মন ও হৃদয় সুস্থ রাখে – মানসিক এক ‘ফ্লো’

মন ও হৃদয় সুস্থ রাখে – মানসিক এক ‘ফ্লো’

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ জুলাই, ২০২৪
মন ও হৃদয় সুস্থ রাখে

ঘর সাজাতে গিয়ে আপনার কি কখনও স্থান সময় জ্ঞান লুপ্ত হয়েছে? বা কোনো যন্ত্র বাজাতে গিয়ে এত মনোযোগী হয়ে গেছেন যে উদ্বেগগুলো আপনাকে একটু আগে ঘিরে রেখেছিল, সেসব লুপ্ত হয়ে গেছে? তাহলে আপনি সম্ভবত ‘ফ্লো’ অনুভব করেছেন। ফ্লো হল মনোবিজ্ঞানে ব্যবহৃত একটা শব্দ যা গভীর মনোযোগ বোঝাতে ব্যবহার করা হয়, যখন কাজ করার সময় কেউ সেই কাজে পুরো ডুবে যান। একঘেয়েমি এবং চাপের মধ্যে কোনো এক বিন্দুতে এই ফ্লো বিদ্যমান। যখন আমাদের মধ্যে এই ফ্লো আসে, তখন আমরা সময়ের কথা ভুলে অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখে খুব কার্যকরীভাবে কাজ সম্পন্ন করতে থাকি। ফ্লো প্রায়ই ইতিবাচক এক অভিজ্ঞতা, তাহলে এটা কি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো? এ নিয়ে বহুকাল আগে ইতালীয় শিক্ষাবিদ মারিয়া মন্টেসরি “মনোযোগের মেরুকরণ” প্রস্তাব করেছিলেন, যা উচ্চতর মনের ফোকাস বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছিল। ফ্লোয়ের আধুনিক বৈজ্ঞানিক সংস্করণ ১৯৭০-এর দশকে মনোবিজ্ঞানী মিহালি সিক্সজেন্টমিহালি তৈরি করেছিলেন। বর্তমান গবেষণা বলছে, আমরা কত ঘন ঘন কোন পরিস্থিতিতে ফ্লো অনুভব করি তা মানুষভেদে ভিন্ন, এবং আংশিকভাবে জিনগত। কিছু মানুষের অন্যদের তুলনায় ফ্লো অনুভব করার প্রবণতা বেশি, যা আংশিকভাবে জেনেটিক প্রবণতার স্বতন্ত্রতার জন্য হয়, কিন্তু তার সাথে আমাদের পরিবেশগত কারণও থাকে।
নিউরোটিসিজম হল তৃতীয় কারণ যা ফ্লো নিয়ন্ত্রণ করে। নিউরোটিসিজম একধরনের ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য যা আমাদের আবেগগত দিক দিয়ে ভারসাম্যহীন এবং সহজেই বিরক্ত হওয়ার প্রবণতা ব্যাখ্যা করে। উচ্চ নিউরোটিসিজমযুক্ত লোকেরা স্ট্রেস এবং মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার পাশাপাশি কার্ডিওভাসকুলার এবং অন্যান্য সোমাটিক রোগের জন্য বেশি সংবেদনশীল। উদ্বেগ, চাপ এবং মানসিক অস্থিরতা ফ্লো অনুভব করার অভিজ্ঞতা থেকে বিরত রাখে। নিউরোটিসিজম আমাদের ফ্লো অনুভব করার ক্ষমতা ও আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য উভয়কেই প্রভাবিত করবে। গবেষণায় দেখা গেছে যাদের ফ্লো অনুভব করার প্রবণতা বেশি তাদের মধ্যে বিষণ্নতা, উদ্বেগ, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, স্ট্রেস-সম্পর্কিত ব্যাধি এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কম ছিল। নিউরোসিটিজম ও পারিবারিক কারণ বিবেচনা করলে, দেখা যায় ফ্লোয়ের অভিজ্ঞতা শুধুমাত্র বিষণ্নতা আর উদ্বেগের সাথে যুক্ত। ফ্রাঙ্কফুর্টের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর এমপিরিকাল অ্যাসথেটিক্স (এমপিআইইএ) এর সিনিয়র গবেষক লরা ওয়েসেলডিজকের সহ-তত্ত্বাবধানে ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়ার এম্মা গাস্টনের এই গবেষণা ট্রানস্লেশানল সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত হয়েছে।