
ভ্রমররা খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকটা মানুষের মতোই ভুল করে। যে খাবার বেছে নেয় সেটা পুষ্টিকর কিংবা স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে। পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, মৌমাছিদের বেছে নেওয়া খাবার তাদের স্বাস্থ্য উন্নত করার বদলে ক্ষতিই করছে।
গবেষণাটি চলাকালীন মৌমাছিদের বিভিন্ন মাত্রার প্রোটিন, চর্বি ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাদ্য দেওয়া হয়। দেখা যায়, তারা যে খাবার বেছে নেয়, তা তাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটায় না। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত পরাগের দিকে তারা বেশি ঝোঁকে, চর্বিযুক্ত খাবার কম খায়, আবার জলে মিশ্রিত মিষ্টি দ্রবণ অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে। খাদ্যের ভুল নির্বাচন তাদের প্রজনন ক্ষমতা ও দেহের ওজনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গবেষণার প্রধান লেখক অধ্যাপক এতিয়া আমসালেম জানান, মৌমাছিদের খাদ্যাভ্যাস হয়তো তাদের প্রকৃত পুষ্টির চাহিদা নয়, বরং বিবর্তনজনিত সীমাবদ্ধতার ফল। যেমন ,তারা অতিরিক্ত প্রোটিন খেতে পারে কারণ তারা প্রোটিন সংগ্রহে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ অতিরিক্ত প্রোটিন শরীর থেকে নাইট্রোজেন অপসারণের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
এই ভুল খাদ্যভ্যাসই মৌমাছিদের বর্তমান সংকট আরও বাড়িয়ে তোলে। বাসস্থান হারানো, কীটনাশকের প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তন এবং একফসলি কৃষির কারণে মৌমাছিরা বৈচিত্র্যপূর্ণ ও পুষ্টিকর ফুল খুঁজে পায় না। এতে করে পর্যাপ্ত খাদ্য পেলেও সেটি পুষ্টিতে পরিপূর্ণ নয়, ফলে তাদের প্রজনন, বসতি বিস্তার ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই গবেষণা মৌমাছি সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। শুধু মৌমাছির পছন্দের উপর নির্ভর করলে চলবে না, তাদের প্রকৃত পুষ্টিগত চাহিদা বোঝা জরুরি। ভবিষ্যতের গবেষণায় মৌমাছিদের খাদ্য গ্রহণের ব্যর্থতার কারণ, যেমন তাদের বিপাকীয় ক্ষমতা, স্বাদগ্রহণের সীমাবদ্ধতা বা পরিবেশগত বাধাগুলি নিয়ে আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে হবে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, মৌমাছিরা যা খেতে চায় তা সব সময় তাদের জন্য উপকারী নাও হতে পারে — এই উপলব্ধি মৌমাছি রক্ষায় আরও জরুরি হয়ে উঠেছে।
তথ্য সূত্র :Journal of Insect Physiology.