ভালোবাসা মস্তিষ্কে ছাপ ফেলে যায়

ভালোবাসা মস্তিষ্কে ছাপ ফেলে যায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৭ জানুয়ারী, ২০২৪

আপনার পছন্দের মানুষের সাথে দেখা করবেন, বাইরে খাবেন তাই আপনি সেজেগুজে বেরোচ্ছেন, মন আনন্দ, ভালো লাগায় পূর্ণ। কিন্তু যদি কাজের খাতিরে বেরোচ্ছেন, বাইরে খেয়ে ফিরবেন, সেই একই ভালো লাগা কি কাজ করে? এই ভালো লাগার পেছনে আছে ডোপামিন নামে এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন। এই হরমোনের কারণেই মিষ্টি খাওয়ার প্রতি ভালোবাসা, নিকোটিন, কোকেন সেবনের ইচ্ছা জাগে। এটা মস্তিষ্ককে আনন্দ দিয়ে পুরস্কৃত করে, অনুপ্রাণিত করে।
প্রেইরি ভোল নামে এক ধরনের ইঁদুর জাতীয় প্রাণী তৃণভূমিতে বসবাস করে, এরা সঙ্গীর প্রতি একগামী আচরণ করে, অর্থাৎ একটি পুরুষ আর একটি স্ত্রী ভোল নিজেদের মধ্যে আজীবন জুটি বেঁধে বাস করে। তাদের নিয়ে CU বোল্ডার নিউরোসায়েন্টিস্টরা ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন, কেন আমরা কিছু মানুষের সাথে অন্য মানুষের চেয়ে বেশি থাকতে চাই। মানুষের মতো, এই ইঁদুরেরা দীর্ঘমেয়াদী যুগলবন্দি করে থাকে, একই বাসা ভাগ করে, একসাথে বংশ বৃদ্ধি করে এবং যখন তারা তাদের সঙ্গীকে হারায় তখন দুঃখের মতো কিছু একটা অনুভব করে। এদের আচরণ অধ্যয়ন করে, ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানুষের মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে কী ঘটে এবং এই বন্ধনগুলি ছিন্ন হয়ে গেলে কীভাবে আমরা এটিকে কাটিয়ে উঠতে পারি সে সম্পর্কে গবেষকরা নতুন অন্তর্দৃষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেছেন।
নতুন গবেষণা প্রথমবার দেখাচ্ছে স্নায়ু ট্রান্সমিটার ডোপামিন প্রেমকে বাঁচিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষ হিসাবে, আমাদের সামাজিক জগৎ মূলত বিভিন্ন মানুষের সাথে যোগাযোগ করার জন্য নানা ধরনের ইচ্ছা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, তা রোমান্টিক সঙ্গীর সাথে দেখা করার জন্যই হোক বা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হোক। এই গবেষণা বলছে যে কিছু মানুষ আমাদের মস্তিষ্কে একটি অনন্য রাসায়নিক ছাপ ফেলে যা আমাদের সময়ের সাথে এই বন্ধনগুলি বজায় রাখতে চালিত করে। গবেষকরা অত্যাধুনিক নিউরোইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখতে চেয়েছিলেন, একটি ভোল তার সঙ্গীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের মস্তিষ্কে কী ঘটে। দুটি ক্ষেত্রের প্রথম ক্ষেত্রে সঙ্গী যে ঘরে ছিল তার দরজা খুলতে ভোলকে একটি লিভার টিপতে হয়েছিল। অন্য ক্ষেত্রে, সঙ্গীর সাথে পুনর্মিলনের জন্য ভোলকে একটি বেড়ার ওপরে উঠতে হয়েছিল। এদের মস্তিষ্কে একটি ক্ষুদ্র ফাইবার-অপ্টিক সেন্সর এই প্রাণীর নিউক্লিয়াস অ্যাকম্বেন্সে প্রতি মিলিসেকেন্ডে কার্যকলাপ ট্র্যাক করছে। এই মস্তিষ্কের অঞ্চল মানুষকে, জল এবং খাবার থেকে শুরু করে অপব্যবহারের ওষুধের জন্য অনুপ্রাণিত করার জন্য দায়ী৷ যখনই লিভার ঠেলে বা বেড়া টপকে ভোল তার সঙ্গীর খোঁজ পায়, সেন্সর দেখেছে ডোপামিনের মাত্রা বেড়ে যায়, মস্তিষ্কে যেন আলো জ্বলে ওঠে। কিন্তু একটা ভোলকে, সঙ্গীর থেকে ৪ সপ্তাহ আলাদা রেখে দেখা গেছে, তাদের কিন্তু সঙ্গীর সাথে এক রসায়ন কাজ করছে না, তারা সঙ্গীকে ভুলে গেছে। মস্তিষ্কে যেন রিসেট হয় যা প্রাণীটিকে সম্ভাব্য একটি নতুন বন্ধন তৈরি করতে দেয়। মানুষের ক্ষেত্রে এটা সুখবর, কারণ করোর সম্পর্ক ভেঙে গেলে বা সঙ্গীর মৃত্যু হলে, মস্তিষ্ক সেই যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − six =