
সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিজ্ঞানী দল বন্য চাকমা বেবুনদের গতিবিধি অনুসরণ করার জন্য উচ্চ-রেজোলিউশনের জিপিএস ব্যবহার করেছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে বেবুনরা প্রতিরক্ষা কৌশল বা কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে শুধু নয়, নিকটতম সঙ্গীদের কাছে থাকার জন্যও সারিবদ্ধভাবে হাঁটে। অতীতের গবেষণায় তারা কেন এটি করে তা নিয়ে একমত হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কেউ কেউ মত প্রকাশ করেছেন যে এই সারিবদ্ধতার ক্রমটি এলোমেলো, আবার কারও কারও বিশ্বাস, ওটা ইচ্ছাকৃত। শিকারীদের কাছ থেকে আসা বিপদ কমাতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রাণীদের মাঝখানে রাখা হয়। আরও গবেষণার জন্য, সোয়ানসি গবেষকরা দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ উপদ্বীপ নিবাসী বন্য চাকমা বেবুনদের ( পাপিও উরসিনাস) একটি দলের গতিবিধি অনুসরণ করার জন্য উচ্চ-রেজোলিউশনের জিপিএস যন্ত্রকৌশল ব্যবহার করেছেন। বিহেভিওরাল ইকোলজি জার্নালে প্রকাশিত ফলাফলগুলি থেকে দেখা যায়, তাদের গতিবিধির ধরণগুলি হুমকি এড়ানোর প্রচেষ্টার পরিবর্তে সামাজিক সংযোগ দ্বারা গঠিত হয়েছিল।
গবেষক দলটি ৩৬ দিনের মধ্যে ৭৮টি গতিবিধির অগ্রগতি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে যে বেবুনরা যে ক্রমে ভ্রমণ করেছে তা এলোমেলো নয়। গবেষকরা এর জন্য চারটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা পরীক্ষা করেছেন:
দুর্বলদের রক্ষা করা (ঝুঁকির অনুমান)
সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা (প্রতিযোগিতা অনুমান)
অনুসরণকারী নেতারা (গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুমান)
সামাজিক সম্পর্ক থেকে উদ্ভূত ধরণ (সামাজিক স্প্যান্ড্রেল অনুমান) । স্প্যান্ড্রেল হল বিবর্তনের পথে উপজাত একটি জিন-উদ্ভূত শারীরিক (ফেনোটাইপ) বৈশিষ্ট্য।
তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখতে পান, বেবুনদের গতিবিধির ধরণগুলি কেবল তাদের সামাজিক সম্পর্কের দ্বারাই পরিচালিত হয়েছিল। সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ অ্যান্ড্রু কিং বলেন: “আশ্চর্যর ব্যাপার হল, আমরা যে বেবুনগুলিকে অধ্যয়ন করেছি তাদের মধ্যে এমন এক সামঞ্জস্যপূর্ণ শৃঙ্খলা আছে যা বিপদ এড়ানোর জন্য নয়। শিকারি প্রাণীরা যখন নিজেদের সামাজিক গোষ্ঠীর মাঝখানে থাকে তখন কিন্তু সেইটাই করে। অথবা খাদ্য বা জলের আরও ভাল নাগালের জন্যও নয়, যেমনটি আমরা সমভূমির জেব্রাদের গতিবিধিতে দেখি। পরিবর্তে, বেবুনদের গতিবিধি তাদের সামাজিক বন্ধন দ্বারাই চালিত। তারা কেবল তাদের বন্ধুদের সাথেই চলাফেরা করে, যা এক সামঞ্জস্যপূর্ণ শৃঙ্খলা তৈরি করে।”
তিনি আরও বলেন, ” আমরা যে বেবুন দলটিকে নিয়ে কাজ করেছি, সেখানে সামাজিকভাবে সংযুক্ত, উচ্চতন ব্যক্তি-বেবুনরা সাধারণত দলের মাঝখানে হাঁটে, আর অধস্তনরা প্রায়শই সামনে বা পিছনে থাকে। এই দলগত চলাচলের সময় (যেমন একটি পরিচিত ঘুমোনোর জায়গায় যাওয়া) সম্ভবত দলটি ইতিমধ্যেই জানে তারা কোথায় চলেছে। সুতরাং, সামনের বেবুনগুলি আসলে নেতৃত্ব দিচ্ছে না; তারা কেবল সামনের দিকে হাঁটছে মাত্র।”
গবেষণাপত্রর প্রধান লেখক, সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্র মার্কো ফেল বলেছেন: “আমরা জানি বেবুনদের জন্য শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন গুরুত্বপূর্ণ । এ বন্ধন দীর্ঘ জীবন এবং বৃহত্তর প্রজনন সাফল্যের সাথে যুক্ত। কিন্তু এই বিশেষ প্রেক্ষাপটে, ওই বন্ধনগুলি কোনও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণ করছে না। আমরা যে ভ্রমণক্রমটি দেখতে পাই তা কেবল সেই সম্পর্কের একটি উপজাতক, তা এমন কোনও কৌশল নয় যার তাৎক্ষণিক সুবিধা আছে। আমাদের গবেষণায় সম্মিলিত প্রাণী আচরণে এই ধরণের স্প্যান্ড্রেলের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে।”
সূত্র : “Baboon travel progressions as a “social spandrel” in collective animal behaviour” by M Fele, I Fürtbauer, M Lurgi, M Papadopoulou, A M Bracken, C Christensen, M J O’Riain and A J King, 11 March 2025, Behavioral Ecology.
DOI: 10.1093/beheco/araf022