ভারতে বিজ্ঞানক্ষেত্রে মহিলাদের স্থান

ভারতে বিজ্ঞানক্ষেত্রে মহিলাদের স্থান

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

কিছুকাল আগে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সগর্বে জানিয়েছেন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং আর গণিতের (“বি-প্র-ই-গ”) শতকরা চল্লিশটি আসনে ভরতি হয়েছেন মেয়েরা। গত দশকে মহিলা পি-এইচ ডি-র সংখ্যা ১০৭% বেড়েছে।
অথচ জানা যাচ্ছে, “বি-প্র-ই-গ”-তে শিক্ষকদের মধ্যে মহিলাদের অনুপাত মাত্র ১৬.৭%। ছ-টি আই আই টি, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স আর টাটা ইন্সটিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ – এই আটটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকমণ্ডলীতে মহিলাদের সংখ্যা আরও কম, মাত্র ১০%! বিজ্ঞানের কতকগুলি এলাকা মেয়েদের জন্য সামাজিকভাবে “স্বস্তিকর”, যেমন জীববিজ্ঞান; সেখানে তাঁদের উপস্থিতির হার ২২.৫%। পক্ষান্তরে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মাত্র ৮.৩%! শ্রুতি মুদালিয়র এবং বৈষ্ণবী অনন্তনারায়ণম সারা দেশের ৯৮টি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানের সাতটি শাখায় শিক্ষিকাদের উপস্থিতি নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছেন – জীববিজ্ঞান, গণিত, ভূ-ব্যবস্থা বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান, রসায়ন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং। দেখা গেছে, শিক্ষিকাদের মধ্যে ৪৬.৩% রয়েছেন কেরিয়ারের প্রথম ধাপে, ২৭.৫% রয়েছেন কেরিয়ারের মাঝপথে, আর উচ্চস্তরে পৌঁছেছেন মাত্র ২৬.২%। শুধু তাই নয়, ২০২১-এর আগস্ট থেকে ২০১৩-এর মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত ১২৪টি বিজ্ঞান অধিবেশনে মহিলা বক্তাদের সংখ্যা ছিল ২৬%। ৮৩ % রসায়ন অধিবেশনে একজনও মহিলা বক্তা ছিলেন না।
কেন মহিলারা বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র ছেড়ে দেন? একটা বড়ো কারণ হল, যে-বয়সে কোনো একটা দায়িত্বপূর্ণ বড়ো পদে যোগ দেওয়ার সময় আসে, ঠিক তখনই সামাজিক চাপ আসে বিয়ে করে সংসারী হওয়ার জন্য। তার ওপর মাতৃত্ব-কালীন ছুটির শেষে কাজে যোগ দিয়ে গবেষণার খেই ধরে নিতে অনেক সময়েই অসুবিধা হয়। তাছাড়া বাচ্চা সামলানো আর বিজ্ঞান গবেষণা একসঙ্গে চালাতে গিয়েও খুব চাপ পড়ে। কোনো পদের জন্য আবেদন করলে এইসব ছুটির বিষয়টা বিবেচনার মধ্যে এসে পড়ে। সব মিলিয়ে একটা দুষ্টচক্র তৈরি হয়। উচ্চপদে মহিলাদের সংখ্যা যত কমে ততই অন্য মহিলাদের উচ্চপদে ওঠার আকাঙ্ক্ষা নষ্ট হয়ে যায়। উদ্বেগ প্রকাশ করে নেচার পত্রিকা মন্তব্য করেছে, একেবারে গোটা ব্যবস্থাটার মর্মমূলে ঢুকে-থাকা এইসব বৈষম্য নিয়ে অধিকাংশ মহিলাই মুখ খুলতে ভয় পান, পাছে তাঁরা চিহ্নিত হয়ে যান। এইভাবে চিহ্নিত হলে গবেষণার অর্থবরাদ্দ, অন্যদের সঙ্গে সহযোগিতার সুযোগ, সুনাম, পদোন্নতি প্রভৃতি নানা দিক থেকে বঞ্চিত হতে হবে। কোনো কোনো উচ্চপদস্থ মহিলা বিজ্ঞানী তো “বিষাক্ত কর্ম-পরিবেশ” সহ্য করতে না-পেরে কাজই ছেড়ে দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × one =