কয়েক কোটি টন বিষাক্ত বায়ু বাতাসে মিশিয়েছে মানুষ, আবহাওয়ায় আসছে বড় বদলের আশঙ্কা!
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো, তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?”- ১৩৩৮ বঙ্গাব্দের পৌষে পরিশেষ কাব্যগ্রন্থের ‘প্রশ্ন’ কবিতায় এ প্রশ্ন রেখে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আজ একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানীরা যখন আসন্ন আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তখন যেন বার বার এই প্রশ্নটিই ফিরে ফিরে আসে।
উন্নয়নের লক্ষ্যে ভুল তে বসেছি প্রকৃতিকেই। সম্প্রতি বিশ্বের উষ্ণায়নের হার নিয়েই আলোচনায় বসেছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি প্যানেল। গ্রিন হাউস গ্যাস কীভাবে কমানো যায় তাই ছিল বৈঠকের মূল প্রতিপাদ্য। কিন্তু সেখানেই উঠে আসল এই ভয় ধরানো চিত্র৷ National Oceanic and Atmospheric Administration এর বার্ষিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে বিশ্বের বাতাসে মিথেন গ্যাসের বাড়বাড়ন্ত রেকর্ডহারে। গ্রিন হাউস গ্যাসগুলির মধ্যে এই মিথেন অন্যতম।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন ১৯৮৩ এর পর বছরে এত পরিমাণ মিথেন গ্যাসের আধিক্য ২০২১ এ প্রথম। মানুষ তাদের কাজকর্মের মাধ্যমেই ৬৪০ মিলিয়ন টন মিথেন বাতাসে মিশিয়েছেন। আর এই একই সময়ে ৩৬ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইডও মিশেছে বাতাসে। প্রাথমিক বিশ্লেষণ থেকে দেখা যাচ্ছে গত বছর বাতাসে মিথেন মেশার সংখ্যা ছিল ১৫.৩ parts per billion (ppb)। এখন তা ১৭ ppb। শিল্পের আদিম সময়ের থেকে বাতাসে এখন মিথেনের পরিমাণ বেড়েচহে ১৬২ শতাংশ, যা কেবল চিন্তার নয়, দুশ্চিন্তার।।
এই তথ্যে এও দেখা যাচ্ছে যে গ্রিন হাউস গ্যাসের আধিক্য কমাতে সরকারের তরফেও তেমন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। তবে অনেক দেশ ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ৩০ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে দিলেই এটি সম্ভব। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যত বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার হবে, দাহ্য পদার্থ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেন তত বেড়িয়ে বাতাসে মিশবে। বাড়বে উত্তাপ।
২০৩০ এর মধ্যে তাই কীভাবে এই গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে দেওয় যায় এবং ২০৫০ এর মধ্যে তা শূন্য করা যায় সেই চেষ্টাই আলোচনায় স্থান পায়৷ ইতিমধ্যেই উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে গলছে বরফ। পর পর ভাঙছে সুউচ্চ হিমবাহ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বেড়েছে। বদলেছে প্রকৃতি। এখন কথায় কথায় খামখেয়ালি সে। প্রকৃতিকে আগের মতো করে তুলতেই তাই নয় অভিযানে নামতে পারে ইউনাইটেড নেশনস।