আমরা দৈনন্দিন নানা রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসি, যা আমাদের কাজে লাগে। যেমন খাবার লবণ, যা সামান্য পরিমাণে আমাদের শরীরের জন্য ভালো। তবে বেশি পরিমাণে বেশ ক্ষতিকারক তাতে রক্তচাপ বাড়বে, হৃদযন্ত্র বিকল হতে পারে। কিন্তু এমন অনেক রাসায়নিক আছে যা মারাত্মক ক্ষতিকারক যার থেকে বড়ো বিপদ হতে পারে। কোন রাসায়নিক সবচেয়ে বিপজ্জনক? পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত পদার্থ বলা যায় বোটুলিনাম টক্সিনকে, যা ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ব্যাকটেরিয়া থেকে উৎপন্ন হয়। এটা পেশির স্নায়ুর সংকেত বন্ধ করে পক্ষাঘাতে মৃত্যু ঘটায়। আগে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী VX, নামে একটা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করত, যা অপর পক্ষের মানুষদের শ্বাসযন্ত্রের স্নায়ু বিকল করে পেশি অবশ করে শ্বাসরোধ করত। আবার ক্লোরিন ট্রাইফ্লুরাইড, অতি ক্ষয়কারী বর্ণহীন অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল গ্যাস। এটা এতটাই প্রতিক্রিয়াশীল যা সাধারণ নানা জিনিস জল, বালি এমনকি পুড়ে যাওয়া পদার্থের ছাইয়ের সংস্পর্শেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিস্ফোরিত হয়।
বিজ্ঞানীদের মতে স্নায়ুর ক্ষতিকারী বিষ মানবদেহের জন্য সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক। খুব স্বল্প পরিমাণ এই ধরনের বিষে মানুষ যেমন আক্রান্ত হয় তেমন এর মারাত্মক প্রভাবও শরীরে দ্রুত পড়ে। তাই রাসায়নিক অস্ত্র হিসাবে এই ধরনের বিষই সবচেয়ে বিষাক্ত। মাত্র ১০ মিলিগ্রাম ( অর্থাৎ ৫০০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামলের ৫০ ভাগের ১ভাগ) VX কয়েক মিনিটের মধ্যে মৃত্যু ঘটাতে যথেষ্ট। বাস্তবে এ হেন স্নায়ুর বিষে গত এক দশকে মাত্র একজনের মৃত্যু হয়েছে। আবার বেশ সাধারণ দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিস যেমন ব্লিচ বা জীবাণুনাশকে প্রতি বছর দুর্ঘটনাক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক লাখেরও বেশি মানুষ বিষে আক্রান্ত হয়। যদিও এই পদার্থগুলি ধীরে কাজ করে, VX-এর তুলনায় অনেক কম বিষাক্ত। তবে কিছু সাধারণ রাসায়নিক একত্রিত হলে মারাত্মক হতে পারে। যেমন ড্রেন ক্লিনার এবং ব্লিচ একত্রিত হলে বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাস নির্গত হবে।
কার্ডিফ স্কুল অফ ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, পরিবেশ ও সুস্থতা বিষয়ক কর্মকর্তা রিচার্ড ওয়েব বলেছেন, দুটো কারণে বিষ বিপজ্জনক হতে পারে। রাসায়নিকের ক্ষতি করার সম্ভাবনা আর তাতে উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ও ক্ষতির তীব্রতা৷ তাহলে রাসায়নিক যতই ক্ষতিকারক হোক সেই বস্তু কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে ঝুঁকি পরিবর্তিত হয়। যতক্ষণ না রাসায়নিকের সংস্পর্শে মানুষ আসছে, সেই রাসায়নিক থেকে বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা, সেই কারণে বোটুলিনাম টক্সিন, VX, ক্লোরিন ট্রাইফ্লুরাইড যতই বিষাক্ত হোক না কেন তাতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রধানত কোনো জিনিস কতটা ক্ষতিকারক তা পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ভর করে, সুমিং পুলে ক্লোরিন জল পরিষ্কার করতে ব্যবহার হয়, সেই ক্লোরিন গ্যাস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মারণ অস্ত্র। আপনি যদি বিষাক্ত বস্তু নিয়ে কাজ করার সময় নিজের নিরাপত্তার খেয়াল রাখেন, ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম ব্যবহার করেন, কাজ শেষ হয়ে গেলে হাত ধুয়ে ফেলেন, তবে বিষে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।