দিল্লির সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর একটি নতুন সমীক্ষা ভারতের বড়ো বড়ো শহরের ক্ষেত্রে একটি বিপজ্জনক প্রবণতা প্রকাশ করেছে: ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, ক্রমবর্ধমান আর্দ্রতা এবং অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে তাপ প্রবাহ মারাত্মক হয়ে উঠছে। গবেষণাটি আর একটি উদ্বেগজনক ঘটনা প্রকাশ করেছে- শহরাঞ্চলগুলো ২০০১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে রাতের দিকে যতটা শীতল হত বর্তমানে আর তা হচ্ছে না। গবেষণায় ভারতের ছটি প্রধান শহর – দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই এবং বেঙ্গালুরুর বিগত ২৩ বছরের তথ্য মূল্যায়ন করা হয়েছে। দেখা গেছে যে কিছু শহরে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি না পেলেও আর্দ্রতা বৃদ্ধির ফলে মানুষের কষ্ট বাড়ছে। বায়ুর তাপমাত্রা, ভূমি পৃষ্ঠের তাপমাত্রা এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতার সংমিশ্রণে তাপের প্রভাব আরও তীব্র হচ্ছে, এবং শহরগুলোতে তাপের কারণে বিভিন্নধরনের রোগের প্রকোপ বাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা অনুসারে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ সূচক মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। সুতরাং গবেষকদের মতে শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে তাপ, আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং ভূমি পৃষ্ঠের তাপমাত্রার সাথে দিন এবং রাতের তাপমাত্রার পরিবর্তনের প্রবণতা মূল্যায়ন করা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তাপপ্রবাহের সময় জরুরি ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং তার সাথে পরিবেশে সবুজ গাছগাছালি লাগানো ও জলাশয় খনন বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত তাপ আর সেই সঙ্গে আর্দ্রতা মানুষের শরীরে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলছে। গ্রীষ্মকালে আর্দ্রতা যত বাড়ে, ততই বেশি ঘাম হয়। শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়। শরীরে নেমে আসে ক্লান্তি এবং সেই সংক্রান্ত সমস্যাও। হিট স্ট্রেস বা এই গরমে ক্লান্তি ঘিরে ধরার নেপথ্যে রয়েছে সেই অঞ্চলের তাপমাত্রার প্রভাব। শুধু গরমেই শরীর ক্লান্ত হয় না, বাতাসের আর্দ্রতা প্রভাব ফেলে আমাদের শরীরের উপর। শহরাঞ্চলে বসবাসকারী বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই আর্দ্রতা সংক্রান্ত সমস্যা দেখা গিয়েছে। বায়ু যত বেশি আর্দ্র হয়, ততই অস্বস্তি হয় শরীরে। যে সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে, সে দিন ঘাম শুকোতে সময় নেয়। আমাদের ত্বক থেকে ঘামের বাষ্পীভবন আমাদের শরীরকে শীতল করে, কিন্তু উচ্চ আর্দ্রতার মাত্রা এই প্রাকৃতিক শীতল করার পদ্ধতিতে বাধা দেয়। এ দিকে, শরীর শীতল না হলে, শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায়, কর্মক্ষমতা কমতে থাকে, ফলস্বরূপ, মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এখন প্রশ্ন হল, এই আর্দ্রতা বাড়ার কারণ কী? শহরাঞ্চলের অনিয়ন্ত্রিত বিস্তৃতি। এই গবেষণায় ছটি শহরেই কংক্রিটের বাড়িঘর বা এলাকা বৃদ্ধি এবং হিট স্ট্রেস বৃদ্ধির মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া গেছে। যেমন, গত দু দশকে চেন্নাই প্রায় ১৪% তার সবুজ আবরণ হারিয়েছে এবং কংক্রিটের ঘরবাড়ি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই প্রবণতা একটি ক্ষতিকারক চক্র তৈরি করছে। কংক্রিট তাপ শোষণ করে এবং ধরে রাখে, ফলে শহরের তাপমাত্রা আশেপাশের এলাকার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরেকটি উদ্বেগজনক বিষয় হল রাতের তাপমাত্রা সেভাবে কমছে না। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ফলত, মানুষ রাতের বেলাতেও সামান্য হলেও স্বস্তি পাচ্ছে না, তাদের স্বাস্থ্যের আরও ক্ষতি হচ্ছে। এই মারাত্মক সংমিশ্রণের পরিণতি গুরুতর বলে মনে করছেন গবেষকরা। এই ক্রমবর্ধমান হুমকির মোকাবেলা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।