বেশিরভাগ ছায়াপথ বা গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকে একটি করে ব্ল্যাক হোল, এটা আমরা অনেকেই জানি ওই ব্ল্যাক হোল এক অদৃশ্য রাক্ষুসে খাদক, যে তার নাগালে যা কিছু পায়, গিলে নেয় সবকিছুই, এমনকি আলো পর্যন্ত। তার কাছে গেলে আলোও ফিরে আসতে পারে না, তাই সে খালি চোখে অদৃশ্য। এক একটা ব্ল্যাক হোলের ভর যেমন প্রচণ্ড বেশি হতে পারে, তেমনই তার ঘনত্ব হতে পারে অকল্পনীয় রকমের বেশি। এক চামচ ব্ল্যাক হোল আমাদের গোটা পৃথিবীর চেয়েও বেশি ভারী হতে পারে। আরও একটা হিসেব বলে যে দশ লক্ষ সূর্যের সমান ভরবিশিষ্ট একটা ব্ল্যাক হোলের আয়তন হতে পারে এই সৌরমণ্ডলের সমান।
ব্ল্যাক হোল যখন কিছু খায়, সেই খাওয়ার পরে তার চেহারার কী পরিবর্তন ঘটে? এই প্রশ্নেরও উত্তর বিজ্ঞানীরা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সম্প্রতি। তাঁদের সেই গবেষণার ফলাফল নামী জার্নালে প্রকাশিতও হয়েছে। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সঙ্গে অন্য আরও কয়েকটি উন্নত মানের টেলিস্কোপের সাহায্যে তোলা উন্নত মানের অজস্র (বিভিন্ন দিক থেকে এবং ব্ল্যাক হোলের চারপাশে অনেকটা দূর অব্দি প্যানোরামিক ভিউ পদ্ধতিতে তোলা) ছবি ব্যবহার করে এই গবেষকদল দেখেছেন যে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাক হোলকে ঘিরে থাকে এক ধরনের লম্বা সরু ধুলোনির্মিত ফিলামেন্টের গুচ্ছ, যেগুলো ওই ব্ল্যাক হোলকে খাদ্য জোগায়, আর এই কারণেই ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রটা হয়ে পড়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন।
তাঁদের এই গবেষণার ফলে এটা স্পষ্ট হয়েছে, কেন এক ধরনের অতি বৃহৎ ব্ল্যাক হোল (যার পোশাকি নাম সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল) দীর্ঘকাল শীতঘুমে থাকবার পর হঠাৎ করে জেগে ওঠে এবং আস্তে আস্তে চারপাশ থেকে রসদ সংগ্রহ করতে করতে হয়ে ওঠে আরও অতিকায়, মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় বস্তু।
সব মিলিয়ে এই কথা বলা আমরা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি যে ব্ল্যাক হোলের চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে এই ধরনের গবেষণার ফল যত বেশি সামনে আসবে, ততই আমরা মহাবিশ্বের এই অবিশ্বাস্য মহাজাগতিক বস্তুটিকে চিনে নিতে পারব।