নিজেকে ভালো রাখুন তাহলেই ভালো থাকবে চারপাশ। আবার আপনার চারপাশটা ভালো থাকলে, ভালো থাকবেন আপনিও – এ যেন একে অপরের পরিকথা। আজকাল, ক্লান্ত, অবসন্ন, নিয়ন্ত্রণহীন রাগ, খিটখিটেপনা, বিষাদে ভরা লোকজন প্রায়শই চোখে পড়ে। বরং একজন মানুষ খিলখিলিয়ে প্রাণ খুলে হাসছেন এমনটা দেখলে, এখন আমরা থমকে দেখি। যেন মনে হয় কোন দেবশিশু হাসছে। আসলে রামগরুড়ের ছানার দলে, এমন হাসি এক অভুতকল্প চিত্র এঁকে দেয় ক্ষনিকের জন্য। তাই জন্যই বোধহয়, এই ‘মন ভালো রাখা’, চর্চার এক মহার্ঘ বিষয় হয়ে উঠেছে। কাগজ কিংবা ম্যাগাজিন এমনকি ডিজিটাল চ্যানেল থেকে শুরু করে ৩ মাসের ক্র্যাস কোর্স সবাই মন ভালো রাখার দাবাই দিচ্ছেন, হদিশ দেখাচ্ছেন।
মানুষ আসলে ভুলে যাচ্ছেন তারা প্রকৃতির বাইরে নয় – তাকে ভালো থাকতে গেলে, প্রকৃতিকেও সঙ্গে রাখতে হবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাতে শুতে যাওয়া অবধি দিনযাপনের ব্যস্ততা, ক্লান্তিতে একঘেয়ে হয়ে উঠছে জীবন। এরই মাঝে সামান্য কিছু চেনা কাজ কিংবা খানিক কায়িক পরিশ্রম আপনার মনটাকে ভালো রাখতে পারে এমনটাই দাবি করছে এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়, শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি, শেফিল্ড হ্যালাম ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ প্লাইমাউথের গবেষকরা। বন সংরক্ষণ, বাগান করা, চাষ করা, ব্যায়াম এবং খেলাধুলা, বা বাইরে প্রকৃতির কোলে ঘুরে বেড়ানো, একটু কথা বলা, আড্ডা দেওয়া এগুলো করলেই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়। এগুলিকে গবেষকরা নাম দিয়েছেন গ্রিন সোশ্যাল।
মোট, ৮৩৩৯ জন মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নের প্রয়োজন রয়েছে বা গোদা বাংলায় ‘মন ভালো নেই’ এমন ব্যক্তিদের নেওয়া হয় গবেষণার জন্য। এদের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী যুবকযুবতী এবং শিশুও ছিল। ২১% সংখ্যালঘু জনসংখ্যা এবং ৫৭% মানুষ ছিল আর্থ-সামাজিকভাবে বঞ্চিত এলাকার। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বেশ একটা বৈচিত্র রাখা হয়েছিল। গ্রিন সোশ্যাল কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার আগে, এনাদের সুখ, উদ্বেগ, জীবন সন্তুষ্টি অনুভূতির মাত্রা জাতীয় গড়ের চেয়েও খারাপ ছিল। প্রকল্পে অংশ নেওয়ার পরে এঁদের মানসিক সুস্থতার উন্নতি ঘটেছে। এঁরা জানিয়েছেন এইসব কাজকর্মের মধ্যে থেকে এনারা মনে আনন্দ, খুশি ও শান্তি খুঁজে পেয়েছেন। প্রাপ্ত ডাটা দেখাচ্ছে পরবর্তীতে, এঁদের উদ্বেগের অনুভূতি জাতীয় গড়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। তাদের মনে হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে এই প্রক্রিয়া ওষুধের চেয়ে ভালো কাজ করে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে, থেরাপি, চিকিৎসা, ওষুধ আছেই। তবে এসবের দিকে পা না বাড়িয়ে, পা বাড়ান বাড়ির চার দেওয়ালের বাইরে- প্রকৃতির সাথে একাত্ম হন। মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রকৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিকূল জীবনের সাথে লড়াই করতেও উপযোগী। তাই খোলা আকাশ বুকে নিয়ে ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।