এক্সপিডিশন বেস, মানে যেখান থেকে শুরু হয় অভিযান তার কিছুটা বাঁ দিকে হাঁটলে দেখা যাছে একটি স্বয়ংক্রিয় রোভার বা উপগ্রহ চলে যাচ্ছে! ডানদিকে কিছু দূর গেলে দেখা যাবে সারি সারি সৌর প্যানেল রাখা আছে। প্রাকৃতিক দৃশ্যটা কীরকম? চারদিকে পাহাড়, বড় টিলা, পুরো পাথুরে, রুক্ষ জমি। সবচেয়ে তাৎপর্যের, জমির রং পুরো লাল! ভীষণ মিল মঙ্গল গ্রহের সঙ্গে!
আদৌ নয়। অঞ্চলটি ইসজারেয়েলের দক্ষিণে, একটি মরুভূমি। সেখানেই বিশাল এক গহ্বর! ঠিক মঙ্গলের জিজেরো গহ্বরের মত! এই গহ্বরটির নাম ‘রেমন গহ্বর’। রেমন গহ্বরের কাছে চলে গিয়েছে ৬ জনের একটি দল! পাঁচজন পুরুষ আর এক মহিলা। গবেষণার অভিযানে নেমে পড়েছেন তারা। গিয়েছেন একটি রোভার বা মহাকাশযানের মত দেখতে একটি হেলিকপ্টারে চেপে! তার ভেতরে ছয় গবেষক থাকছেন, খাচ্ছেন, শুচ্ছেন! আর বাইরে যখন বেরচ্ছেন তাদের গায়ে স্পেস সুট! মহাকাশচারীদের স্যাটেলাইট থেকে অন্য গ্রহে পা রাখার সময় গায়ে যা পরা থাকে। সুটে লাগানো রয়েছে ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, নিশ্বাস নেওয়ার অক্সিজেন।
অস্ট্রিয়া আর ইজরায়েলের যৌথ উদ্যোগে এই ৬ জনের দল আসলে মঙ্গলেই যাবেন। কিন্তু তার আগে রেমন গহ্বরে তারা এসেছেন মঙ্গল অভিযানের ট্রায়াল দিতে! তাদের এই অভিযানের নাম ‘আমাদি-২০’। ২০২০-তে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য পিছিয়ে গিয়ে এই বছর হচ্ছে অভিযানটি। ৬ সদস্যের একজন গ্রোমার। ১৩০০ বর্গ ফুটের বিশাল এই স্যাটেলাইট সম্পর্কে তার বক্তব্য, “আমাদের এই স্যাটেলাইটটি এই মুর্হুতে পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক এবং ‘ডেলিকেট’ রিসার্চ স্টেশন।”
এখানে জিওলজি, বায়োলজি, মেডিসিন নিয়ে অন্তত ২০ রকমের পরীক্ষা করবে ৬ সদস্যের গবেষকদের দলটি। দলের অন্যতম সদস্য অ্যালন টেনজারের বক্তব্যই জানিয়ে দিচ্ছে অভিযানের সারমর্ম। “এখানে আমরা পরীক্ষানিরীক্ষায় ব্যর্থ হলে সেটা আমাদের বড় প্রাপ্তি হবে! কারণ, এই ব্যর্থতাগুলো থেকে আমরা শিক্ষা নেব। মঙ্গলে গিয়ে যাতে ব্যর্থতা কম আসে আমাদের।”
মঙ্গল থেকে নাসার পারসেভারেন্স রোভার আর ইনজেনুইনিটি হেলিকপ্টারের পাঠানো ছবি আর তথ্যে বিশ্ব জুড়ে জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা এখন উৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। তারই প্রতিফলনে, বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে মঙ্গল অভিযানের।
কিন্তু, মঙ্গলে এখনও মানুষ পা রাখেনি। মানুষের পা রাখার চেষ্টাও গত এক দশকে হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। অস্ট্রিয়া আর ইজরায়েলের যৌথ উদ্যোগে ৬ সদস্যের কেউ যদি মঙ্গলে পা রাখতে পারেন তাহলে সেটা হবে নতুন এক ইতিহাস!