
যুগ যুগ ধরে মানুষ ধাতুর উপর নির্ভরশীল। অন্তত আট হাজার বছর ধরে আমরা আকরিক গলিয়ে তা থেকে ধাতু নিষ্কাশন করে চলেছি – আধুনিক পুরাতাত্ত্বিক গবেষণা বলছে, সম্ভবত আরও অনেক আগে থেকেই। এর ফলে দূষণ ঘটেছে। সীসে, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক প্রমুখ বিষাক্ত ধাতু আমাদের চারদিকেই ছড়িয়ে আছে, পায়ের তলার মাটিতেও। এইসব ভারী ধাতু বা ধাতব পদার্থর উদ্ভব ভূত্বকের মধ্যে থেকে। আগ্নেয়গিরির উদ্গিরণ, আবহাওয়ার প্রকোপে শিলার অবক্ষয়, ভূতাত্ত্বিক পর্ব জুড়ে শিলার ভাঙন প্রভৃতি নানান প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় এরা মৃত্তিকার মধ্যে প্রবেশ করে। বহু দশক ধরেই বিজ্ঞানীরা জানতেন যে মানুষের আকর খনন আর আকরিক থেকে ধাতু গলানোর প্রক্রিয়া এইসব প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলিকে ত্বরান্বিত করে। ফলত যে-মৃত্তিকায় আমরা খাদ্য ফলাই তা মারাত্মকভাবে সংক্রামিত হয়। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের জৈব সম্ভারের মধ্যে এবং/অথবা জীবদেহে এগুলি জমতে থাকে। মস্তিষ্কের বিকাশে এগুলির ভূমিকা আছে।
মুশকিল হচ্ছে, শিল্পোন্নয়নের সঙ্গে তাল রেখে ধাতুর চাহিদা তো বেড়েই চলছে,বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে। কিন্তু বিশ্বের কোন জায়গায় কী পরিমাণ ধাতু ছড়িয়ে আছে সে সম্পর্কে আমাদের খুব ভালো কোনো ধারণা নেই।
এই অভাব মেটানোর জন্য সম্প্রতি সায়েন্স পত্রিকায় একটি চমৎকার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে নানারকম ধাতুর দ্বারা কলুষিত পৃথিবীর একটি মানচিত্র আঁকা হয়েছে। গবেষণাটি করেছেন চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দেইয়ি হৌ-এর গবেষক দল। তাঁরা প্রায় দেড় হাজারটি গবেষণাপত্র ঘেঁটে ৭৯৬,০০০-টি বিষাক্ত ধাতুর মাত্রা পরিমাপ করেছেন। এই উপাত্তর (ডেটা) ভিত্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (কৃ বু)-চালিত যান্ত্রিক শিক্ষাগ্রহণ প্রণালীর সাহায্য নিয়ে তাঁরা হরেক পারিবেশিক ও সামাজিক কারণের ভিত্তিতে বিশ্বের কোথায় কোথায় এইসব ধাতু থাকতে পারে সে বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়েছেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত: “বিশ্বের চাষের খেতের ১৪-১৭% (২৪২ মিলিয়ন হেক্টর)-এর মধ্যে বিষাক্ত ধাতুর পরিমাণ চাষাবাদের জন্য স্বীকৃত ন্যূনতম মাত্রার উপরে রয়েছে”। মৃত্তিকার ৬.৮%-এ ওই পরিমাণ স্বীকৃত মানবস্বাস্থ্য ও বাস্তুতান্ত্রিক মাত্রার উপরে। এর ফলে বিশ্বের ০.৯-১.৪ বিলিয়ন মানুষ বাড়তি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাঁরা একটা “নানা মহাদেশ-ব্যাপী ধাতু-সমৃদ্ধ সংযোগপথ” শনাক্ত করেছেন। দক্ষিণ চীন, দক্ষিণ এশিয়া (ভারতীয় উপমহাদেশ যার অন্তর্গত), মধ্যপ্রাচ্য আর দক্ষিণ ইউরোপ এই সংযোগপথের মধ্যে পড়ছে। এই এলাকা জুড়েই অতীতে গড়ে উঠেছিল বড়ো বড়ো বিশিষ্ট কৃষ্টি। তার মানে, এই অঞ্চলে সংক্রমণ বহুকাল ধরে ঘটে আসছে।
আজকের দিনে আমরা কতরকমের সংক্রমণ নিয়েই না চিন্তিত: প্রোটিনের গুঁড়ো, রান্নার মশলা, জলবায়ুর পরিবর্তন হেতু চালের মধ্যে আর্সেনিকের মাত্রা বৃদ্ধি প্রভৃতি। আপনার নিজস্ব এলাকার মৃত্তিকায় ভারী ধাতুর মাত্রা কী, সেটা পরিমাপ করে অংশগ্রহণমূলক বিজ্ঞান মারফত বিজ্ঞানীদের জানালে লাভ হবে। মৃত্তিকা সাফাইয়ের প্রযুক্তি আর পদ্ধতি নিয়ত বিকশিত হয়ে চলেছে, কাজেই এখনো সময় আছে ব্যবস্থা নেবার আর ঝুঁকি কমাবার ।
সূত্র: David Sittenfeld, Center for the Environment, Museum of Science https://mail.google.com/mail/u/0/#inbox/FMfcgzQbfBsdSLksDCblhXKZPkdLQzlV