মঙ্গলগ্রহে অভিযান চালাচ্ছে নাসার পাঠানো রোভার পারসিভের্যান্স । লালগ্রহের পৃষ্ঠদেশে নাসার মার্স রোভার পারসিভের্যান্স অনেক ধরনের শব্দ রেকর্ড করেছে। আর সেই বিভিন্ন শব্দ ভালভাবে খতিয়ে দেখার পর বৈজ্ঞানিকরা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন যে, মঙ্গলগ্রহে শব্দ তরঙ্গ ভিন্ন ভাবে কাজ করে। তাঁদের গবেষণায় উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। বৈজ্ঞানিকরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলগ্রহে শব্দ অনেক ধীরগতিতে প্রবাহিত হয়। এখানে শব্দ তরঙ্গের কথাই বলা হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পৃথিবীতে যে গতিতে শব্দ তরঙ্গ ধাবিত হয়, তার থেকে কম গতিতে মঙ্গলের বুকে প্রবাহিত হয় শব্দ তরঙ্গ। মূলত বায়ুমণ্ডলের ঘনত্বের উপর শব্দ তরঙ্গ প্রবাহের গতি নির্ভর করে। মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলীয় স্তর পৃথিবীর তুলনায় অনেক পাতলা। আর সেই কারণেই পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলগ্রহে শব্দ তরঙ্গ প্রবাহের গতি কম।
আমাদের পৃথিবীতে শব্দ তরঙ্গ প্রতি সেকেন্ডে ৩৪৩ মিটার গতিতে প্রবাহিত হয়। তবে গভীর জলে শব্দ তরঙ্গ প্রবাহের এই গতি প্রতি সেকেন্ডে ১৪৮০ মিটার হয়ে যায়। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় এমনটা লক্ষ্য করা গিয়েছে। অর্থাৎ শব্দ তরঙ্গ অধিক ঘনত্বের জায়গায় গেলে তা প্রবাহের গতি বাড়ে। আর তুলনায় কম ঘনত্বের স্থানে থাকলে শব্দ তরঙ্গ প্রবাহের গতি কমে যায়। মঙ্গলগ্রহে এমন একটি বায়ুমণ্ডল রয়েছে যা পৃথিবীর তুলনায় ১০০ গুণ পাতলা। মূলত কার্বন-ডাই-অক্সাইড দিয়েই তৈরি হয়েছে এই আস্তরণ।
মঙ্গলগ্রহের বিভিন্ন অংশ থেকে রেকর্ড করা শব্দ প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, লালগ্রহের মধ্যে এক এক জায়গায় শব্দ তরঙ্গের প্রবাহ এক এক রকমের। কোথাও সেকেন্ডে ২৪০ মিটার শব্দতরঙ্গের গতি। কোথাও বা প্রতি সেকেন্ডে ২৫০ মিটার। নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠদেশে শব্দ তরঙ্গ প্রবাহের ক্ষেত্রে গতির হেরফের এর আগে লক্ষ্য করা যায়নি। সম্প্রতি নেচার জার্নালে নিজেদের আবিষ্কার ও পর্যবেক্ষণে কথা প্রকাশ করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নিম্ন বায়ুমণ্ডলীয় চাপের কারণে মঙ্গলগ্রহ বরাবরই খুব শান্ত প্রকৃতির। তবে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয় লালগ্রহে। বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলায় বায়ুমণ্ডলের চাপ।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জুলাই মাসে লঞ্চ করা হয়েছিল মার্স রোভার পারসিভের্যান্স এবং মার্স হেলিকপ্টার ইনজেনুইটি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মঙ্গলগ্রহে অবতরণ করেছিল পারসিভের্যান্স ও ইনজেনুইটি। তারপর থেকে লালগ্রহের পৃষ্ঠদেশে অতীতের প্রাণের সন্ধান করছে নাসার পাঠানো এই দুই যন্ত্রাংশ। বহু বছর আগে মঙ্গলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কিনা, সেই সন্ধানেই নেমেছে মার্স রোভার ও কপ্টার।