
স্নায়ুবিজ্ঞানীরা ইঁদুরদের মস্তিষ্কে একটা সংকেত শনাক্ত করেছেন, যা বিপদ কেটে যাওয়ার পর আতঙ্কের স্মৃতি মুছে ফেলার প্রক্রিয়াটা চালু করে দেয়। প্রক্রিয়াটার নাম ‘ভয় নিরসন’ (ফিয়ার এক্সটিংশন)। মস্তিষ্কের বেসোল্যাটারাল অ্যামিগ্ডালা (বি এল এ) নামক অঞ্চলে দু-দল নিউরনকে আলাদা করে নেন তাঁরা। তাদের একদল আতঙ্কিত সাড়া জাগায়, অন্যদল তাকে চাপা দেয়। এ গবেষণার সহ-গবেষক এম আই টি-র মিশেল পিনিয়াতেল্লি একথা জানিয়েছেন। এতদিন এটুকু জানা ছিল যে এই ভয় নিরসন প্রক্রিয়াটার সঙ্গে ডোপামিনের একটা সম্পর্ক আছে। সে-ডোপামিন নির্গত হয় মস্তিষ্কের অন্য একটি অঞ্চল থেকে, যার নাম ভেন্ট্রাল তেগমেন্টাল এরিয়া (ভি টি এ)। এই ব্যাপারটা খতিয়ে বোঝবার জন্য তাঁরা ইঁদুরদের মস্তিষ্কে ফুলকি-বেরোনো প্রভমান সন্ধায়ক (ফ্লুওরেসেন্ট ট্রেসার) ঢুকিয়ে দেন। ‘ভি টি এ’-ই যে ‘বি এল এ’-র মধ্যে ডোপামিন সংকেত পাঠায় এবং ভয়-জাগানো আর ভয়-কমানো দু-ধরণের নিউরনই যে এই সংকেতে সাড়া দেয়, এটা দেখানোই ছিল এর উদ্দেশ্য। এর পর তাঁরা দেখতে চাইলেন আচরণের ওপর এই বর্তনীগুলি কেমন প্রভাব ফেলে। এর জন্য তাঁরা জিন-বদলানো এমন কিছু ইঁদুর বেছে নিলেন যাদের মস্তিষ্কের ক্রিয়া থেকে প্রভমান আলো বা ফুলকি নির্গত হয়। তন্তু আলোক-কৌশল (ফাইবার অপটিক্স) ব্যবহার করে তাঁরা ভি টি এ-বি এল এ সংযোগের ক্রিয়াকলাপ রেকর্ড করতে সমর্থ হলেন। প্রথমে এই ইঁদুরগুলোকে একটা প্রকোষ্ঠে রেখে তাদের পায়ে হালকা কিন্তু অপ্রীতিকর বৈদ্যুতিক শক দিলেন। ভয়ে তারা সিঁটিয়ে গেল। পরের দিন ওই একই প্রকোষ্ঠে তাদের রাখা হল কিন্তু শক দেওয়া হল না। প্রথমটা ভয় পেলেও মিনিট পনেরো পরে তাদের আচরণ দিব্বি সহজ হয়ে গেল। গবেষকরা লক্ষ্য করলেন, সেই সময় তাদের ‘ভয়-নিরোধী’ বি এল এ নিউরনগুলোর মধ্যে ডোপামিনের বিপুল তরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছিল।
এইবার নিউরনকে নিয়ন্ত্রণ করবার আলোক-জিনতত্ত্ব কৌশল প্রয়োগ করে তাঁরা ওই পথরেখাটাকে পুনর্নির্মাণ করে নিলেন। দেখা গেল, বি এল এ-র ভয়-নিরোধী নিউরনগুলোর মধ্যে ভি এল এ নিউরনগুলো থেকে নির্গত প্রচুর পরিমাণ ডোপামিন ঠেসে দিলে ইঁদুরগুলো আগের থেকে অনেক তাড়াতাড়ি নির্ভয় দশায় ফিরতে পারছে। এ থেকে এই সম্ভাবনা দেখা দিল যে বি এল এ-র ভিতরকার নিউরনগুলোকে নিশানা করে কোনো ওষুধ ঢোকালে মানুষের ভয়-সংশ্লিষ্ট অসুস্থ দশার চিকিৎসা করা যেতে পারে। কারণ মানবমস্তিষ্কে ভয়ের ঘটনায় সাড়া দেওয়ার জন্য দায়ী অংশগুলির সঙ্গে ইঁদুর-মস্তিষ্কের তুলনীয় অংশগুলির মিল আছে। একথা জানিয়েছেন সিয়্যাট্ল-এর ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী ল্যারি জোএইফেল। তবে এ গবেষণার ফল মানুষের মস্তিষ্কে বাস্তবে কতদূর প্রযোজ্য হবে তা জানার আগে অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা বাকি।