
গত ১৪ এপ্রিল ছিল জাতীয় ডলফিন দিবস। প্রকৃতিতে ডলফিনের ভূমিকার প্রশংসার্থে এবং ক্রমবর্ধমান বিপদ থেকে তাদের রক্ষা করতে এই দিনটি ডলফিনদের প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে। ডলফিন তিমি প্রজাতিরই অন্তর্ভুক্ত প্রাণী। অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার কারণে প্রায়শই এরা মানুষের নজর কাড়ে। সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, উপকরণ ব্যবহার, এমনকি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জ্ঞান প্রেরণ করার ক্ষমতা তাদের আছে। সমুদ্রের তলদেশে খাবার খোঁজার সময় নাক ঢেকে রাখার জন্য তাদের সমুদ্রের স্পঞ্জ ব্যবহার করতেও দেখা গেছে। এই আচরণ কৃষ্টিগত শিক্ষার ইঙ্গিত দেয়। এদের মস্তিষ্ক আকারে বড় এবং জটিল। শরীরে তুলনায় মস্তিষ্কের ওজন তুল্যমূল্য বিচারে মানুষের ঠিক পরেই। শিকার শনাক্ত করতে এরা জৈবিক শব্দ ব্যবহার করে। বিভিন্ন ধরনের ক্লিক ক্লিক শব্দ, বাঁশির মতো শব্দ বা শরীরের নড়াচড়ার মাধ্যমে শব্দ উৎপন্ন করে থাকে। তারা কোনো ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে পারে তরঙ্গের মাধ্যমে। বন্দি অবস্থায় ডলফিনরা পরীক্ষায় আত্মসচেতনতার পরিচয় দিয়েছে। বন্য কিংবা প্রশিক্ষিত উভয় পরিবেশেই সহানুভূতি এবং সহযোগিতা দেখিয়েছে এই প্রাণীগুলি। এদের আবেগ এবং বোধগম্যতার দৌলতে বিজ্ঞানীরা এদের অ-মানব ব্যক্তিসত্তা হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করতে উৎসাহ পেয়েছেন। অনেকেই মনে করেছেন যে এরা নৈতিক এবং আইনি অধিকারের যোগ্য। সমুদ্র কিংবা নদীতে ডলফিন দেখা গেলেও, বিশ্বজুড়ে এরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছে। প্লাস্টিক, বর্জ্য, রাসায়নিক দূষণ, জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি সবকিছুই তাদের হুমকির মুখে ঠেলছে। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে যেহেতু এরা শব্দ ব্যবহার করে, তাই জাহাজ, স্টিমার, ডাঙার কাছাকাছি সমুদ্রখনন প্রভৃতির আওয়াজ এ দের খাদ্যে, প্রজননে, এমনকি দলবদ্ধভাবে বাসকেও কঠিন করে তুলছে। আরেকটি বিশাল ঝুঁকি – মাছ ধরার সরঞ্জাম। টুনা বা চিংড়ির জালে প্রায়শই ডলফিনরা আটকা পড়ে। অপরদিকে, কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানী এবং সংরক্ষণ কর্মীদের বারণ করা সত্বেও ডলফিনদের এখনো কোনো কোনো সামুদ্রিক পার্ক বা বিনোদন অনুষ্ঠানের জন্য ধরা এবং ব্যবহার করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মেরিন ম্যামাল সেন্টার বা ডলফিন কমিউনিকেশন প্রজেক্ট প্রভৃতি সংস্থাগুলি গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষণ কর্মসূচিতে সাহায্য করছে। সামুদ্রিক জীবনের প্রতি প্রাথমিক শ্রদ্ধা এবং কৌতূহল জাগানোর জন্য স্কুলে এবং সর্বোপরি জনসাধারণের সচেতনতার উদ্দেশ্যে প্রচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডলফিন রক্ষা করা শুধু ডলফিনদের জন্যই নয় বরং সমুদ্রের উপর নির্ভরশীল আরো অনেকগুলি সংশ্লিষ্ট প্রজাতিকে রক্ষা করার তাগিদেই। এ কেবল তথাকথিত এক দিবসের উদযাপন নয়, এ হল প্রকৃতির সাথে মানুষের সংযোগের প্রতিচ্ছবি। মানুষের সাথে ডলফিনদের বৈশিষ্ট্যগুলির গভীর মিল রয়েছে, যেমন বুদ্ধিমত্তা, সহানুভূতি, খেলাধুলা এবং যোগাযোগ। এই সংযোগই আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমরা প্রকৃতি থেকে আলাদা নই বরং একই বাস্তুতন্ত্রের কিছু হেরফের মাত্র।