
অনেকে মনে করেন ভেড়িতে চাষ করা মাছ নিরাপদ নয়, নদী বা সমুদ্র থেকে ধরা মাছ স্বাস্থ্যকর ও বিশুদ্ধ। তাই বাজারে মাছ কেনার সময় মানুষ এই দুই ধরনের মাছের ভালো-মন্দ বিচার করে সিদ্ধান্ত নেয়। বিজ্ঞানী ড. ইসাবেল কাসানোভা-মার্টিনেজ মনে করেন, মাছের শরীরে দূষিত পদার্থ জমে, এবং প্রাকৃতিকভাবে ধরা মাছেই বেশি দূষণ পাওয়া ।পারদ, আর্সেনিক, সিসার মতো ক্ষতিকর উপাদান মাছের শরীরে বেশি পরিমাণে থাকলে মানুষের ক্ষতি করতে পারে।গবেষণায় দেখা গেছে, নদী বা সমুদ্রের মাছের শরীরে গড়ে ০.০৬ মাইক্রোগ্রাম পারদ থাকে, আর চাষের মাছের শরীরে প্রায় অর্ধেক, মাত্র ০.০৩৮ মাইক্রোগ্রাম। এছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে ধরা মাছের শরীরে আর্সেনিকের পরিমাণ ৩.২৬ মাইক্রোগ্রাম,আর চাষের মাছের মধ্যে মাত্র ১.২৩ মাইক্রোগ্রাম।এছাড়া, ডিডিটি নামের একসময় বহুল ব্যবহৃত একটি কীটনাশক এখনো জলে মিশে মাছের শরীরে জমতে পারে। যদিও এটি অনেক দেশে নিষিদ্ধ, তবুও গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রাকৃতিকভাবে ধরা মাছে ১৯৬.৪৮ ন্যানোগ্রাম ডিডিটি পাওয়া যায়। যেখানে চাষের মাছের মধ্যে এর পরিমাণ মাত্র ৪৪.৬৪ ন্যানোগ্রাম। অর্থাৎ, চাষের মাছের তুলনায় প্রাকৃতিকভাবে ধরা মাছের শরীরে অনেক বেশি দূষণ জমে থাকে। গবেষণায় অনুযায়ী, মাছ কোথায় থাকে এবং কী খায়, তার ওপর নির্ভর করে তাদের শরীরে কীটনাশকের পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।চাষের মাছের খাবার ও জলের মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাই এদের শরীরে কম দূষণ থাকে।জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলছে, মাছ চাষ খুব দ্রুত বাড়ছে, আর এখন অনেক চাষি নিয়মিত মাছের খাবার ও জলের পরীক্ষা করেন। এতে মাছ আরও নিরাপদ হয়।অন্যদিকে, প্রাকৃতিক জলে কলকারখানার বর্জ্য ও বৃষ্টির জলের সঙ্গে আসা দূষিত পদার্থ মিশে ভারী ধাতু ছড়িয়ে পড়ে যা প্রাকৃতিকভাবে ধরা মাছের শরীরে জমে যায়। পরিষ্কার জলের ট্যাংক বা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষ করা হলে মাছের মধ্যে দূষণ কম থাকার সম্ভাবনা। তবে কোনো পদ্ধতিই একেবারে নিরাপদ নয়।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে,পারদ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক রাসায়নিকগুলোর একটি, বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও ছোট শিশুদের জন্য এটি বেশি ক্ষতিকর। বেশি পারদ শরীরে জমলে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে সমস্যা হতে পারে।তবে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাছ খাওয়া নিরাপদ। কার কতটুকু খাওয়া উচিত, তা ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে। বিশেষজ্ঞরা গর্ভবতী নারীদের বড় মাছ খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেন, কারণ এসব মাছের শরীরে বেশি পরিমাণ পারদ থাকতে পারে। মাছ খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী কারণ এতে প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান থাকে, যা স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। তবে মাছের পুষ্টিগুণের পাশাপাশি এতে থাকা দূষিত পদার্থের পরিমাণ সম্পর্কেও সচেতন থাকা জরুরি। নোয়া ফিশারিজ
বলেছে, মাছ আমাদের খাদ্য তালিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, এর সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো জানা উচিত। মাছের পুষ্টি-উপাদান, যেমন সেলেনিয়াম ও জিঙ্ক, তাদের খাবার ও পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। গবেষণার প্রধান ড. কাসানোভা-মার্টিনেজ বলেন, প্রাকৃতিকভাবে ধরা ও চাষের মাছ একসঙ্গে টিকে থাকতে পারে এবং নিরাপদে মাছের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করতে পারে। তবে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাছের খাবার ও পরিবেশ পর্যবেক্ষণের উন্নতি জরুরি। দুটি পদ্ধতিই গুরুত্বপূর্ণ, তবে প্রতিটির নিজস্ব সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো মাছের দূষণমাত্রা নির্ধারণ করে যাতে এটি নিরাপদ থাকে, এবং বেশিরভাগ মাছই এই সীমার মধ্যে থাকে। ।চাষের মাছে দূষণ কম থাকলেও, স্বাদ ও ঐতিহ্যের কারণে প্রাকৃতিক মাছ জনপ্রিয়। মানুষ চাইলে দুই ধরনের মাছই বেছে নিতে পারে। মাছের পুষ্টিগুণ গুরুত্বপূর্ণ, তাই ভারী ধাতু ও কীটনাশকের ঝুঁকি নিয়ে বেশি চিন্তা না করে সচেতনভাবে বেছে নেওয়া উচিত। ভালো উৎস থেকে মাছ কিনে এবং স্বাস্থ্য পরামর্শ মেনে চললে নিরাপদে খাওয়া সম্ভব।