ব্যাঙের বাদ যাওয়া পায়ের ‘পুনর্জন্ম’

ব্যাঙের বাদ যাওয়া পায়ের ‘পুনর্জন্ম’

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ জানুয়ারী, ২০২২

অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন আমেরিকান গবেষকরা। একটি ব্যাঙের বাদ যাওয়া পায়ের’পুনর্জন্ম’ দিলেন তাঁরা। মোট পাঁচটি ড্রাগের সংমিশ্রণে নতুন করে সেই ব্যাঙের পা তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। আফ্রিকান ক্লওড ফ্রগের উপরে এই পরীক্ষাটি চালানো হয়েছিল।
কখনও কী ভেবে দেখেছেন, কোনও পশু বা পাখি বা সরীসৃপ, এমনকি মানুষের শরীরের কোনও অঙ্গ বাদ গেলে, তা যদি আবার নতুন করে তৈরি করা যেত? বিজ্ঞানসম্মত উপায়েই যদি তা তৈরি করা যায়, কেমন হয় তাহলে? এমনই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন আমেরিকান গবেষকরা। একটি ব্যাঙের বাদ যাওয়া পায়ের’পুনর্জন্ম’ দিলেন তাঁরা। মোট পাঁচটি ড্রাগের সংমিশ্রণে নতুন করে সেই ব্যাঙের পা তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। আফ্রিকান ক্লওড ফ্রগের (African Clawed Frog) উপরে এই পরীক্ষাটি চালানো হয়েছিল। এই ধরনের বিশেষ আফ্রিকান প্রজাতির ব্যাঙের বিজ্ঞানসম্মত নাম জ়েনোপাস লেভিস (Xenopus Laevis)। আঘাতের কারণে এই ব্যাঙটির পা বাদ পড়ে গিয়েছিল। এবার এই পরীক্ষাটি স্তন্যপায়ী (Mammals) প্রাণীর উপরেও চালিয়ে দেখতে চান বিজ্ঞানীরা।
সংবাদমাধ্যম ডেলি মেল-এর একটি রিপোর্ট থেকে এই খবরটি জানা গিয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাঙটির সেই আঘাতপ্রাপ্ত অংশটি একটি সিলিকন ক্যাপের মধ্যে রাখা হয়। আর সেই সিলিকন ক্যাপের মধ্যে পাঁচটি ওষুধের ককটেল রেখে দেওয়া হয়েছিল, যেগুলি প্রোটিন জেলে ভরপুর। মূলত যে পাঁচটি ড্রাগ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি হল, মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভূত নিউরোট্রপিক ফ্যাক্টর, ১,৪-ডাইহাইড্রোফেননথ্রোলিন-৪-ওয়ান-৩ কার্বক্সিলিসিড, রেজ়লভিন ডি ৫, গ্রোথ হরমোন এবং রেটনোয়িক অ্যাসিড। প্রত্যেকটি ড্রাগের কাজ আলাদা আলাদা। প্রদাহ কমানো, স্নায়ু ফাইবার, রক্তনালী ও পেশির বৃদ্ধিতে সহায়ক ফর্মুলা দেওয়া হয়েছিল।
সংবাদমাধ্যম ডেলি মেল-এর রিপোর্টে ওই গবেষকদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ব্যাঙটির নতুন করে পা গজানোর প্রক্রিয়াকরণ শুরুর কয়েক প্রহর আগে ‘বায়ো ডোম’গুলিকে ২৪ ঘণ্টার জন্য ওই দ্রবণে সিল করা হয়েছিল। আগের মতো এক্কেবারে নতুন পা তৈরি হতে সময় লেগেছিল ১৮ মাস। এই গবেষণাটি করেছেন টাফ্টস ইউনিভার্সিটি অফ মেডফোর্ড, ম্যাসাচুসেটস এবং হার্ভাড ইউনিভার্সিটির অধীনস্থ বস্টনের উইস ইনস্টিটিউটের গবেষকরা। গবেষকরা দাবি করেছেন যে, এই পদ্ধতিটি তাঁদের মানুষের জন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরির লক্ষ্যের অনেকটাই কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, এটি একটি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাঙ। আর সেই কারণে তা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পুনরুদ্ধারে অক্ষম। কিন্তু পরীক্ষায় আশ্চর্যজনক ভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছে যে, হাড়যুক্ত পা যেখানে দেওয়া সম্ভব নয়, ঠিক সেখানেই নিখুঁত ভাবে হাড়হীন পায়ের আঙ্গুল গজিয়েছে। আফ্রিকার এই বিশেষ ব্যাঙের প্রজাতি অর্থাৎ ক্লওড ফ্রগের পায়ের পাতা জোড়া থাকে। ঠিক যেমনটা অন্যান্য ব্যাঙ বা হাঁসের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। সেই পায়ের পাতাটিও গজিয়েছে এই ব্যাঙের। আবার আগের মতোই দিব্যি সাঁতারও কাটতে পারছে ব্যাঙটি।
গবেষণার মূল লেখক নিরোশা মরুগান দাবি করেছেন, “কয়েক মাসব্যাপী পুনর্জন্ম প্রক্রিয়াকে গতিশীল করার জন্য কেবল মাত্র ওষুধের সংক্ষিপ্ত এক্সপোজারের প্রয়োজন হয়েছিল। আর এখান থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, ব্যাঙ এবং সম্ভবত অন্যান্য প্রাণীর সুপ্ত পুনরুত্পাদন ক্ষমতা থাকতে পারে।” যদিও মানুষের এই ক্ষমতা নেই। একমাত্র ৫০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত লিভারই পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। ব্যাঙ ছাড়াও স্যালাম্যান্ডার, স্টারফিশ, কাঁকড়া, টিকটিকি-সহ একাধিক প্রাণীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পুনরুৎপাদন করার ক্ষমতা রয়েছে। আবার ফ্ল্যাটওয়ার্মের মতোও কিছু প্রাণী আছে যাদের টুকরো টুকরো করলে, প্রতিটি টুকরো থেকেই নতুন জীবের জন্ম হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × three =