বিষ্ময়ের চিংড়িকথা

বিষ্ময়ের চিংড়িকথা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ ডিসেম্বর, ২০২১

মার্বেল ক্রেফিশ- বিশেষ প্রজাতির গলদাচিংড়ি। প্রথম মানুষের নজরে আসে দুদশক আগে। কবে থেকে ঠিক এরা পৃথিবীতে আছে সে বিষয়ে সঠিক জানেন না বিজ্ঞানীরা। এক মার্কিন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক জার্মান ভদ্রলোক অ্যাকরিয়ামে রাখার জন্যে কেনেন কিছু টেক্সাসের চিংড়ি। সেটি যে খানিক পৃথক প্রজাতির ১৯৯৫ সাল নাগাদ তা বিজ্ঞানীদের নজরে আসে। বিজ্ঞানীরা দেখেন, প্রজননের জন্যে এদের পুরুষ চিংড়ি ও স্ত্রী চিংড়ির প্রয়োজন হচ্ছে না, নিজেরাই প্রতিলিপি গঠনে সক্ষম। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাস্টেসিয়ান গবেষক জেন ফক্স বলেন এই প্রজাতির প্রতিটি চিংড়ি পুনরুৎপাদনে সক্ষম।
এ তথ্য জানার পর চিংড়ি বিশেষজ্ঞরা তাজ্জব বনে যান। ২০০৩ সালে বিজ্ঞানীরা এই প্রজাতিটির নাম দেন মার্বেল ক্রেফিশ বা জার্মান ভাষায় মারমোরক্রেব। প্রশ্ন আসবে জার্মান ভাষায় আলাদা করে নাম কেন দেওয়া?
২০০৩ সালে বার্লিনের হামবোল্ট ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী জেরহার্ড সোলৎজ প্রথম মার্বেল ক্রেফিশ সম্পর্কে মোটামুটি পূর্ণাঙ্গ বিবৃতি দেন। ডিএনএ সমীক্ষা করা হয় মার্বেল ক্রেফিশের। মোট ১১টি চিংড়ি নিয়ে ডিএনএ সমীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১০ টি জার্মানির ঐ ভদ্রলোকের অ্যাকোরিয়াম থেকে নেওয়া। বাকিটি মাদাগাস্কারে সহজাত স্থানে বসবাসকারী চিংড়ি। এই সমীক্ষায় চমকে দেওয়া তথ্য মেলে। দেখা যায় অ্যাকোরিয়ামের চিংড়ি গুলি আসলে একটিই বৃদ্ধ চিংড়ির প্রতিলিপি গঠনের মাধ্যমেই এসেছে। এগুলির জিনগত বৈচিত্র্য খুবই স্বল্প। এই সমীক্ষায় অপর এক গবেষক ছিলেন ফ্রাঙ্ক ল্যাকো। ইনিও জার্মান। ল্যায়ো বলেন, এই সমীক্ষার অপর একটি চমকে দেওয়ার তথ্য হলো মার্বেল ক্রেফিশ ট্রাইপোলয়েড।- অর্থাৎ তিনটি ক্রোমোজম বিশিষ্ট। সাধারণত পুং এবং স্ত্রী দুই লিঙ্গের প্রতিনিধি যাদের মিলনে প্রজনন হয় তাদের একটা একটা মোট দুটি ক্রোমোজম থাকে উত্তরাধিকারীর শরীরে। কিন্তু এদের দেহে তিনটি ক্রমোজম এলই বা কোথা থেকে? যেখানে এদের উৎপাদন সঙ্গমহীন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে! সোলৎজ বলেন, মার্বেল ক্রেফিশের সঙ্গমহীন পুনরুৎপাদনের বিষয়টি রহস্যজনক। ( জার্মান বিজ্ঞানীদের হাতেই এই প্রাণীটির গবেষণা চলেছে, ফলে জার্মান নামকরণের প্রেক্ষাপট বুঝতে অসুবিধে হয় না।)
ইতিমধ্যে বিজ্ঞানীরা বুঝেছেন কেবল জার্মানির অ্যাকোরিয়ামে এই প্রাণী আছে এমন নয়। নিশ্চিত এদের পৃথিবীতে স্বাভাবিক আবাসস্থল রয়েছে। এবং এরা খুবই আগ্রাসী আক্রমণকারী প্রাণী। জার্মানি,ইতালি, স্লোভাকিয়া, সুইডেন, জাপান, মাদাগাস্কার – মার্বেল ক্রেফিশের স্বাভাবিক আবাসস্থল। ল্যাকো মাদাগাস্কারের বিজ্ঞানীদের সাথে যৌথ ভাবে মার্বেল ক্রেফিশ সম্পর্কিত চর্চা এগিয়ে নিয়ে যেতে গিয়ে দেখেন, মাদাগাস্কারের অন্য স্থানীয় চিংড়িকে স্থানচ্যুত করে ফেলেছে এরা। এবং ১০ বছরে ক্রেফিশ নিজেদের সংখ্যা ১০০ গুন বাড়িয়ে ফেলেছে মাদাগাস্কারে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন ফ্লোরিডার স্থানীয় চিংড়ি বিবর্তিত হয়ে মার্বেল ক্রেফিশ এসেছে। এরা উষ্ণ আদ্র পরিবেশই পছন্দ করে। ল্যাকো তাই বলেন, জার্মানির চেয়ে মাদাগাস্কারেই এদের বেশি দেখা পাওয়া যাবে।
আপনি চাইলে আপনার অ্যাকোরিয়ামে সাজিয়ে রাখার জন্যে অনলাইনেই কিনতে পারেন মার্বেল ক্রেফিশ। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্যে নিশিদ্ধ বিশেষ প্রজাতির চিংড়িটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 + twelve =