মরিশাসের ডোডোর ইতিকথা

মরিশাসের ডোডোর ইতিকথা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ আগষ্ট, ২০২৪
মরিশাসের ডোডো

ডোডো পাখি। বৈজ্ঞানিক নাম রাফাস কুকুল্যাটাস। মানুষের কারণে এই পাখি বিলুপ্ত হয়েছিল। আর মানুষই বিলুপ্ত প্রজাতি হিসেবে প্রথম এই পাখির কথা নথিভুক্ত করেছিল। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি (OUMNH) অনুসারে ডাচ নাবিকরা ১৫৯৮ সালে যখন মরিশাসে এসে পৌঁছায়, তখন অঞ্চলটি ডোডো পাখিতে ভরা ছিল। পাখিগুলো উড়তে পারত না। লম্বায় এরা প্রায় ৩ ফুট, ওজন প্রায় ২০ কেজি। তার পর থেকেই মানুষ যথেচ্ছ শিকার করত এদের। মরিশাস দ্বীপে যখন ডাচরা উপনিবেশ স্থাপন করে, তখন তারা বন কেটে ফেলে, ডোডো পাকিদের বাসা ধ্বংস করে, পাখি শিকারও করে। সঙ্গে করে শুয়োর এবং ইঁদুর নিয়ে আসে। ডোডো পাখির সমস্ত ডিম এই প্রাণীগুলো খেতে শুরু করে। ফলে ৭০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। OUMNH অনুসারে, সর্বশেষ পাখিটিকে দেখা গিয়েছিল ১৬৬২ সালে।
কয়েক শতাব্দী ধরে প্রচলিত কথা ডোডো পাখি বোকা। মরিশাসে তাদের কোন শিকারী না থাকায় তারা আকারে বড়ো হয়ে ওঠে এবং ওড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই দ্বীপে আসা নতুন মানুষ বা ডাচ শিকারীদের দেখেও তারা ভয় পায়নি, পালিয়ে যায়নি। পাখিগুলো এগিয়ে এসেছিল। ফলে তাদের ধরা ছিল সবচেয়ে সোজা। ‘বোকামি’র খেসারত তাদের দিতে হয়, মানুষেরা খাবার হিসেবে তাদের ভক্ষণ করে। এক দল পাখি ধরা পড়লে, আর এক দল পালিয়ে না গিয়ে তাদের সাহায্য করতে ছুটে আসে। ফলে ধরা পড়ে। শেষে নাবিকরা পরে খাওয়ার জন্য ডোডো পাখিদের বন্দি করা শুরু করে।
ডোডো পাখি সম্পর্কে কথিত এই ধারণা খতিয়ে দেখতে বিজ্ঞানীরা ডোডো এবং সলিটায়ার নামের একই প্রজাতির পাখিদের নিয়ে অধ্যয়ন চালান। তারা দেখেন বিলুপ্ত এই পাখিগুলো শক্তিশালী এবং দ্রুতগতি সম্পন্ন ছিল। অধ্যয়নটি তারা জুওলজিক্যাল জার্নাল অফ লিনিয়ান সোসাইটিতে প্রকাশ করেন। তারা সেখানে বলেন যে ডোডো সত্যিই বোকা বা ধীরগতির প্রাণী ছিল না। তারা দ্রুতগতিসম্পন্ন পাখি ছিল যারা বনকে ভালোবাসত।