মঙ্গলে বন্যা!

মঙ্গলে বন্যা!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ অক্টোবর, ২০২১

নাসার উপগ্রহ পারসেভারেন্স রোভার গত ফেব্রুয়ারি থেকে মঙ্গলের জিজেরো গহ্বরের সামনে পড়ে আছে। এতটাই নির্জন সেই অঞ্চল যে পৃথিবীর সঙ্গে প্রায়শই তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞান তো থেমে থাকবে না। রোভারের অত্যাধুনিক ক্যামেরায় উঠে যাচ্ছে মঙ্গলের নানারকমের ছবি। আর সেই ছবি থেকে জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা আবার নিশ্চিত হলেন যে জিজেরো নামের যে বিশাল গহ্বরটি রয়েছে, যাকে দেখলে আজ মনে হয় রুক্ষ, পাথুরে, নিঃসঙ্গ এক হতাশা, সেখানে ছিল বিশাল এক হ্রদ! জ্যোর্তিবজ্ঞানীরা এই অনুমান আগেই করেছিলেন। কিন্তু রোভারের পাঠানো সাম্প্রতিক ছবিগুলো থেকে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। জিজেরোর কালো পাথর বিশ্লেষণ করে তারা আরও নিশ্চিত হয়েছেন যে, একসময় ওখানে নিয়মিত বন্যা হত! একসময় মানে, ৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে! মানে, ৩৭০ কোটি বছর আগে। মঙ্গলের আবহাওয়ায় তখন ঘনত্ব ছিল। মানে জলধারণের ক্ষমতা ছিল। মঙ্গলের তখন সুদিন, পৃথিবীর মত নদীবাহিত এক গ্রহ! বিজ্ঞানীরা বলছেন, নদীগুলো ছিল গোল, গোল, অনেকটা সিলিওং ফ্যানের আকৃতির। সেই নদীগুলোর জল উপচে পড়ে প্রায়ই হত বন্যা।
জার্নাল সায়েন্সে গবেষণা সংক্রান্ত প্রকাশিত একটি লেখা থেকে জানা গিয়েছে, শুধু বন্যা নয়, নদীগুলোর জন্য আকস্মিক বন্যাও ওখানে হত। ওখানে মানে এখন যা মহা বিশালাকৃতির জিজেরো গহ্বরে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, সেই বন্যায় জলের তোড় এমন ছিল যে, তার ধাক্কা গহ্বরের নীচে, প্রায় ১০ মাইল ভেতর থেকে এক একটা বিশাল পাথরকে তুলে হ্রদের উপত্যকায় (লেকবেড) ফেলত! নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পারসেভারেন্স রোভার এখন জিজেরো গহ্ববরের ওপর সেই পাথরেরই ছবি তুলে পাঠাচ্ছে। এমনকী, রিমোট মাইক্রো ইমেজারে রোভার পাথরের ওপরের স্তরের যে ছবি পাঠিয়েছে তাতে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হচ্ছেন যে, ওটা ছিল নদী উপত্যকা।
নিকোলাস ম্যানগোল্ড। পারসেভারেন্স রোভারে চেপে মঙ্গলে যাওয়া এক জ্যোর্তিবিজ্ঞানী। তার কাছে এই আবিষ্কার মঙ্গল নিয়ে গবেষণার খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার বক্তব্য, “মঙ্গলে জলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। জিজেরো গহ্বরের ভেতর থাকা হ্রদটা যে অনেকটা গভীর ছিল সেটাও আমরা জেনেছি। এই আবিষ্কার আগামীদিনে মঙ্গল নিয়ে গবেষণায় আরও অনেকটা এগিয়ে দেবে বিজ্ঞানীদের। একটা গ্রহের হাইড্রোলজি (জলবিদ্যা) জানা গেলে গ্রহ সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানা যাবে। কীভাবে মঙ্গল সম্পূর্ণ শুকনো হয়ে গেল সেই অনুসন্ধান করতেও আমাদের আগামীদিনে সুবিধে হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 2 =