
শোনা যাচ্ছে এবং দেখাও যাচ্ছে, গত কয়েক বছর ধরে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার মতো বেসিক সায়েন্স পড়তে ছেলেমেয়েরা অনিচ্ছা প্রকাশ করছে। ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। রসায়ন ও গণিতের ক্ষেত্রেও প্রায় একই অবস্থা। কলকাতার কিছু কিছু বড় কলেজে এইসব বিষয়ে, বিশেষ করে পদার্থবিদ্যায়, অনার্স (বা মেজর) পড়ার জন্য এনরোলমেন্ট কমতে কমতে কোথাও কোথাও সংখ্যাটা এক অঙ্কে নেমে এসেছে, মফঃস্বল বা আশেপাশের ছোট কলেজে কোথাও কোথাও একেবারে শূন্য!
বিষয়টা নিয়ে এখনই মাথা ঘামানো দরকার। কী এমন হলো, যাতে বিষয়টা যেন একটা ক্রিটিক্যাল ফেজ ট্রানজিশানের দিকে এগোচ্ছে? ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি-অঙ্ক-বায়োলজি এসব বেসিক সায়েন্স না পড়লে, এসব বিষয়ে নিরন্তর গবেষণা বজায় না রাখলে যে আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক থেকে দ্রুত পিছিয়ে পড়ব, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই সমস্যার সাথে সম্পৃক্ত আরো কয়েকটা বিষয় একটু খতিয়ে দেখা যাক। স্কুলের পাঠ শেষ করে বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা যাচ্ছে কোথায়? পদার্থবিদ্যার মতো বেসিক সায়েন্স পড়তে না আসার প্রবণতা তৈরি হলো কেন? এইরকম ঘটনা কি এই রাজ্যের বাইরে দেশের অন্যত্রও ঘটছে? অন্য দেশেও কি এরকম ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে? সবকটারই উত্তর অল্পবিস্তর হলেও, হ্যাঁ।
তবে, আপাতত আমাদের রাজ্যের ছেলেমেয়েদের কথাই ভাবা যাক। স্কুলের পাঠ শেষে যাদের বিজ্ঞান পড়তে আসার কথা, তাদের মধ্যে একঝাঁক মেয়ে চলে যাচ্ছে এখানে ওখানে গজিয়ে ওঠা কলেজগুলোতে নার্সিং পড়তে। নার্সিং পড়লে একটা কিছু রোজগারের ব্যবস্থা হবে, এটা বাস্তব। এটা তো ঠিকই, আমাদের সংস্কৃতিতে ও সমাজব্যবস্থায় চাকরি না পেলে পড়াশুনার কোনো মূল্য নেই। শুধু শুধু শিখে করবেটা কী? ভালোবেসে কোনো বিষয় পড়তে আসা বা বুঝতে আসার দল সংখ্যায় নগণ্য। একদল ছেলেমেয়ে যাচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। আজকাল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে প্রায় এক লক্ষ র্যায়ঙ্ক করলেও কোনো না কোনো প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। হালে এত বেশি সংখ্যক প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং প্রাইভেট নার্সিং কলেজ তৈরি হয়েছে যে সেসব জায়গায় ভরতি হতে কোনো অসুবিধা থাকছে না, পয়সা খরচা করতে পারলেই হলো।
যারা একটু পড়ুয়া, লড়াকু ( ‘মেধাবী’ কথাটা বলব না ইচ্ছা করেই) তারা আই আই টি-র জন্য সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিচ্ছে। তবে সেখানে তথাকথিত “দামী” বিভাগগুলোতে চান্স পাওয়া বেশ কঠিন, কারণ সিটের তুলনায় লড়াকু বা প্রত্যাশীদের সংখ্যা অনেক বেশি। ওদিকে দেখা যাচ্ছে, ডাক্তারি পড়ার জন্য সর্বভারতীয় নীট পরীক্ষা দেওয়ার প্রবণতা যেন অনেক বেড়েছে। এটা একটা নতুন সোশাল ওয়েভ। শহরে, গ্রামেগঞ্জে, মফস্বলে সর্বত্র ছেলেমেয়েরা ডাক্তার হওয়ার জন্য প্রচন্ড প্রত্যাশা নিয়ে তৈরি হচ্ছে। প্রতিযোগিতা তীব্র হচ্ছে। লড়াকুদের সাথে, সাধারণ ছেলেমেয়েরাও প্রবল প্রত্যাশা নিয়ে এগোচ্ছে। লাখো ছেলেমেয়েদের মধ্যে কয়েক হাজার চান্স পাবে, বাকিরা একবার দুবার তিনবার চেষ্টা করবে, না পেলে বিফল মনোরথ হয়ে তারপর কোনো একটা কলেজে এসে ভর্তি হবে। এই যে ডাক্তার হওয়ার জন্য প্রাণপণ লডাই, এখানেও অনেক হিসাব নিকাশ আছে, স্ট্রাট্রজি তৈরি করার ব্যাপার আছে। এদের বেশিরভাগই বায়োলজি আর কেমিস্ট্রি ভালো করে পড়ে, কারণ নম্বর এখান থেকেই তুলতে হবে। ফিজিক্সে বেশি নম্বর উঠবে না, এটা ধরেই নেয়। আর, অঙ্ক নিলে তার পিছনে সময় ব্যয় করা স্ট্রাটেজির মধ্যে পড়ে না, শুনেছি কোচিং সেন্টারগুলোও এদের এই বুদ্ধি দেয়। কাজেই অঙ্কে ভীতিওলা ছেলেমেয়েরা, অথবা অঙ্কবর্জিত ছেলেমেয়েরা যখন পরে ডাক্তারিতে চান্স না পেয়ে কলেজে চলে আসে, তখন তাদের প্রথম প্রেফারেন্স কিছুতেই অঙ্ক নির্ভর বিষয়ের দিকে থাকবে না। বরং তারা বায়োলজি, জিওগ্রাফি এইসব বিষয় নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, মন্দের ভালো হিসাবে।
এখন কথা হলো, ফিজিক্সে ভরতি হওয়ার উৎসাহ কমে যাওয়ার জন্য এসবই কি কারণ? নিশ্চয়ই আরো কিছু ব্যাপার আছে। ইদানীং আরেকটা ডামাডোল তৈরি হয়েছে, স্কুলের চাকরিতে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে। একদল ছাত্রছাত্রীদের প্ল্যান ম্যাপ করা থাকে, গ্রাজুয়েশান, পোস্টগ্রাজুয়েশান করে বিএড ট্রেনিং নিয়ে স্কুলের চাকরি করার জন্য তৈরি হওয়া। যদিও কুড়ি লক্ষ পরীক্ষা দিলে কুড়ি হাজারের ভাগ্যে শিঁকে ছিড়বে। মানে এ এক লটারি পাওয়ার মত ব্যাপার! তবু প্রত্যাশা ঝুলে থাকে সামনে, একটা বিশ্বাস কাজ করে, পরিশ্রম করে যায় তারা, যদি মিলে যায় একবার! এই আশায় যে এখন ভাটা পড়েছে তা তো বলাই বাহুল্য!
কিন্তু, এইসব সামাজিক ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হলেই কি আবার ফিজিক্স পড়ার প্রবণতা বাড়বে? দেশে চাকরির জোয়ার বইলে, সরকারি নানান চাকরিতে নিয়মিত রিক্রুট হতে থাকলে, কলকারখানায় চাকরি বাড়লে কি আবার বিজ্ঞান পড়তে চাওয়া ছেলেমেয়েরা দলে দলে ফিজিক্স পড়তে আসবে? আমার তা মনে হয় না।
প্রথম কথা, এই যে উপরে যা যা র ললাম, তা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সরকারি চাকরি কমছে, আরো কমতে কমতে যে একদিন প্রায় শূন্য হয়ে যাবে না, তা বলা যাচ্ছে না। ওদিকে আধুনিক কলকারখানার গতিপ্রকৃতি, প্রোডাকশান মেথড পাল্টাচ্ছে, সেখানে লোক নিয়োগ কমতেই থাকবে। কারণ অটোমেশান, রোবট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব।
কর্পোরেটে যেসব চাকরি বেঁচে থাকবে তা মূলত কিছু বিক্রিবাটা, মেইন্টেনান্স এবং সার্ভিস-এর কাজ। এসবের জন্য হায়ার ফিজিক্স বা খুব বেশি বেসিক সায়েন্সের জ্ঞানের দরকার হয় না।
‘এ পড়ে আমার কী হবে?’
আসলে, পড়ার আনন্দে পড়া, এই বিষয়টাকে যদি এখন আলোচনার মধ্যে না রাখি, তবে এটুকু দেখি যে, ছাত্রছাত্রীরা একটা বিষয় পড়তে গিয়ে শুরুতেই ভাবতে থাকে, এটা পড়ে আমার কী হবে, এতে কি কিছু স্কিল ডেভেলপমেন্ট হবে যা দিয়ে আমার চাকরি হবে? বিষয়টা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। একে তো গুরুত্ব দিতেই হবে। আমি ফিজিক্স পড়াতে গিয়ে ক্লাসে এই বিষয়ে কিছু আলোকপাত করার চেষ্টা করি। যেমন ধরা যাক, একটা ডিফারেন্সিয়াল ইক্যুয়েশান নিয়ে বলতে গিয়ে, তার সলভ করার মেথড নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে, তার এপ্লিকেশান দেখাতে গিয়ে, ইক্যুয়েশন-এর মধ্যে বিউটি ও তাকে বিশ্লেষণ করার উপায় দেখাতে গিয়ে বলি, এই যে এতসব শিখলে, এতে আনন্দ পেলে, জ্ঞানলাভ হলো বটে, তাই বলে এটা শিখলেই কালকে এসব জানো বলে চাকরি পাবে না কিন্তু। তাহলে পড়বে কেন? এতে কি কোনো স্কিল তৈরি হলো? অবশ্যই একটা মস্ত স্কিল তৈরি হলো! অঙ্ক ও বিজ্ঞানের এইরকম একটা মেথড শেখার সাথে সাথে তোমরা শিখলে কী করে একটা কঠিন সমস্যার সমাধান করতে হয়, কীভাবে ভাবতে হয়, কীভাবে স্টেপ বাই স্টেপ এগোতে হয়। এর থেকে বড় ‘স্কিল’ আর কী হতে পারে? বস্তুত, এভাবে যে জ্ঞানের স্তর তৈরি হয়, চিন্তা-ভাবনার অভ্যাস তৈরি হয়, প্রবলেম সলভ করার স্কিল তৈরি হয়, নতুনভাবে কিছু করার একটা স্পৃহা তৈরি হয়, তা নিশ্চয়ই এই ফিজিক্স পড়ুয়াদের অনেকদূর এগিয়ে রাখবে।
শুধু বিজ্ঞান নয়, যেকোনো বেসিক সাবজেক্টই একটু গভীরে গিয়ে দেখলে, মন দিয়ে ভালোবেসে পড়লে তা আমাদেরকে অনেকদূর এগিয়ে দিতে পারে। এই বিশ্বাস রাখাটাও জরুরি। একটা জিনিস বোঝা যাচ্ছে, চাকরির বাজার আরো উদ্বায়ী হতে থাকবে, আর সেই নিত্য পরিবর্তনশীল বাজারে নিজেকে টিকিয়ে রাখার উপায় হলো নিজেকে সময়মতো নতুন করে আবিষ্কার করা। এই প্রসেসে আমাদের বেসিক নলেজ আর গভীর ভাবনার ক্ষমতাই হলো আসল স্কিল!
মুস্তাফা সুলেইমানের উদাহরণ
মুস্তাফা সুলেইমান-এর কথা ধরা যাক। সিরিয়া থেকে তাদের ফ্যামিলি ইংল্যান্ডে এসেছিলেন আগেই। মুস্তাফা ইউ কে-এর নাগরিক, ওখানকার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন নিয়ে পড়াশুনা করলেন । পড়াশুনা শেষে নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলেন, এরপর কী? কী নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত এই মুহূর্তে কোনদিকে এগোনো উচিত? ভেবে দেখলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে জানবেন, তা দিয়ে অনেক আপাতত অধরা কিছু সমস্যার উত্তর বার করবেন। ভাবনাটা খুব আন্তরিক হলে, সমাধান সম্ভব। এই বিশ্বাস থেকে কয়েকজন বন্ধু মিলে তৈরি করলেন ‘ডিপ মাইন্ড’ কোম্পানি। আমরা সকলেই জানি এই কোম্পানি পরে কত অসাধারণ প্রবলেমের সমাধান করেছিলো, কত বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছিলো। পরে অবশ্য গুগুল এই ডিপমাইন্ড-কে কিনে নেয়। আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখতে লাগলাম, গুগুলের এই ডিপমাইন্ড কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নানান অভিনব এলগোরিদম কাজে লাগিয়ে কীভাবে একের পর এক অসাধ্য সাধন করল। গো-এর মত অত্যন্ত জটিল বোর্ড গেম বুঝে ফেলে অপ্রতিরোধ্য হিউম্যান চ্যাম্পিয়ানদের হারিয়ে দেওয়া, আর তারপর আলফাফোল্ড দিয়ে দীর্ঘদিনের অপরাজেয় দুর্ভেদ্য এক জটিল বিষয়, প্রোটিন ফোল্ডিং-এর সমাধান করে ফেলা – এসবই সম্ভব হয়েছে মুস্তাফা সুলেইমানের বন্ধু ডিপমাইন্ডের ডেমিস হাসাবিসের নেতৃত্বে। ডেমিস হাসাবিস এইবার কেমিস্ট্রিতে তাঁর আলফাফোল্ড-এর কাজের জন্য নোবেল পুরষ্কার পেলেন। ডেমিস কিন্তু কম্পিউটার সায়েন্সের লোক। আরো একটা উদাহরণ হলো, জিওফ্রে হিনটন। তিনিও কম্পিউটার সায়েন্সের মানুষ অথচ নোবেল পুরস্কার পেলেন ফিজিক্সে। হিনটনও গুগুলে ছিলেন এবং কিছুকাল আগে গুগুল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। এখানে দুটো জিনিস লক্ষণীয়। অন্য সাবজেক্ট থেকে এসে ফিজিক্স এবং কেমিস্ট্রিতে নোবেল পুরষ্কার পাওয়া এবং গুগুলের মতো কর্পোরেট থেকে নোবেল পাওয়া। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমাদের ফিজিক্স কমিউনিটিকে, ইউনিভার্সিটি, কলেজের অধ্যাপক ও কর্তাব্যক্তিদের ভাবতে হবে বৈকি। আগামীদিনে আমরা কীভাবে ফিজিক্স পড়বো বা পড়াবো তাই নিয়ে সিরিয়াস আলোচনা হওয়া দরকার।
নতুন শিক্ষাব্যবস্থা
কথা হলো, শত শত বছর ধরে চলে আসা এই যে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা, এই নলেজ সিস্টেম, এ কি একইরকম থাকবে, নাকি দ্রুত কোনো পরিবর্তনের দিকে যাবে? আমরা কি প্রস্তুত তার জন্য?
সরকারি নতুন এডুকেশান পলিসিতে হরেক বিষয়ের বন্যা বইয়ে দেওয়া হয়েছে। সেমিস্টার সিস্টেম, অজস্র বিষয় ও তার নামকরণ। মেজর, মাইনর, এস ই সি, এম ডি সি/ আই ডি সি, ভ্যালু এইডেড সাবজেক্ট, এ ই সি সি, ডি এস ই, এসব নামের আড়ালে অনেকরকম বিষয়ের সাথে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার একটা উদ্দেশ্য হয়ত আছে, কিন্তু আদতে যে ছেলেমেয়েরা কোনকিছুই ঠিক করে শিখে উঠতে পারছে না, তা তো খালি চোখেই দেখতে পাচ্ছি। কিছু নাম অবশ্যই শিখছে, কিছু মুখস্থ করছে, এদিক থেকে ওদিকে হরেকরকম ক্লাসের জন্য ছোটাছুটি করছে, কিন্তু দিনের শেষে সবকিছু থেকে কোনো স্কিল তৈরি হচ্ছে কি? কিছু ভাবনাচিন্তা করার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে কি? বিষয়ের উপর দক্ষতা, কনফিডেন্স বাড়াতে পারছি কি আমরা? এই প্রশ্নগুলো করা এখন বিশেষ জরুরি।
জেনেছি, ইঞ্জিনয়ারিং কলেজগুলোতেও ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টগুলোর বনেদ তৈরির জন্য যে ফিজিক্স ও অঙ্ক শেখানো হয় প্রত্থমদিকে, তার গুরুত্ব কমানো হচ্ছে। কারণ হয়ত তাদের মনে হয়েছে, ওসব শিখিয়ে লাভ হবে না। তারচেয়ে কিছু ফর্মূলা আর কিছু নাম শিখিয়ে দিলে ওরা শেষ পর্যন্ত ইন্টারভিউতে উতরে যাবে, তারপর কোম্পানি বুঝে নেবে। এভাবেই সর্বনাশ ডেকে আনছি আমরা।
তাহলে কি যেভাবে ফিজিক্সের কারিকুলাম ডিজাইন করে এসেছি সেভাবেই চলবে? আমার মনে হয়, এখানে আমাদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। আগামীদিনের নিউ ওয়েভ কি? মনে করা যাক তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডাটা সায়েন্স এবং সিন্থেটিক বায়োলজি। এসব এক জায়গায় গিয়ে মিলছে। অসম্ভব সব কাজ হচ্ছে আর আমাদের সমাজে, আমাদের সংস্কৃতিতে, পড়াশোনায় তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। এখন প্রশ্ন হলো, আমাদের চিরপুরাতন বেসিক সায়েন্স-এর বিষয়গুলোর অভিমুখ কি এইসব দিকে একটু ঘোরানো যায়? আমরা কি কোয়ান্টাম মেকানিক্স এমনভাবে পড়াতে পারি যাতে ছেলেমেয়েরা কোয়ান্টাম ইনফরমেশন, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এইসব দিকের গবেষণায় বা ইনোভেশানে সহজেই অংশগ্রহণ করতে পারে?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডাটা সায়েন্স নিয়ে চর্চা করতে গিয়ে দেখেছি, এইসব এরিয়াতে যা দরকার তা হলো লিনিয়ার এলজেবরা, একটু ক্যালকুলাস, একটু স্ট্যাটিস্টিক্স-এর জ্ঞান আর এলগোরিদম বোঝার ক্ষমতা, পাইথন-এর মতো সহজ একটা কম্পিউটার ল্যাঙ্গোয়েজ শিখে ফেলা। ব্যস! এর থেকে বেশি কিছু নয়। এসব বিষয়ের অনেকটাই তো বেসিক সায়েন্স, বিশেষ করে ফিজিক্সের কর্মকান্ডের সাথে সংপৃক্ত। তাহলে, আমরা কি পারবো নতুনরকম কিছু ভাবতে?
মূল কথা হলো, বেসিক সায়েন্সের চর্চায় গলদ থাকলে বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে কেরিয়ার তৈরি করা, ইনোভেশান করা বা নিজের অস্তিত্বকে টিঁকিয়ে রাখা কঠিন হবে। অন্যদিকে দেশও রসাতলে যাবে। শুধু উপর উপর কিছু জেনে আর টেকনোলজি কিনে একটা জাতির বা একটা দেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক বাজারে মাথা উঁচু করে টিকে থাকা সম্ভব নয়। অন্যদিকে নতুন নতুন টেকনোলজির সাথে সাথে আমাদের এগোতে হবে। সেখানেও অংশগ্রহণ করতে গেলে আমাদের অভিমুখ বেসিক সায়েন্স, বিশেষ করে ফিজিক্স-এর মতো সাবজেক্টের দিকে ঘোরাতেই হবে।