মশার উপদ্রব কমাতে কীটনাশকের সাথে সাবান জলের ব্যবহার

মশার উপদ্রব কমাতে কীটনাশকের সাথে সাবান জলের ব্যবহার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২২ নভেম্বর, ২০২৩

ম্যালেরিয়া, একটি ধ্বংসাত্মক মশাবাহিত রোগ যার প্রাদুর্ভাব সাব-সাহারান আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকায় দেখা যায়। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অনুসারে, ২০২০ সালে ম্যালেরিয়া বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ২৪১ মিলিয়ন মানুষকে আক্রান্ত করেছে যার ফলে ৬২৭,০০০ জন মারা গেছে। ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের এই দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সমাধান কী সাবান ব্যবহারের মতোই সহজ হতে পারে? এল পাসোতে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সদ্য প্রকাশিত একটি গবেষণায় এই কৌতূহলজনক সম্ভাবনা উপস্থাপন করা হয়েছিল। দলটি দেখেছে যে কিছু শ্রেণীর কীটনাশকগুলোতে অল্প পরিমাণে তরল সাবান যোগ করলে তাদের ক্ষমতা দশগুণেরও বেশি বেড়ে যায়। জীববিজ্ঞানী কলিন্স কামডেমর মতে এই আবিষ্কারটি বেশ আশাব্যঞ্জক একটি খবর কারণ ম্যালেরিয়া বহনকারী মশা বর্তমান কীটনাশকের প্রতি ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখাতে শুরু করেছে।
গবেষক ক্যারোলিন ফুয়েট বলেছেন, পরীক্ষাগারে বেশ কিছু পরীক্ষা এবং ফিল্ড ট্রায়াল উভয় থেকেই জানা গেছে, যে সব মশার প্রজাতি বিদ্যমান কীটনাশকগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করেছে তাদের জন্য একটি বিশেষ শ্রেণীর কীটনাশক যার নাম নিওনিকোটিনয়েডস, একটি প্রতিশ্রুতিশীল বিকল্প হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে নিওনিকোটিনয়েড, বেশ কিছু মশার প্রজাতিকে নিঃশেষ করতে পারে না যতক্ষণ না তাদের ক্ষমতা বাড়ানো হয়। এই ক্ষেত্রে, ফুয়েট বলেন, সাবান হল সেই বুস্টিং পদার্থ। কিছু কীটনাশকের প্রতি মশার সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) বর্তমান প্রোটোকল কীটনাশকের সঙ্গে একটি বীজ তেল-ভিত্তিক পণ্য যোগ করার পরামর্শ দেয়। কামডেম লক্ষ্য করেছেন যৌগটি মিশ্রিত হওয়ার ফলে মশার মৃত্যুহার বেড়েছে। কামডেম দেখেন যে সেই যৌগটি রান্নাঘরের সাবানের মতোই একই শ্রেণীর পদার্থের অন্তর্গত। তাই তারা রান্নাঘরে ব্যবহৃত সাবান দিয়ে পরীক্ষা করেন। তিনি এবং তার দল সাব-সাহারান আফ্রিকায় প্রচলিত তিনটি স্বল্পমূল্যের, তিসি-তেল-ভিত্তিক সাবান নির্বাচন করেন এবং সেগুলো চারটি ভিন্ন নিওনিকোটিনয়েডে যুক্ত করেন- অ্যাসিটামিপ্রিড, ক্লোথিয়ানিডিন, ইমিডাক্লোপ্রিড এবং থায়ামেথক্সাম। গবেষকরা দেখেন যে শুধুমাত্র কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে এই সাবানের সঙ্গে সংমিশ্রণের ফলে কীটনাশকগুলোর শক্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তিনটি ব্র্যান্ডের সাবানই মৃত্যুহার ৩০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে দলটি কীটনাশকের শক্তি বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে ঠিক কতটা সাবানের প্রয়োজন তা নির্ধারণ করতে অতিরিক্ত পরীক্ষা চালানোর আশা করছে।