মঙ্গলের মিথ নিয়ে যা জানাচ্ছেন মিঃ কিউরিসিটি

মঙ্গলের মিথ নিয়ে যা জানাচ্ছেন মিঃ কিউরিসিটি

Posted on ৯ এপ্রিল, ২০১৯

মঙ্গলের মাটিতে প্রায় পাঁচবছর কাটিয়ে ফেলেছেন নাসার কিউরিসিটি রোভার নামের এই রোবটগাড়িটি। ‘গ্যেল ক্রেটার’ বৈচিত্রে ভরা একধরণের অববাহিকা, যার মাঝখানে পাহাড়। ক্রেটারের মাটির চরিত্র বিশ্লেষণ করে কিউরিসিটি একরকম নিশ্চিত যে, সেখানে জল এবং প্রাণের উপযোগী জৈবযৌগ ও বিভিন্ন রাসায়নিক ছিল।

কিউরিসিটির কাজের পরিসর নাসা বাড়িয়েছে। ক্রেটারের মাঝের ঐ পাহাড়ে গাড়িটি উঠবে। তিনটি নতুন ভূস্তরের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে –খনিজ হেমাটাইটের স্তর, পলির স্তর আর সালফেট লবণের প্রাধান্য অন্য স্তরটিতে।
মঙ্গলের মিথ নিয়ে কিউরিসিটি কী কী জানাচ্ছেন, শুনে নেওয়া যাক।

প্রাণ কি আদৌ ছিল মঙ্গলে?

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীবাশ্ম বা মৃতকোষের ছবি তোলায় কিউরিসিটি সক্ষম না হলেও, তার কাছে আছে ভ্রাম্যমান ল্যাবরেটরি। কোষের গঠনতন্ত্র সে বলে দিতে পারে। এই পদ্ধতিতে কিউরিসিটি ক্লোরোবেঞ্জিনের সন্ধান পেয়েছে। ক্লোরোবেঞ্জিনের মত অণুরা কোষপ্রাচীর গঠনে সাহায্য করে। বড়ো অণুর কার্বনশৃঙ্খল ভাঙতে ভাঙতে আজকের এই ক্লোরোবেঞ্জিনের খোঁজ মিলেছে। এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, তেমনই বলছেন কিউরিসিটি প্রোজেক্টের গবেষক অশ্বিন ভাসাভাদা। ২০১৬-র ডিসেম্বরে কিউরিসিটি কিছু যান্ত্রিক সমস্যার সম্মুখীন হয়, যদিও মেরামতির কাজ চলছে। অদূর ভবিষ্যতে মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে বলিষ্ঠতর প্রমান কিউরিসিটি দিতেই পারে।

উষ্ণ-আর্দ্র মঙ্গল কীভাবে শীতল ও শুষ্ক হয়ে গেলো?

বিজ্ঞানমহলের বহুচর্চিত প্রশ্ন। কিউরিসিটির তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গল এককালে বাসযোগ্য গ্রহ ছিল। যদিও তা সাড়ে তিন বিলিয়ন বছর আগের কথা। সূর্য থেকে আসা কণাদের প্রভাবে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলস্বরূপ দুর্বল হয়ে পড়ে মঙ্গলের চৌম্বকক্ষেত্রের কবচটি। এই কারণেই যে গ্রহে জল পাওয়ার সম্ভবনা ছিল, সেই গ্রহটি শুকনো বন্ধ্যাজমিতে পরিনত হল – এমনটাই মত ভাসাভাদার। মঙ্গলের পরিবেশে ভারী মৌল আনুপাতিকভাবে বেশী পাওয়া গেছে। অনুমান যে, হালকা মৌলগুলি আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। মঙ্গলের আর্দ্রযুগের শেষদিকের কিছু পাথর পরীক্ষা করে দেখছে কিউরিসিটি। এইসব পাথর পরীক্ষা করে হয়ত জানা যাবে কেন ঐ পাথুরে ক্রেটারের জায়গায় হ্রদ আমরা পেলাম না।

জলের প্রবাহ এখনও কি মঙ্গলে রয়েছে?

খনিজলবণের অণুতে যে জল থাকে, বিশেষ উষ্ণতায় অণুর বিয়োজিত হলে তরলরূপে নির্গত হয় সেই জল। গ্যেল ক্রেটারের মাটিতে সমগোত্রীয় তরলের সন্ধান করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল মিঃ কিউরিসিটি। কিন্তু, ২০১৫ সালে মার্স রিকনেসেন্স অরবিটারের তোলা কিছু ছবিতে সল্টস্ট্রিকসের পরিবর্তন ধরা পড়ে। মঙ্গলে জলের প্রবাহের স্বপক্ষে জোরদার প্রমাণ। মাউন্ট শার্প (মঙ্গলগ্রহের পাহাড়)-এও একইধরনের সল্টস্ট্রিকসের হদিশ মিলেছে। এই স্ট্রিকসগুলোর চরিত্র বদলালে হয়ত বলা যাবে মঙ্গলে জলের প্রবাহ আছে। যদিও এতদিনে স্ট্রিকসগুলো অপরিবর্তিতই থেকেছে।

মঙ্গলের বায়ুস্তরে মিথেন এলো কোথা থেকে?

আমাদের পৃথিবীতে অণুজীবের শরীর থেকেই মিথেন আসে। মঙ্গলে মিথেনের রহস্যটা কী? প্রথমদিকে কিউরিসিটি খুবই অল্পমাত্রায় মিথেনের সন্ধান পেয়েছিল। যদিও মিথেনের এই বেসলাইন তাপমাত্রা ও চাপের কারণে সবসময়ই অস্থিতিশীল। ২০১৪ সালে বেসলাইনের দশগুণ বেশী মিথেন খুঁজে পায় কিউরিসিটি। বিজ্ঞানীদের অনুমান, মঙ্গলের বায়ুতে মিথেনের আয়ু মাত্র তিনশো বছরের। মিথেনের এই আকস্মিক বৃদ্ধি গ্রহের সাপেক্ষে খুবই নতুন। “এই মিথেন অণুজীবসৃষ্ট হয়ত নয়, এসেছে মঙ্গলের ভূত্বকের নীচে থেকে”, বলছেন অশ্বিন ভাসাভাদা। মঙ্গলে মিথেনের উৎস যা’ই হোক, সেখানে প্রাণের সম্ভবনা একেবারে উড়িয়ে দিতে নারাজ গবেষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + ten =