ভূমিকম্পের আগেই দুর্যোগের পূর্বাভাস

ভূমিকম্পের আগেই দুর্যোগের পূর্বাভাস

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ জুলাই, ২০২৩

একটা বড়োসড়ো ভূমিকম্পের আনুমানিক দু ঘন্টা আগে ভূমিতে খুব ক্ষীণ নাড়াচাড়া বিজ্ঞানীরা অনুভব করেছেন তবে এর জন্য কোন কম্পন সৃষ্টি হয়নি- এমনটাই জানা যাচ্ছে এক নতুন গবেষণায়। অ্যাসিসমিক স্লিপ নামে পরিচিত এই আন্দোলন, ক্ষতিকারক ভূমিকম্পের সম্ভাব্য পূর্বাভাস বলে মনে করছেন গবেষকরা। অনেক সিসমোলজিস্টই দীর্ঘকাল ধরে বলে আসছেন যে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া অসম্ভব, কারণ পৃথিবীর ভূত্বক আন্দোলিত হওয়ার আগে কোনও সনাক্তযোগ্য সতর্কতা দেয় না। কিন্তু সম্প্রতি সায়েন্সে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে যে বাস্তবে সতর্কতা সংকেত রয়েছে। কিন্তু সেটি খুবই ক্ষীণ। কোট ডি আজুর ইউনিভার্সিটির ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের (আইআরডি) আর্থ সায়েন্সের গবেষক কোয়েন্টিন ব্লেটারির মতে এই ক্ষীণ আন্দোলনই এক দৃঢ় প্রমাণ যে এরপর এক বড়ো ভূমিকম্প ঘটতে চলেছে।
অ্যাসিসমিক স্লিপ হল ভূমিতে এক ধরনের ক্ষীণ আন্দোলন যা সিসমিক তরঙ্গ তৈরি না করেই ঘটে। এই ঘটনাকে কখনও কখনও “ধীরগতির ভূমিকম্প” বলা হয় কারণ তারা ভূমিকম্পের সমান পরিমাণে ভূমিকে স্থানচ্যুত করতে পারে — তবে স্লিপ নড়াচড়া এত ধীরে ধীরে ঘটে যে কোনও ঝাঁকুনি, ধাক্কা বা কম্পন হয় না। তবুও, গবেষকরা GPS সেন্সর ব্যবহার করে ভূমিতে এই ক্ষীণ আন্দোলন সনাক্ত করেছেন। সিসমোলজিস্ট ডাঃ লুসি জোন্সের মতে অ্যাসিসমিক স্লিপে দেখা প্যাটার্ন অনেক সময় ফোরশক বা বড়ো কম্পনের আগে ঘটা ছোটো কম্পনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সিসমোলজিস্টরা অবশ্য আগে ভেবেছিলেন যে তারা এই ফোরশক দেখে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা দিতে পারবেন, কিন্তু তা তারা পারেননি। কারণ ফোরশকের পরে একটি ভূমিকম্প ঘটার সম্ভাবনা মাত্র ৫%।
ভূমিকম্পের আগে ফাটলের কারণে স্লিপ আচরণে কোনও পরিবর্তন হয় কিনা তা খুঁজে বের করতে, ব্লেটারি এবং তার সহযোগী গবেষক জিন ম্যাথিউ নককেট ৭.০ বা তার বেশি মাত্রার ৯০টি ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছাকাছি ৩,০২৬টি GPS স্টেশন থেকে তথ্য একত্রিত করেছেন এবং ভূমিকম্পের ৪৮ ঘণ্টা আগে টেকটনিক প্লেটে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা দেখার চেষ্টা করেছেন। তারা দেখেন প্রতিটি ভূমিকম্পের আগের ৪৮ ঘন্টা সময়ের প্রথম ৪৬ ঘন্টা, কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি কিন্তু শেষের দু ঘণ্টায়, অনুভূমিক গতিবিধিতে একটা ত্বরণ দেখা গেছে। তারা আরও বলেন যে একটা নির্দিষ্ট ফাটলের চারপাশে নিঃশব্দে যে পরিবর্তন হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণের জন্য সেন্সরকে ১০০ গুণ বেশি সংবেদনশীল হতে হবে।