বোনোবোদের উচ্চারিত ‘বাক্যাংশ ‘

বোনোবোদের উচ্চারিত ‘বাক্যাংশ ‘

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

মানব প্রজাতির নিকটতম জীবিত আত্মীয় বোনোবো। এরা এমন কণ্ঠস্বর সমন্বয় তৈরি করে, যা লক্ষ লক্ষ বছর আগে বিকশিত মানুষের ভাষার সদৃশ। জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মানুষের ভাষার স্বতন্ত্রতা সংক্রান্ত দীর্ঘস্থায়ী বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। ভাষার কিছু মূল বৈশিষ্ট্যের গভীর বিবর্তনীয় শিকড় সম্পর্কে এই গবেষণা অনেক অদ্ভুত তথ্য দেয়। এই কাজটির জন্য গবেষকরা কঙ্গোর কোকলোপোরি কমিউনিটি রিজার্ভের বাসিন্দা বোনোবোদের উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। ভাষাতত্ত্ব থেকে অভিযোজিত উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করে দলটি দেখিয়েছে যে বোনো বোদের কন্ঠ-যোগাযোগ, মানুষের ভাষার মতনই রচিত হয়েছে। রচনাত্মক দিক বলতে বোঝায় , অর্থপূর্ণ উপাদানগুলিকে বাক্যাংশে একত্রিত করার ক্ষমতা, বিভিন্ন অর্থপূর্ণ পৃথক পৃথক অংশগুলিকে মিশিয়ে একটি সামগ্রিক অর্থবহ বাক্যে রূপান্তরিত করা। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ‘স্বর্ণকেশী নৃত্যশিল্পী’ বলতে এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝানো হয় যিনি স্বর্ণকেশী এবং নৃত্যশিল্পী উভয়ই। আবার ‘খারাপ নৃত্যশিল্পী’ বলতে যা বোঝায় তা হল – যিনি একজন নৃত্যশিল্পী এবং নর্তকী হিসেবে তিনি খারাপ। এ ক্ষেত্রে ‘খারাপ’ শব্দটির স্বাধীন কোনো অর্থ নেই। মানুষের শব্দের অর্থ পরিমাপ করার জন্য ভাষাবিদদের দ্বারা উদ্ভাবিত একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করে, গবেষকরা বোনোবোদের ডাকের এক ধরনের অভিধান তৈরি করতে পেরেছেন। যাতে তাদের ব্যবহৃত অর্থের একটি সম্পূর্ণ তালিকা রয়েছে। জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী এবং প্রধান গবেষক মেলিসা বার্থেট একথা জানান। একক বোনোবোদের কণ্ঠস্বরের অর্থ নির্ধারণের পর, গবেষকরা ভাষাতত্ত্ব থেকে ধার করা আরো একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে, ডাকের সংমিশ্রণ অনুসন্ধানের দিকে এগিয়ে যান। সহকারি গবেষক, সাইমন টাউনসেন্ড জানান, “আমরা এই পদ্ধতির সাহায্যে একে অপরের সাথে বোনোবোরা কিভাবে যোগাযোগ করে তা পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছি”। তাদের অসংখ্য ডাক- সংমিশ্রণ খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা, যেগুলির অর্থ তাদের একক অংশগুলির অর্থের সাথে সম্পর্কিত। ঠিক এইখানেই রচনাত্মক একটি মূল বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। কিছু ডাক -সংমিশ্রণ, মানুষের ভাষার মতোই জটিল এবং রচনামূলক কাঠামোর সাথে বিশেষ সাদৃশ্যপূর্ণ। এই গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য হল ভাষার রচনাগত প্রকৃতির বিবর্তনীয় শিকড়ের উপর সম্ভাব্য আলোকপাত করা। মানুষ এবং বোনোবোদের কোটি কোটি বছর আগে একটি অভিন্ন প্রজন্ম ছিল। তাই বংশগতভাবে তাদের মধ্যে অনেক বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে। ভাষাগত রচনাত্মক বৈশিষ্ট্য হয়তো তারই মধ্যে একটি। “আমাদের পূর্বপুরুষরা কমপক্ষে ৭০ মিলিয়ন বছর আগে ব্যাপকভাবে এই ভাষার রচনাত্মক বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করেছিল”, টাউনসেন্ড বলেন। গবেষণাটি থেকে আরও দেখা যায় যে ছোট কন্ঠ দিয়ে একক থেকে জটিল অর্থ তৈরি করার যে ক্ষমতা তা মানুষের ভাষার আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। এমনকি যা ধারণা করা হয়েছিল, তার থেকে অনেক বেশি মিল পাওয়া যায় মানুষের ভাষা এবং বোনোবোদের ডাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − five =