দক্ষিণপূর্ব রাশিয়ায় অন্তত দুটি আদিম অনুষ্ঠানের প্রত্নতাত্ত্বিক চিহ্ন মিলেছে। এতদিন প্রাচীন গ্রন্থাবলি থেকে জানা যেত আদিম বালকযোদ্ধাদের কথা। এতদিনে এই তথ্যের পক্ষে মিলল প্রমাণ।
আজ থেকে ৩,৯০০ বছর আগে, ব্রোঞ্জ যুগে, এমনই এক বিচিত্র অনুষ্ঠান প্রচলিত ছিল ইন্দো ইউরোপীয় সভ্যতায়। বয়ঃসন্ধির বালকেরা এই অনুষ্ঠানের নিয়ম মেনে কুকুর অথবা নেকড়ে আহার ক’রে যোদ্ধা হিসেবে গণ্য হত। নিউ ইয়র্কের হার্ট ইউক কলেজের ডেভিড অ্যানটনি ও ডোরকাস ব্রাউন, নেকড়েমানব সংক্রান্ত প্রত্নচিহ্ন আবিষ্কারের কথা সম্প্রতি ‘জার্নাল অব অ্যানথ্রপোলজিকাল আরকিওলজি’ পত্রিকায় জানিয়েছেন।
ব্রোঞ্জযুগের এই বালক যোদ্ধাদের নাম দেওয়া হত কুকুর অথবা নেকড়ের নামে। তারা কুকুর বা নেকড়ের ছাল পরত এবং বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে তাদের মাংসও খেত। এমনটাই মত এই দুই প্রততাত্ত্বিকের। যদিও এই মতের বিরুদ্ধেও উঠেছে প্রশ্ন। লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের ভালডার লিন্ডেন বলেনঃ ইন্দো-ইউরোপীয়ান পুরাণ অনুসারে বড়জোর এটুকু বলা যায়, ব্রোঞ্জ যুগের মানুষ কুকুরকে জাদুশক্তির আধার ভাবত এবং কখনোসখনো আহারও করত। ‘কিন্তু নেকড়েমানব যোদ্ধা? এই তত্বের পক্ষে প্রমাণ কোথায়?’ প্রশ্ন তুলছেন তিনি।
আবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল উইৎজেল এই মতের পক্ষে জানিয়েছেন তাঁর সমর্থন। ‘অ্যান্টনি ও ব্রাউন ঠিকই শণাক্ত করেছেন নেকড়েমানব যোদ্ধাদের’, বলছেন তিনি।
১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল অবধি প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযান চলেছিল রাশিয়ার ক্রাজনোসামার্কস্কো-তে। অভিযাত্রীরা অন্তত ২৭৭০টি কুকুরের হাড় খুঁজে পান যেখানে নেকড়ের সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে কম- মাত্র ১৮টি। কুকুরগুলির মাথা দেহ থেকে ধারালো কিছুর আঘাতে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। আগুনে ঝলসানোর চিহ্নও পাওয়া যায় পশুগুলির হাড়ে। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে আহার করার জন্যই এই পশুদের ব্যবহার করা হত, মত অভিযাত্রীদের।
শ্রুবনায়া অঞ্চলে একটি অতিপ্রাচীন সমাধিস্থলে মিলেছে কয়েকটি মানবদেহের অস্থি। এদের মধ্যে আছে দুটি পুরুষ, দুটি নারী, লিঙ্গনির্ধারণ করা সম্ভব নয় এমন এক প্রাপ্তবয়স্ক এবং ২২টি শিশু যাদের বেশিরভাগের বয়স ১ থেকে ৭-এর মধ্যে। নেকড়েমানব যোদ্ধা তত্ত্বের সাথে সম্পর্ক আছে এই দেহগুলির, জানাচ্ছেন দুই প্রত্নতাত্ত্বিক।