লেন্স পার্ডো এবং সিজার জিমেনো। দুই ভ্রমণকারী পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন জাবিয়ায়। স্পেনের উপকূলবর্তী অঞ্চলের একটি ছোট্ট শহর। ভূমধ্যসাগরের ওপর। ভ্রমণার্থীদের জন্য শহরটিকে স্বর্গ বলা হয়। পার্ডো এবং জিমেনো, দু’জনেই ভালবাসেন সমুদ্রে ‘ফ্রি-ডাইভিং’ করতে। অপেশাদার, কিন্তু সমুদ্রে গেলেই দু’জনের সঙ্গেই থাকে স্নোরকেলিং-এর যন্ত্র, মানে ডুব সাঁতারে সমুদ্রের তলায় গেলে ডাইভারদের সঙ্গে যে নল আর অক্সিজেন সিলিন্ডারটি থাকে।
দু’জনেই নেমেছিলেন ভূমধ্যসাগরে। অনেকটা নীচে এবং জাবিয়ায় তাদের থাকার জায়গা থেকে অনেকটা দূরেও চলে গিয়েছিলেন তারা। সেখানেই প্রথম চোখে পড়ে পার্ডোর। চকচকে একটা মূদ্রার! সোনার মূদ্রা! পরিষ্কার করার পর দেখা গিয়েছিল মূদ্রায় রয়েছে কোনও রোমান রাজার মুখ! ১৫০০ বছরের পুরনো সোনার মূদ্রা, যার সময়কাল ৩৬৪ থেকে ৪০৮ এডি! মানে খ্রীষ্টের জন্মের ৩৫০ থেকে ৪০০ বছর আগের সোনার মূদ্রা! ৩৯৫ এডি-তে রোমান সাম্রাজ্য ভাগ হয়ে যায় দু’ভাগে। পশ্চিম এবং পূর্ব রোম। পশ্চিম রোমের রাজধানী ছিল রোম। পার্ডো আর জিমেনোর উদ্ধার করা সোনার মূদ্রার সময় যা দেখিয়েছে তাতে প্রত্নতত্ববিদরা বলছেন পশ্চিম রোমের পতন শুরু হয়েছে সেই সময় থেকে।
পার্ডো আর জিমেনো ৮টি সোনার মূদ্রা পেয়েছিলেন সেদিন। উত্তেজিত, একইসঙ্গে রোমাঞ্চিত দু’জন ৮টি মূদ্রা একটি গ্লাসে জলের মধ্যে ডুবিয়ে রেখে পরেরদিনই ফোন করেছিলেন স্পেনের আলেকান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ববিদদের। তারপরই জাবিয়ার সমুদ্রে নামে ওখাঙ্কার সিভিল গার্ডের একটি দল আর প্রত্নতত্ববিদদের পাঠানো ডুবুরিরা। খননকার্য চালিয়ে তোলা হয়েছিল ৫৩টি সোনার মূদ্রা। প্রত্যেকটি মূদ্রার ওপর পশ্চিম রোমের কোনও না কোনও সম্রাটের মুখ।
প্রত্নতত্ববিদরা জানিয়েছেন, রোমান সাম্রাজ্যের সময়কার সোনার মূদ্রা এর আগেও পাওয়া গিয়েছে। নয় মাটির তলায়, নয়তো সমুদ্রের নীচে। কিন্তু এত বড় পর্যাযের আবিষ্কার হয় নি এর আগে! আধুনিক যুগের ‘গোল্ড রাশ’ সম্পর্কে কী বলছেন দুই অপেশাদার আবির্ষ্কতা? জিমেনোর সহাস্য জবাব, “তাই তো বলা বয়, যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই!”