বৈজ্ঞানিক মহাশক্তি চীন

বৈজ্ঞানিক মহাশক্তি চীন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ জুন, ২০২৫

গত এক দশকে চীন বিজ্ঞান চর্চার ‘সুপারপাওয়ার’ হয়ে উঠেছে। চীন এখন শুধু গবেষণার জন্য খরচ করছে না, সোজা ভাষায় ‘বিজ্ঞানী কিনছে’। চীনের ল্যাবগুলিতে ভিড় জমাচ্ছেন নোবেলজয়ী, ম্যাকআর্থার ‘জিনিয়াস’ অনুদান প্রাপক থেকে শুরু করে হার্ভার্ড-হিউস পুষ্ট বিজ্ঞানীরা। তাঁদের অনেকে আমেরিকা ছেড়ে এসেছেন। জোর করে নয় বা চুপিচুপি দেশ থেকে পালিয়ে নয়- একেবারে খোলা প্রস্তাব পেয়ে। এর পিছনে বড় কারণ, আমেরিকায় গবেষণার বাজেট ছাঁটাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা ঘষে যাওয়া আর চীনা ছাত্রদের ভিসা বাতিলের হুমকি পাওয়া। চীনা বিজ্ঞানীরা আমেরিকায় জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। তাঁদের উপর নজরদারি, তদন্ত, এমনকি গ্রেফতারিও চলেছে। এরপরেই চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি খুলে দেয় নতুন দরজা। হংকং, শি’আন, হাংজৌ সবখানেই বিদেশফেরতদের সাদরে বরণ করা হয়। ওয়েস্টলেক ইউনিভার্সিটি চীনের এই নতুন যুগের বিজ্ঞানের মডেল। ২০১৮-তে এর যাত্রা শুরু। এর ক্যাম্পাসটিকে বলা যায় ‘জীবন্ত কোষ’। কেন্দ্রভাগে ঘাসের লন, চারপাশে রিসার্চ টাওয়ার, কম্পিউটিং সেন্টার, অ্যানিম্যাল টেস্টিং ল্যাব-সব যেন একটাই কোষের বিভিন্ন উপাঙ্গ। এখানে পড়াচ্ছেন ড. গুয়ান কুনলিয়াং (ম্যাকআর্থার গ্র্যান্ট বিজয়ী), ড. চেং জিয়ানজুন (একাধিক বার ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন পুরস্কৃত), ড. ইউ হংতাও (হার্ভার্ড-শিক্ষিত, হাওয়ার্ড হিউজ ফান্ডেড)। ২০২১-এর মধ্যে প্রায় ১২,৫০০ চীনা বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী আমেরিকা ছেড়ে চীনে ফিরেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গতি থেমে নেই, বরং বাড়ছে। তবে শুধু চীনা বিজ্ঞানীরা নয়, চার্লস লাইবারের মতো প্রাক্তন হার্ভার্ড রসায়নবিদও এখন সিঙহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। তথ্য বলছে, ২০০৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত আমেরিকায় বিজ্ঞান প্রযুক্তি, গণিত আর অর্থনীতির পিএইচ ডিদের, ৮৭% সেখানে থেকে যেতো। এখন তারা ফিরছেন – অর্থ পুরস্কার পেয়ে, গবেষণার স্বাধীনতা, আবাসন ভর্তুকি সমস্তটা নিয়ে। গবেষণা খাতে চীনের ব্যয় এখন পৃথিবীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং কৃবু (এ আই), বায়োটেকনোলজি, সেমিকন্ডাক্টর-এসব অতি প্রয়োজনীয় কৌশলগত ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে চায় তারা। রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিং বলেই ফেলেছেন, “বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিপ্লব হল মহাশক্তিদের খেলার অংশ।” তবে চীনেও আছে ভিসা জটিলতা, অভ্যন্তরীণ হিংসা, রাজনৈতিক চাপ। তবু অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, “আমরা রাজনীতি করতে আসিনি, আমরা শুধু বিজ্ঞান করতে চাই। আর সেটা এখন করা সবচেয়ে সহজ চীনে।” যেখানে বিজ্ঞানী নিরাপদ, যেখানে গবেষণা মুক্ত, যেখানে বিজ্ঞানকে মদত দেওয়া হয়, সেখানেই জন্ম নেয় ভবিষ্যতের প্রযুক্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − 6 =