ভাইরাস ও লাল জোয়ার

ভাইরাস ও লাল জোয়ার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ মার্চ, ২০২৫

লাল জোয়ার একটি জটিল প্রাকৃতিক সমস্যা। এটি সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি পরিবেশগত উদ্বেগের এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ। দক্ষিণ ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে একটি নতুন গবেষণা লাল জোয়ারের প্রকোপের পরিবেশগত কারণগুলোর উপর আলোকপাত করেছে। আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজির জার্নাল ‘এম স্ফিয়ার’-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় প্রথমবারের মতো লাল জোয়ারের সাথে সম্পর্কিত ভাইরাসগুলিকে চিহ্নিত করা গেছে। ভাইরাস প্রধানত এক-কোষী জীব। দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্লোরিডার উপকূলে সংগৃহীত জলের নমুনা পরীক্ষা করে, গবেষকরা বেশ কয়েকটি ভাইরাস এবং একটি নতুন ভাইরাস প্রজাতি চিহ্নিত করেছেন। এই ভাইরাসগুলির মাধ্যমে লাল জোয়ারের উত্থান সম্পর্কে বোঝা যাবে। তাছাড়া এর অন্তর্নিহিত কারণগুলি বুঝে এ ধরনের জোয়ারের সমাপ্তি ঘটানোর প্রচেষ্টাও করা যাবে। ভাইরাসকে জৈব নিয়ন্ত্রণের এজেন্ট হিসেবে খুঁজে বের করার গবেষণা লাল জোয়ারের ক্ষেত্রে এই প্রথম। গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক জিন লিম বলেছেন, “আমরা জানি যে ভাইরাসগুলি ক্ষতিকর শৈবালের পরিমাণ বাড়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ভাইরাসগুলি যে কারেনিয়া ব্রেভিস প্রাদুর্ভাবের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, তা আমরা জানতাম না।” কারেনিয়া ব্রেভিস একটি এককোষী, সালোকসংশ্লেষী জীব। এটি একটি সামুদ্রিক জীব যার দুটি অসমান চাবুকের মতো লেজুড় থাকে। এদের সাধারণত মেক্সিকো উপসাগরের জলে পাওয়া যায়। গবেষণার জন্য লিম এবং তার দল ফ্লোরিডা ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন কমিশনের সাথে কাজ করেছেন। তারা লাল জোয়ারের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। ল্যাবে লিম ভাইরাল মেটাজেনোমিকস পদ্ধতি ব্যবহার করে জলের নমুনায় উপস্থিত ভাইরাসগুলি চিহ্নিত করেছেন। মেটাজেনোমিকস পদ্ধতি হল, পরিবেশগত বা ক্লিনিক্যাল নমুনা থেকে সরাসরি জিনগত উপাদান সংগ্রহ করে, সমগ্র জীবাণু সম্প্রদায়ের গঠন, বৈচিত্র্য এবং কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা। ভাইরাল মেটাজেনোমিকস পদ্ধতি দু দশক আগে মায়া ব্রাইটবার্ট দ্বারা প্রবর্তিত হয়। এই ভাইরাসগুলি বা লাল জোয়ার উদ্বেগের কারণ কেন? আসলে, কারেনিয়া ব্রেভিসের নিউরোটক্সিন (স্নায়বিক অধিবিষ) সামুদ্রিক প্রাণীকে মারতে পারে এবং মানুষের শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে। এটি পর্যটন ও মৎস্য শিকারের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা উপকূলীয় অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে। বর্তমানে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে লাল জোয়ারের স্থানগুলি পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। গবেষকরা সমুদ্র সঞ্চালন মডেল ব্যবহার করে লাল জোয়ারের প্রাবল্যর ঘটনাটিকে বোঝার চেষ্টা করছেন। এটি সমুদ্রের স্রোত, তাপমাত্রা, লবণের পরিমাণ এবং অন্যান্য জলীয় বৈশিষ্ট্যগুলির সিমুলেশন করে ভবিষ্যৎ পরিবর্তনগুলির পূর্বাভাস দেয়। ভাইরাসগুলিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারলে দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ এবং লাল জোয়ারের পূর্বাভাসমূলক প্রচেষ্টাকে উন্নত করা যাবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 4 =