্ধিমত্তা হ্রাস, স্মৃতিনাশ, আচরণগত সমস্যা। এগুলি হতে পারে স্থায়ী ক্ষতি। অ্যান্টিমনি পাওয়া গেছে ২৪.৩% নমুনায়। শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া, বমিভাব এবং পেটব্যথার ঝুঁকি বাড়ায় অ্যান্টিমনি। ক্রোমিয়াম, এক পরিচিত ক্যান্সার জনক পদার্থ। এইসমস্ত খেলনায় উচ্চ মাত্রায় ক্রোমিয়াম ধরা পড়ে। গবেষক ব্রুনো আলভেস রোচা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং এ এক নিয়ন্ত্রণহীন বাজারের ছবি।”শুধু রং বা লেবেল দেখেই এই বিষ ধরা যায় না। এর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ এক পদ্ধতি যা ন্যানোগ্রামেরও কম পরিমাণে থাকা ধাতব কণা শনাক্ত করতে পারে। আরেকটি পদ্ধতিতে গবেষকরা খেলনাকে কৃত্রিম লালা ও পাকস্থলীর অ্যাসিডে ডুবিয়ে দেখেন, তাতে ২১টি বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যার মধ্যে আছে, সীসা, পারদ, নিকেল, ইউরেনিয়াম, আর্সেনিক, বোরন এবং থ্যালিয়াম। এদের লিকেজ বা বেরোনোর হার ছিল ০.১১% থেকে ৭.৩৩%। শুনতে ছোট মনে হলেও, গবেষকরা বলছেন,“খেলনার ভিতরে মোট বিষের পরিমাণ এত বেশি যে সামান্য নিঃসরণও সময়ের সাথে অত্যন্ত বিপজ্জনক।”এনারা চেইন প্যাটার্ন খুঁজে পেয়েছেন। নিকেল, কোবাল্ট ও ম্যাঙ্গানিজ একই উৎস থেকে এসেছে বলে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। বিশেষভাবে বেইজ রঙের খেলনায় বেশি দূষণ পাওয়া গেছে। সম্ভবত নির্দিষ্ট রঙ বা রঞ্জক সরবরাহকারীর কারণে। অর্থাৎ, সমস্যা শুধু ফ্যাক্টরি নয়, সরবরাহ ব্যবস্থা জুড়ে ছড়িয়ে আছে। সুতরাং যেখানে শিশু নিরাপত্তা অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, সেই বাজারেই শিশুদের হাতে দেওয়া হচ্ছে বিষ।

 

সূত্র : Potentially Toxic Elements in Brazilian Toys: A Bioaccessibility-Based Childhood Health Risk Assessment. By Bruno Alves Rocha.et.el; Exposure and Health, 2025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × four =