মরুভূমিতে মরুদ্যান খুঁজে পাওয়া? মরীচিকার মত! তবু তো পাওয়া যায়। কীভাবে সৃষ্টি হয় সেই মরুদ্যানগুলোর? এরিক লাংড্রেন, ডেনমার্কের এক ফিল্ড ইকোলজিস্ট সাত বছর আগে, ২০১৪-য় সেই রহস্য কিছুটা হলেও উদ্ঘাটন করলেন। জানালেন, মরুদ্যান সৃষ্টি হওয়ার নেপথ্যের নায়ক মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ানো বন্য গাধা আর ঘোড়া! আরিজোনার সোনোরান মরুভূমিতে অনেকমাস থাকার সময় তার চোখে পড়েছিল ঘটনাটা
দু’টো বন্য গাধাকে এরিক দেখেছিলেন মুখ গুঁজে বালি খুঁড়তে! খুঁড়েই চলেছে তারা! একটা জায়গায় নয়, একাধিক জায়গায় গাধাদের মুখ দিয়ে বালি খুঁড়তে দেখেছিলেন এরিক। পরে এরিক জানিয়েছেন, খোঁড়া মানে, একটু নয়, প্রায় সাড়ে আটশ মিটার পর্যন্ত গভীর পর্ত খুঁড়ে ফেলে গাধাগুলো! কারণ তারপরই মরুভূমিতে জলের সন্ধান পাওয়া যায়! গর্তটা থেকে যায়। বন্য গাধারা সেই গর্ত তৈরি করে জল খেয়ে যাওয়ার পর সেই জল অন্য প্রাণীরাও পরে খায়। একাধিক প্রাণীর বারবার সেই গর্তে মুখ দেওয়ার ফলে গর্তটা বড় হতে হতে একদিন ছোট্ট একটা পুকুরে রূপান্তরিত হয়ে যায়। তারপর দেখা যায় ওখান থেকে সৃষ্টি হচ্ছে, উদ্ভিদের! ছোট ছোট ক্যাকটাসের! শেষপর্যন্ত মানুষ খুঁজে পায় মরুভূমিতে মরুদ্যান! আফ্রিকার সাভানা মরুভূমিতেও, এরিক বলছেন, ঠিক এভাবেই মরুভূমিতে গভীর গর্ত খুঁড়ে জল খেয়ে মরুদ্যানের সৃষ্টি করে হাতিরা।
এরিক বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন, “প্রায় ৫০০ বছর বয়স আফ্রিকার বন্য গাধার। কেউ তাদের পছন্দ করে না। এরা মরুভূমির সবচেয়ে ঘৃণ্য প্রাণী। এরা গাছপালা নষ্ট করে দেয়। স্থানীয় পশুপাখিরা এদের জ্বালায় স্বাধীনভাবে ঘোরাঘুরি করতে পারে না। কিন্তু এরা যদি বালি না খুঁড়ে জল খেত তাহলে কি মরুদ্যান সৃষ্টি হত? জানি না।”
তবে বন্য গাধাদের যে পর্যবেক্ষণ আর সহজাত দক্ষতায় এরিক মুগ্ধ হয়েছিলেন তারপর গাধাদের আর গাধা বলা যাবে কি না সন্দেহ! এরিক জানিয়েছেন, বন্য গাধাগুলো কিন্তু সর্বত্র বালি খোঁড়ে না। এক একটা নির্দিষ্ট জায়গায় তাদের বালি খুঁড়তে দেখা যায়। গাধা হলে কী হবে! তারা ঠিক বুঝতে পারে মরুভূমির কোন অঞ্চলে বালি খুঁড়লে জল পাওয়া যাবে! গোটা মরুভূমির ইকো-সিস্টেমের ভারসাম্য বজায় রয়েছে এই গাধাগুলোর মুখে!