ব্যবহার করে ফেলে দিলে এই প্লাস্টিক নিজেকেই ধ্বংস করবে

ব্যবহার করে ফেলে দিলে এই প্লাস্টিক নিজেকেই ধ্বংস করবে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩১ আগষ্ট, ২০২৪
প্লাস্টিক নিজেকেই ধ্বংস করবে

বিজ্ঞানীরা এমন এক ‘জীবন্ত প্লাস্টিক’ তৈরি করেছেন যার মধ্যে থাকা উপাদান প্লাস্টিককে ধ্বংস করে ফেলে। পচন প্রক্রিয়ায় এটা এক মাসের মধ্যে ভেঙে যায়, এর গতানুগতিক সংস্করণের একই পরিস্থিতিতে পচতে ৫৫ দিন সময় লাগত। ২০১৬ সালে জাপানে প্লাস্টিক-মাঞ্চিং ক্ষমতা আছে এমন এক প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কৃত হয়। বিগত কয়েক বছরে বিজ্ঞানীরা আরও বেশ কয়েকটা ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি খুঁজে পেয়েছেন যারা প্লাস্টিক খাওয়ার জন্য নিজেদের এনজাইম বিবর্তিত করেছে। এই প্রাকৃতিক প্রোটিন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কৃত্রিম সংস্করণ তৈরি করা হয়েছে, যা আরও সহজে বর্জ্য ধ্বংস করে। সিন্থেটিক বায়োলজিস্ট চেনওয়াং ট্যাংয়ের নেতৃত্বে চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেস (সিএএস) এর গবেষকরা এমন ব্যাকটেরিয়া স্পোর তৈরি করেছেন, যা পলিক্যাপ্রোল্যাকটোন (পিসিএল) প্লাস্টিকের গঠনে এনজাইম নিঃসরণ করে। যখনই প্লাস্টিক ক্ষয় হতে শুরু করে, তখন এই মুক্ত এনজাইমগুলো প্লাস্টিক ধ্বংস করতে শুরু করে। প্রোটিনের বড়ো, জটিল গঠনের জন্য এনজাইমগুলো অস্থির, ভঙ্গুর হয়। তাই গবেষকরা বার্খোল্ডেরিয়া সিপাসিয়া (BC) নামক ব্যাকটেরিয়ার লাইপেজ এনজাইম জিন ইঞ্জিনিয়ারিং করে, ব্যাসিলাস সাবটিলিস নামে আরেকটা জীবাণুর ডিএনএ-তে প্রবেশ করিয়েছেন। কারণ ব্যাসিলাস সাবটিলিস-এর স্পোর উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপে নষ্ট হয়না।
যখনই প্লাস্টিকের পৃষ্ঠতল ক্ষয় হয়, ব্যাসিলাস সাবটিলিস-এর স্পোর অঙ্কুরিত হতে শুরু করে। এটা থেকে ব্যাকটেরিয়া বার্খোল্ডেরিয়া সিপাসিয়া-র লাইপেজ এনজাইম নিঃসৃত হয়ে প্লাস্টিকের ক্ষয় শুরু হয়। এর মধ্যে ক্যান্ডিডা অ্যান্টার্ক্টিকা নামে ইস্টের লাইপেজ যুক্ত করলে এক সপ্তাহের মধ্যে প্লাস্টিক ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু প্রথাগত পদ্ধতিতে প্লাস্টিক ৩ সপ্তাহ পরেও থেকে যায়। পরীক্ষাগারে দেখা গেছে ৩০০০ সেলসিয়াসে স্পোরযুক্ত প্লাস্টিক আলো ছড়াচ্ছে। অর্থাৎ স্পোরগুলো জীবন্ত থাকছে, আর প্লাস্টিকের ক্ষয় শুরু হলে তারা কাজ শুরু করে। সিএএস ল্যাবের আবিষ্কৃত ‘জীবন্ত প্লাস্টিক’ সোডাতে ৬০ দিন অবধি নষ্ট হয়না, অ্যান্টিবায়োটিক যোগ না করলেও সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। বিগত কুড়ি বছরে প্লাস্টিক তৈরি দ্বিগুণ বেড়ে গেছে যা পরিবেশের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক। কিন্তু ভাইরাসের স্পোর সহ এই জীবন্ত প্লাস্টিক প্রাকৃতিকভাবে বিনষ্ট হলে, আমাদের পরিবেশ দূষণ ঘটাবেনা। এই গবেষণা নেচার কেমিক্যাল বায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।