ব্যতিক্রমী গাছ ও বনায়ন

ব্যতিক্রমী গাছ ও বনায়ন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ জুলাই, ২০২৫

কেবলমাত্র কাঠ আহরণের দিকে নজর দিয়ে বন সংরক্ষণ করলে চলবে না। কারণ প্রকৃতি তার নিজের ছন্দেই সংরক্ষিত হয়। একদিকে যেমন কাঠের চাহিদা রয়েছে তেমনই বাঁচাতে হবে সবুজকেও। এই দুইয়ের মাঝে এক নতুন ভাবনা উঠে আসছে—Retaining Forestry বা বনায়ন ধরে রাখা। অর্থাৎ কোন গাছ কাটব কেবল সেটাই দেখা নয় বরং কোন গাছগুলি কাটলে তা থেকে আবার গাছ তৈরি হবে- সেটাই বাছাই করতে হবে। এই ধারণা থেকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এমন কিছু গাছকে যেগুলো কাটার পরেও বনে থেকে যায়। এগুলোর মধ্যে থাকে রোগাক্রান্ত, গর্তওয়ালা, এমনকি আধা-মরা গাছও। এরা পাখি, পোকা ও আরও অনেক প্রাণীর আশ্রয়স্থল। তবে জৈবিক উত্তরাধিকার-এর জন্য সব গাছ রেখে দিলেই তা ভবিষ্যতের জন্য যথেষ্ট হবে না। কারণ অনেক সময় এসব গাছ বড় হয় না। দুর্যোগে পড়ে মরেও যায়। তাই বিজ্ঞানীরা ভাবছেন ব্যতিক্রমী গাছগুলির কথা। যাৱা বড়, শক্তপোক্ত, দীর্ঘজীবী, যারা প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও দাঁড়িয়ে থাকে, বেঁচে থাকে। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার রেড উড বনগুলিতে চালিত এক গবেষণায় এমন ব্যতিক্রমী গাছের খোঁজ চালান গবেষকরা। তাঁরা ২০টি জায়গায় খুঁজে পেয়েছেন বিশাল ডালপালা ও চওড়া চূড়াওয়ালা গাছ। যেগুলি আশেপাশের গাছগুলির চেয়ে অনেক বড় ও পুরোনো। তারা এই গাছগুলিতে উঠে নমুনা সংগ্রহ করেন। স্ক্যান করেন আকাশ বেয়ে ‘লিডার প্রযুক্তি’ মারফত। লিডারপ্রযুক্তিতে লেজার রশ্মি ব্যবহার করে বস্তুর দূরত্ব এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করা হয়। তাঁরা এমনকি মাটিতে দাঁড়িয়েও গাছগুলির মাপজোক করেন। এরপর তারা তৈরি করেন এক নতুন প্রযুক্তি—Tree Approximate Object । এটি একটি উদ্ভিদ আর তার আশেপাশের ছোট উদ্ভিদকে একসাথে বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে। এইভাবে তারা শনাক্ত করেন ‘সবচেয়ে আলাদা’ গাছগুলিকে। যেগুলোর মাথা অন্যান্য ৯৫% গাছের চেয়ে উঁচু। গবেষণা থেকে যে যে তথ্য মূলত উঠে আসে, তা হল এই বনগুলিতে ছোট গাছ বেশি। কিন্তু জীববস্তু (বনের ওজন বা শক্তি মজুত) কম। ব্যতিক্রমী গাছগুলি শত শত বছরের পুরোনো। কাঠ কাটার পরও তারা বেঁচে ছিল, আবার বেড়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, এরা অনেক দ্রুত বাড়ছে এবং জলের ধারে, নীচু জায়গায় বেশি জন্মাচ্ছে।জলের ধারের এলাকাগুলিতে কাঠ কাটা নিষিদ্ধ, তাই সেখানে বড় গাছ বেঁচে যায়, আশ্রয় দেয় আরও জীবজগতকে। সুতরাং সব গাছ সমান নয়। কিছু গাছ পুরো বনের ভার ধরে রাখে। তাই ব্যতিক্রমী গাছগুলিকে চিনে রাখতে হবে- ভবিষ্যতের স্বার্থে।

সূত্র : Forest Ecology and Management (2025)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − three =