কেমন হয় যদি কোষের মধ্যে প্রোটিনের তৈরি ছোট্টো ছোট্টো প্রসেসর থাকে? যেই কোনো স্ফীতি ও প্রদাহ হল, কিংবা কোনো টিউমার গজানোর কিংবা রক্তে শর্করা বাড়ার সংকেত এল, অমনি সেই প্রসেসর ‘সিদ্ধান্ত’ নিয়ে ফেলল কীভাবে সেইসব সংকেতের মোকাবিলা করতে হবে। আমেরিকার রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এইরকম ‘বুদ্ধিমান কোষ’ তৈরির কাজে সাফল্য পেয়েছেন। কোষের কৃত্রিম বর্তনীর (সার্কিট) নকশা তৈরির জন্য তাঁরা একটা নতুন পথ নিয়েছেন। এর ভিত্তি হল দেহের ফরস্ফোরিলেশন নামক এক প্রক্রিয়া। পরিপার্শ্বের বিভিন্ন সংকেতে সাড়া দেবার জন্য কোষেরা স্বাভাবিকভাবেই এই প্রক্রিয়াটি ব্যাবহার করে। সংকেত পাঠানোর যেসব খাত শরীরে রয়েছে সেগুলোকেই এদিক ওদিক করে এই প্রক্রিয়াটিকে মানুষের কোষের রোগ সারানোর কাজে লাগানোর জন্য চেষ্টা আগে খুব একটা সফল হয়নি। কারণ এইসব খাতগুলো এত জটিল যে তাদের নিয়ে কাজ করা শক্ত। সেখানেই এই নতুন গবেষণার কৃতিত্ব। ‘বুদ্ধিমান কোষ’ নির্মাণের যে-জৈব প্রযুক্তি এঁরা গড়ে তুলেছেন, তাতে এ বিষয়ে অল্পকালের মধ্যেই বড়ো একটা সাফল্য আসতে চলেছে। কোষ তার পরিপার্শ্বে কোনোকিছুর সংস্পর্শে এলে কিংবা কোনো কিছুর আভাস পেলে তার প্রতিক্রিয়ায় রিলে রেসের মতো পরপর কতকগুলি ক্রিয়ার চক্র তৈরি হয়। গবেষকদল লক্ষ্য করলেন, এই রিলে রেসের প্রক্রিয়ায় এক একটি চক্রকে এক একটি একক হিসেবে গণ্য করা যায়। এইবার সেই এককগুলিকে ভিন্নভাবে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। তার ফলে গড়ে উঠবে নতুন নতুন খাত যেগুলো কোষের বাইরে থেকে আসা সংকেত আর কোষের প্রতিক্রিয়াকে যুক্ত করবে। এর ফলে সংকেত বর্তনীর নকশা নির্মাণের ক্ষেত্রটি নাটকীয়ভাবে খুলে যায়। বোঝা যায়, ফসফোরিলেশন ব্যাপারটা শুধু যে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত একটা প্রক্রিয়া ত-ই নয়, তাদের পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করে তোলাও যায়। এতটার জন্য গবেষকরা প্রস্তুত ছিলেন না। তাঁরা ভাবতে পারেননি যে পরীক্ষনিরীক্ষার পদ্ধতির পরিশীলনের বর্তমান স্তরে তাঁরা এতদূর এগোতে পারবেন। ফলত তাঁরা কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় ফসফোরিলেশন বর্তনী বানাতে পেরেছেন, যেগুলি কোষের কোনো ক্ষতি না করে কোষের নিজস্ব প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। তবে এই কৃত্রিম বর্তনী জীবিত প্রাণীর দেহে বসানো যাবে কিনা তা নিয়ে বেশ সংশয় ছিল। কিন্তু দেখা গেল, সেটাও সম্ভব। তার জন্য প্রভূত পরিশ্রম ও বহুমুখী গবেষণা চালাতে হয়েছে, বলাই বাহুল্য। এই ‘বুঝে-নিয়ে-সাড়া-দেওয়া’র পদ্ধতির আর একটা সুবিধে আছে। এদের এমনভাবে প্রোগ্রাম করা যায় যে, মাত্র কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের মধ্যেই এই নতুন বর্তনীগুলোর ফসফোরিলেশন প্রক্রিয়া বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ঘটনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাড়া দিতে পারবে। এর আগে এই কাজ শুরু হতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যেত। পরিবর্তনের প্রতি স্তন্যপায়ী জীবের কোষগুলির সাড়াকে নিয়ন্ত্রণ করার পথে এ গবেষণা একটা বড়ো পদক্ষেপ।
সূত্র: Xiaoyu Yang et al, Engineering synthetic phosphorylation signaling networks in human cells, Science (2025). DOI: 10.1126/science.adm8485