জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং মহাজাগতিক বিস্ময়ের ব্যাপারে যাঁরা আগ্রহী, তাঁরা (Volunteers) মার্কিন স্পেস এজেন্সি নাসাকে একটি সুপার জায়ান্ট প্ল্যানেট অর্থাৎ অতিকায় বৃহৎ গ্রহ আবিষ্কার করতে সাহায্য করেছে। এই গ্রহ আমাদের সোলার সিস্টেম বা সৌরমণ্ডলের বাইরে অবস্থিত। এই এক্সোপ্ল্যানেট সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতির তুলনায় তিনগুণ বড়। পৃথিবী থেকে ৩৭৯ আলোক বর্ষ দূরে রয়েছে এই এক্সোপ্ল্যানেট (Exoplanet)। এই সুপার-জুপিটার এক্সোপ্ল্যানেট সূর্যের সমান ভরের একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে। নাসা জানিয়েছে, একদল citizen scientists, যাঁরা এজেন্সির Transiting Exoplanet Survey Satellite (TESS) থেকে ডেটা অধ্যয়ন করে, তাঁদের মাধ্যমেই এই এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নাসা হামেশাই এই সিটিজেন সায়েন্টিস্টদের তাদের টেলিস্কোপের ডেটা নিয়ে গবেষণা এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সৌরমণ্ডলের বাইরের অংশ কেমন, তা বোঝার সুযোগ করে দেয়।
টম জ্যাকবস, ওয়াশিংটন স্টেটের প্রাক্তন মার্কিন নৌ-সেনা আধিকারিক ছিলেন ওই সিটিজেন সায়েন্টিস্টদের দলে। এক্সোপ্ল্যানেট খুঁজে বের করার প্রোজেক্টে যুক্ত ছিলেন তিনি। নাসা জানিয়েছে, এই এক্সোপ্ল্যানেটের আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এই এক্সোপ্ল্যানেটের ২৬১ দিনের বছর সৌরমণ্ডলের বাইরের অন্যান্য গ্যাসীয় দৈত্যাকার গ্রহের তুলনায় অনেক দীর্ঘ। সূর্য থেকে শুক্র গ্রহের দূরত্ব যত, এই এক্সোপ্ল্যানেট তার হোস্ট স্টার বা নক্ষত্রের থেকে তার তুলনায় একটু দূরে অবস্থান করছে। টম জ্যাকবস বলেছেন, TOI-2180 b এই নতুন এক্সোপ্ল্যানেটের আবিষ্কার এবং তা প্রকাশ্যে আনা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এর থেকেই প্রমাণ হচ্ছে যে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং সিটিজেন সায়েন্টিস্টরা একসঙ্গে সফলভাবে কাজ করতে পারবেন। Astronomical Journal- এ এই আবিষ্কার সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই আবিষ্কারের জন্য যে প্রোজেক্ট হয়েছিল তার পুরোধা ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী পল ডালবা। তিনি বলেছেন ওই এক্সোপ্ল্যানেটকে খুঁজে বের করার জন্য তাঁরা একটি বিশ্বব্যাপী ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় যুক্ত হয়েছিলেন।
জানা গিয়েছে, বিজ্ঞানীরা TESS থেকে ডেটা বা তথ্য সংগ্রহ করে কাছাকাছি থাকা নক্ষত্রগুলোর উজ্জ্বলতার পরিবর্তন বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে Jacobs’ group যার আর এক নাম Visual Survey Group- এই দলে যুক্ত হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন সিটিজেন সায়েন্টিস্ট এবং দু’জন অভিজ্ঞ জ্যোতির্বিজ্ঞানী। এই দলের সদস্যরা একটি প্লট দেখতে পেয়েছিলেন। এখানে TOI-2180- এর আলো দেখা গিয়েছিল, যা প্রায় অর্ধ শতাংশ কমে গিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় আগের উজ্জ্বলতায় ফিরে গিয়েছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এরপর জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ সম্পূর্ণ রূপে তৈরি হয়ে গেলে পর্যবেক্ষণে আরও সুবিধা হবে। ওই এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডল এবং তার চারপাশে প্রদক্ষিণরত ছোট ছোট বস্তুও দেখা যাবে।